Advertisement
১৫ জানুয়ারি ২০২৫
Malda Mango Trees

গাছের পরিচর্যায় মালদহে বেড়েছে আমের উৎপাদন

উদ্যান পালন দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৮৯০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত জেলায় আম চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার হেক্টর। ১৯৩১ খেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ছিল ২১ হাজার হেক্টর।

আম গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক।

আম গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৬
Share: Save:

‘অফ ইয়ার’ এবং ‘অন ইয়ার’, ইংরেজি শব্দ দু’টির সঙ্গে পরিচিত আমের জেলা মালদহবাসী। জীবনশক্তির কারণে এক বছর আমের উৎপাদন বেশি হলে, পরের বছরেই উৎপাদন কমে যায় দ্বিগুণ। তাই, বেশি উৎপাদনের মরসুমকে ‘অন ইয়ার’, কম উৎপাদনের মরসুমকে ‘অফ ইয়ার’ হিসাবে ধরা হয়। তবে এখন আম চাষে আমূল বদল এসেছে মালদহে। এখন প্রতি বছরেই গড়ে আড়াই থেকে তিন লক্ষ মেট্রিক টন করে আম উৎপাদন হচ্ছে জেলায়। যদিও নব্বই দশকে আম উৎপাদনে জেলার ছবি ছিল ভিন্ন। তখন লোকসানের মুখে পড়তে হত জেলার আম চাষিদের। আমের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মুখে হাসি ফুটেছে তাঁদের।

উদ্যান পালন দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৮৯০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত জেলায় আম চাষের জমির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার হেক্টর। ১৯৩১ খেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ছিল ২১ হাজার হেক্টর। তার পর থেকে জেলায় বাড়তে থাকে আমের চাষের এলাকা। এখন জেলায় ৩১ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আম চাষ হয়। ইংরেজবাজার, মানিকচক, রতুয়া ১ ও ২ ব্লকেই ৬৫ শতাংশ আম চাষের জমি রয়েছে। জেলায় প্রায় ২৫০ প্রজাতির আম চাষ হয়। ফজলি, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর ছাড়াও গুটি, আলতাপেটি, আম্রপলি, গোপালভোগ, রাখালভোগ, আর্সিনা, মধুচুসকি, মোহনভোগ, অমৃতাভোগ এবং ছোটবউ, বউভুলানি, দিলখুস, ডান্টাফুর্তি, মেহবুবা, ফুলেশ্বরী, বৃন্দাবনী, ঝুমকা প্রজাতির আম চাষ হয় জেলায়। তার মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ফজলি, চার হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষণভোগ, সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আর্সিনা এবং ল্যাংরাও প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়। এ ছাড়া এক হাজার হেক্টর জমিতে হিমসাগর ও গোপালভোগ আমের চাষ হয়।

শুধু আম চাষের এলাকায় নয়, বাড়ছে উৎপাদনও। ১৯৯০ সালে জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ৬২ হাজার মেট্রিক টন। ১৯৯১ সালে ২ লক্ষ ৫০ হাজার। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ১৯৯২ সালে হয়েছিল মাত্র ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। আর ১৯৯৩ সালে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে, ২০০৫ সাল থেকে জেলায় প্রতি বছর গড়ে আড়াই থেকে তিন লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন করে আম উৎপাদন হচ্ছে। গত বছরও তিন লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। সে বছর আমের ফলন জেলায় কম হয়েছিল বলে দাবি উদ্যান পালন দফতরের কর্তাদের।

কী ভাবে উৎপাদন বাড়ছে জেলায়? উদ্যান পালন দফতরের দাবি, জেলায় প্রায় ৬৫ শতাংশ জমিতে সেচের ব্যবস্থা রয়েছে। আম বিশেষজ্ঞ দীপক নায়েক বলেন, “গাছ থেকে আম পেড়ে নেওয়ার পরে গাছের গোড়ায় মাটি খনন করে নেওয়া হয়। তার পর সেখানে জল দেওয়া হয়। ফলে সারা বছরই জল পাচ্ছে গাছগুলি। এ ছাড়া ডিসেম্বর মাসের শেষে আম গাছের পাতায় জল স্প্রে করা হচ্ছে। আর তাতেই সাফল্য মিলছে।”

উদ্যান পালন দফতরের উপ-অধিকর্তা সামন্ত লায়েকবলেন, “প্রাকৃতিক উপায়ে আমচাষ হয় বলে জেলার চাষিদের ধারণা ছিল। এখন চাষিদের সেই ধারণায় বদল এসেছে। চাষিরাসময় মতো সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে গাছের পরিচর্চায় জোর দিয়েছেন।”

এ বছর আবহাওয়া আমের পক্ষে অনুকুল থাকায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই গাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছিল। তবে শেষের দিকে জাঁকিয়ে শীত পড়তে শুরু করায় মুকুল নষ্টের আশঙ্কায় কৃষকেরা উদ্যান পালন দফতরের পরামর্শমতো গাছে জল, কীটনাশক স্প্রে করার কাজ শুরু করেছেন বলে দাবি দফতরের আধিকারিকদের। তাঁদের দাবি, কৃষকদের সচেতনতায় জেলায় এখন প্রতি বছরই আমের ‘অন ইয়ার’।

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Mango Tree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy