অকূল পাথারে পড়েছেন হাসপাতালে শয্যাশায়ী রায়গঞ্জের বছর উনিশের এক তরুণী। প্রতীকী ছবি
সদ্যোজাতের দায়িত্ব নেননি প্রেমিক। সন্তানসম্ভবা প্রেমিকাকে হুমকিও দিয়ে রেখেছেন, তাঁর পরিচয় প্রকাশ্যে আনা যাবে না। প্রতিবেশীরাও জানিয়ে দিয়েছেন, শিশুর পিতৃপরিচয় না থাকলে ঢুকতে দেওয়া হবে না পাড়ায়। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন হাসপাতালে শয্যাশায়ী রায়গঞ্জের বছর উনিশের এক তরুণী। রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে ওই তরুণীর মা ও দিদির কাতর আবেদন, ‘‘উদ্ধার করুন আমাদের।’’
রায়গঞ্জ পুর এলাকায় এক প্রাপ্তবয়স্ক তরুণীর মা হওয়ার খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রতিবেশীদের স্পষ্ট দাবি, সন্তানের বাবা কে, তাঁর পরিচয় কী— তা জানালে তবেই পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে ওই তরুণীকে। চুটকি নুনিয়া নামে প্রতিবেশীর বক্তব্য, ‘‘আগে বলতে হবে ওই বাচ্চার বাবা কে? মেয়েটি যদি আমাদের সব খুলে বলে কী হয়েছে না-হয়েছে, আমারা ওঁকে সাহায্য করব। কিন্তু কিছু না জানিয়ে এ ভাবে পাড়ায় থাকা যাবে না। আমাদেরও সংসার রয়েছে। বাচ্চারা রয়েছে। ওঁদের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে।’’
লোকের বাড়িতে কাজ করেন ওই তরুণীর মা। ওই সামান্য রোজগারেই ঘরে ভাত চড়ে। অভাবের সংসার তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তরুণীর মা। তাঁর কথায়, ‘‘কী করব বুঝতে পারছি না। কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমাদের। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছি না। পাড়ার লোকের থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছি না।’’
প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ কেউ বাচ্চাটিকে মানুষ করতে চান বলেই জানালেন ওই তরুণীর দিদি। তাঁর কথায়, ‘‘এতদিন ও (প্রেমিক) দ দিদির সঙ্গে প্রেম করল, এখন দায়িত্বই নিতে চাইছে না। হুমকি দিচ্ছে যাতে আমরা নাম প্রকাশ্যে না আনি। আমরা সত্যিই বুঝতে পারছি না কী করব। আমারও তো সংসার রয়েছে। শ্বশুর বাড়িতে আমি মুখ দেখাব কী করে, তাই ভাবছি।’’
বেলি ঘোষ যাদব নামে এক প্রতিবেশী অবশ্য বলছেন, ‘‘যা ঘটেছে, লজ্জার বিষয়। আমরা ওঁর (তরুণী) পাশে থাকতেই পারি, কিন্তু ওঁকে বাবার নাম-পরিচয় জানাতে হবে। তা হলে আমরাও কিছু ব্যবস্থা নিতে পারি। ওই ছেলে নাকি হুমকি দিয়েছে শুনলাম। আমরাও দেখে নেব কী করতে পারে।’’
তরুণীর মা ও দিদির কথাতেই স্পষ্ট, একলা মা হতে আপত্তি নেই ওই তরুণীর। কিন্তু সামাজিক বাধা এড়াতে কোনও এক জনকে পাশে চাইছেন তাঁরা।
তরুণী প্রাপ্তবয়স্ক, তাই সন্তানের পিতৃপরিচয় তিনি প্রকাশ্যে আনবেন কি না, তা অবশ্যই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় বলে জানালেন সমাজকর্মী তথা শিক্ষক মৃণালকান্তি সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘ওই তরুণী যদি সন্তানের বাবার পরিচয় প্রকাশ্যে আনেন, তা হলে আমরা আমাদের তরফ থেকে কিছু পদক্ষেপ করব। যদি না আনতে চান, তা হলেও পাড়ায় ঢুকতে না দেওয়ার কোনও কারণ নেই প্রতিবেশীদের। যে হেতু অসহায় পরিবার, বাচ্চাটিকে মানুষ করার জন্য যা যা করণীয়, আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবস্থা করব।’’
তরুণীর অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন এলাকার পুর কাউন্সিলর অরুণচন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, ‘‘আগে ওই ছেলেটিকে খুঁজে বার করা জরুরি। আইন মেনেই তার পর সব রকম পদক্ষেপ করব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy