Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ক্লান্ত, রক্তাক্ত পায়ের ‘দু’দণ্ড শান্তি’...

হাঁটা শুরু হয়েছে বিহার থেকে। গন্তব্য দিনহাটা।

 অসহায়: বিহার থেকে বক্সীরহাটে বাড়ি ফিরছিলেন ১৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক। সঙ্গে ১০ জন শিশুও। কিন্তু যে গাড়িটিতে তাঁরা আসছিলেন, সেটি ময়নাগুড়ি ইন্দিরা মোড়ে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় কমিউনিটি কিচেনের কয়েকজন যুবক অসহায় ওই শ্রমিকদের শুকনো খাবার, জল, ফলের রস এবং দুধ খেতে দেন। পরে একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেটিতে ওই শ্রমিকদের তুলে দেন যুবকেরা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

অসহায়: বিহার থেকে বক্সীরহাটে বাড়ি ফিরছিলেন ১৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক। সঙ্গে ১০ জন শিশুও। কিন্তু যে গাড়িটিতে তাঁরা আসছিলেন, সেটি ময়নাগুড়ি ইন্দিরা মোড়ে তাঁদের নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় কমিউনিটি কিচেনের কয়েকজন যুবক অসহায় ওই শ্রমিকদের শুকনো খাবার, জল, ফলের রস এবং দুধ খেতে দেন। পরে একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেটিতে ওই শ্রমিকদের তুলে দেন যুবকেরা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

অর্জুন ভট্টাচার্য
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

কতটা পথ পার হলে পাগুলো থামবে, তখনও জানেন না ওঁরা। শিশু কোলেই পথ হাঁটছিলেন মা। আঁচল আঁকড়ে ধরে হাটছিল আরও দুই মেয়ে। এই নিয়ে টানা পাঁচদিন।

হাঁটা শুরু হয়েছে বিহার থেকে। গন্তব্য দিনহাটা। বিহারের ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন শুপেন রায়। সঙ্গে স্ত্রী ও তিন সন্তান। ‘‘রাত নেমে এলে রাস্তার ধারেই ঘুমিয়ে পড়তাম আমরা।’’ বলছিল বছর পনেরোর কিশোরী মাম্পি। ভূপেন রায় বলছিলেন, ‘‘একটি ট্রাক পেয়েছিলাম। ৩০০ টাকা ভাড়া নিয়ে নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিয়েছিলেন। সঙ্গে টাকাও বেশি ছিল না। মালিক আমাদের বকেয়া টাকা না দিয়েই তাড়িয়ে দিয়েছেন। ঠিক করলাম হেঁটেই বাড়ি ফিরব।’’ দুই পা ফুলে গিয়েছে। রক্ত ঝরছে। সেই রক্ত আবার কখন শুকিয়ে গিয়েছে। জুতো ছিঁড়ে গিয়েছে মেয়েটার। খালি পায়ে শুক্রবার রাতে ময়নাগুড়ির ইন্দিরা মোড়ে পৌঁছেছে পরিবারটি।

তখনই মিলল ক্ষণিকের স্বস্তি।

স্থানীয় যুবক বাবন দাস, বুবাই দাসেরা তখন কমিউনিটি কিচেনে শনিবারের আনাজ কাটছিলেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাঁরা, রাতে এখানেই থাকার ব্যবস্থা করা হবে। বুবাই জানান, গরম জল করে দেওয়া হয় ওঁদের। ভাত আর ডিমের ঝোল খান। শনিবার সকালে চা ও জলখাবারের ব্যবস্থা হয়। কিশোরীকে নতুন জুতো, নগদ দু'শো টাকা ও শুকনো খাবারও দিউ কোচবিহারগামী একটি গাড়িতে তুলে দেন তাঁরা। ভূপেন রায় বলেন, "আর বাইরের রাজ্যে কাজে যাব না। এই ছেলেরা আমাদের কাছে ভগবান।"

শনিবার বিকেলে ময়নাগুড়ির ইন্দিরা মোড়ে আরও কয়েকজন শ্রমিক এসে পৌঁছেছেন, বিহার থেকে কিষাণগঞ্জ পর্যন্ত দু'দিন হেঁটে। অসমের ধুবরিতে বাড়ি ওঁদের। শিশু কোলে নিয়ে সায়েরা বেগম তো জানেনই না বাড়িতে পৌঁছতে পারবেন কিনা। শুধু বোঝেন, ‘‘অনেক হয়েছে। আর বাইরের রাজ্যে কাজে যাব না আমরা।’’ ময়নাগুড়ির ইন্দিরা মোড়ের বাবন, বুবাইরাই ওঁদের হাতে খাবার, জল তুলে দেন। ওঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন স্থানীয় যুবকেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy