ঋষিগন্ধা, বেদীতব্য
বালুরঘাটের ‘ঋষিগন্ধা’ ও ‘বেদীতব্য’ সাংস্কৃতিক সংস্থা যৌথ ভাবে উদযাপন করল পঁচিশে বৈশাখ। করবী মুখোপাধ্যায়ের গানে অনুষ্ঠানের সূচনা। মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন মন্ত্রী শংকর চক্রবর্তী, ডিআইজি সত্যজিৎ মুখোপাধ্যায়, বিডিও শুভ্রজিৎ গুপ্ত, বিধায়ক সত্যেন রায়-সহ বিশিষ্ট জন। ছিল ছোটদের নৃত্যানুষ্ঠান। আবৃত্তি শোনান মণীশ দাস, নূপুর মিত্র ও বিভাস দাস। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন নিবেদিতা চক্রবর্তী ও তন্ময় লাহিড়ি। অনীক দত্ত ও মৌমিতা চক্রবর্তীর পরিচালনায় পরিবেশিত নৃত্যানুষ্ঠান ‘বসন্তের রবি’ উপভোগ্য হয়। প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন বালুরঘাটের ‘রবি নন্দন’। মন্মথ রায় নাট্যচর্চা কেন্দ্রে স্থানীয় শিল্পীদের সমবেত রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সুচেতনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবেশিত নৃত্যানুষ্ঠানটি হয় উপভোগ্য। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সংস্থার সদস্য ও স্থানীয় শিল্পীমহল। আবৃত্তি শোনা গেল সুবীর চৌধুরী, ময়ূরিকা রজক ও অভিষিক্তা চক্রবর্তীর কণ্ঠে। বালুরঘাট শিল্পী মঞ্চ ও জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের মিলিত প্রয়াসে পালিত হয় রবীন্দ্রজন্মোৎসব। উদ্বোধনী সঙ্গীতে গলা মেলান স্থানীয় শিল্পীরা। উর্মি সাহা, মৌমিতা ঘোষ, প্রান্তিক রায় ও বাদসা গুহ বিশ্বাস রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। একতা দে ও তুহিনশুভ্র মণ্ডলের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যোগ করে। পাশাপাশি ‘আনন্দধারা’র উদ্যোগে উদযাপিত হল কবি প্রণাম। ঘরোয়া ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করে ‘সৃজন নাট্যগোষ্ঠী। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কিত নানা তথ্য তুলে ধরেন রবীন্দ্রনাথ সাহা, অমল গোস্বামী, অনিমেষ বিশ্বাস প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঞ্চালিকা ভট্টাচার্য। গিটারে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বাজিয়ে শোনান শুভঙ্কর রায়। ছিল তথাগত রায়ের আবৃত্তি।
কচিকাঁচাদের ‘দাও না ছুটি’
রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস উপলক্ষে জলপাইগুড়ির ‘বাঁচবো বাঁচাবো’ সংস্থার কচিকাঁচাদের নিবেদন ছিল ডাকঘর নাটকের সংক্ষিপ্ত রূপ ‘দাও না ছুটি’। শিশু মনকে ছুটি দিতে না পারার এক এই প্রয়াসটিতে। রূপায়ণ ও পরিচালনা ইন্দিরা সেনগুপ্ত। অজয় রায় (ফকির), রিম্পা রায়, শিম্পা রায় ও মৌসুমী রায়(ছেলের দল), শ্রুতি দেব (দইওয়ালা), সুমিত দেবনাথ (ছাত্র) এবং সুধার ভূমিকায় প্রীতি রায় যথাযথ। সঙ্গীতে ছিলেন পাপড়ি দেব চক্রবর্তী। পাশাপাশি জলপাইগুড়ি নাট্যচর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে ছিল রবীন্দ্র সংস্কৃতির নানা আয়োজন। সমবেত ভাবে রবীন্দ্রনাথের লোকআঙ্গিকের গান গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করে ‘গান পাগল’এর দল। সংস্থার সম্পাদক গৌতম গুহরায়ের কথায় উঠে আসে অনন্ত আশ্বাস ও চেতনার অভিভাবক রবীন্দ্রনাথের কথা। পূজা, রবীন্দ্রবীথি, রবীন্দ্র পরিষদ সংস্থার নিবেদন ছিল সমবেত গান। আলেখ্য পরিবেশন করে ‘তিস্তা নন্দিনী’ পত্রিকা গোষ্ঠী। অপূর্ব পরিবেশনা আকাশ পাল চৌধুরীর পরিচালনায় সমবেত আবৃত্তি। ছিল ‘একলব্য’ নাট্যকোলাজ, ‘পার্বণী’ পত্রিকা গোষ্ঠী ও দর্পণ নাট্য সংস্থার সমবেত সঙ্গীত। উল্লেখযোগ্য ছিল নৃত্যম, সংকল্প, নৃত্যায়ন, মন্দাক্রান্তা ও রিদম সংস্থার রবীন্দ্রনৃত্য পরিবেশনা। এ দিকে ‘রবীন্দ্রবীথি’র আয়োজনে ছিল প্রভাতফেরি। সঙ্গীত পরিবেশন করেন মনীষিতা নন্দী, সৈকত ঘোষ, দীপঙ্কর রায়। নৃত্য পরিবেশন করেনি মধুশ্রী বাগচী, সোমানি রায় এবং সৌগত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘রিনা স্টাডিজ’এর ডান্স।
তিস্তা চরের ‘সবাই রাজা’
ও দিকে আনন্দ লহরী ও সেনপাড়া স্পোর্টিং এবং কালচারাল ক্লাবের সহযোগিতায় সকালে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রভাতী অনুষ্ঠানটি ছল শহরের থানার মোড়ে। প্রদীপ প্রজ্বলন করে সান্ধ্য অনুষ্ঠানের সূচনা করেন পবিত্র ভট্টাচার্য, গোপা ঘোষ পাল চৌধুরী। তিস্তা চরের কচিকাঁচাদের নিয়ে ‘আমরা সবাই রাজা’ শীর্ষক আলেখ্য পরিবেশিত হয়। গ্রন্থনা ও পরিচালনায় ছিলেন পাঞ্চালী রায়।1 সন্ধ্যা রায়ের কণ্ঠে ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটি সকলকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। মন ছুঁয়ে যায় রাজেশ সরকার ও মণিদীপা নন্দী বিশ্বাসের গানও। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে এবং আর্য নাট্য সমাজের ব্যবস্থাপনায় দু’দিন ধরে পালিত হল রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী। রবীন্দ্রনাথের মূর্তিতে মাল্যদান করেন জেলা শাসক পৃথা সরকার ও আর্য নাট্য সমাজের সম্পাদক অমর সিংহ। একশো পঞ্চান্নটি মোমবাতি জ্বালিয়ে জন্মজয়ন্তীর শূভ সূচনা করা হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন নিরুপম ভট্টাচার্য ও বারীন সাহা। নৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নেয় কল্পদীপ চারুকৃতি ও শতরূপা ইয়ুথ ডান্স গ্রুপ, নূপুর ডান্স অকাদেমি। ছিল প্রদোষ চৌধুরীর আবৃত্তি। সমবেত গানে অংশ নেয় ‘রেওয়াজ’ ও ‘বন্দিশ’ সংস্থার সদস্যরা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানস ভৌমিক।
জীবনে মননে রবিঠাকুর
সামসি কলেজ, সীতাদেবী বালিকা বিদ্যামন্দির, এগ্রিল হাইস্কুল এবং সামসির নবোদয় নাট্যসংস্থা একত্রে পালন করল পঁচিশে বৈশাখ। সকালে পথ-পরিক্রমা শেষে এগ্রিল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মাধ্যমে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ছিল বিতর্ক সভা। বিষয়—‘আজকের দিনে রবীন্দ্রনাথ অপ্রাসঙ্গিক’। পক্ষে বিপক্ষে অংশ নেন অধ্যাপক সুস্মিতা সোম, দীপঙ্কর রক্ষিত, অধ্যাপক মনোজকুমার ভোজ, শৈলেন পাণ্ডে, দেবব্রত সিংহ। ‘জীবনে মননে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক একটি আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। মুখ্য বক্তা ছিলেন ছোট গল্পকার দেবেশ কুমার চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথের গ্রাম-ভাবনা নিয়ে বলেন দেবব্রত সিংহ এবং কঙ্কণ দত্তের বক্তব্যে উঠে আসে রবীন্দ্রনাথ ও হিন্দি সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা সমাহর্তা অমল কান্তি রায়। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে সামসী কলেজ নাট্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্যোগে ছিল ‘বীরপুরুষ’ কবিতার আবৃত্তি সহযোগে নাট্যায়ন। সীতাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ‘ছুটি’ গল্পের নাট্যরূপ অভিনয় করে। রবীন্দ্রনাথের প্রেম ভাবনা বিষয়ক আলেখ্যতে অংশ নেয় এগ্রিল হাইস্কুল। সুপ্রীতি বিশ্বাস ও দিশা বিশ্বাসের পরিবেশিত নৃত্য স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীল। ‘নাচছি মোরা গাইছি মোরা’ পরিবেশন করে নবোদয় নাট্যসংঘ।
কথামালাতেই ভালবাসা
‘কথার পর কথা
সাজালে কথকতা—
দীর্ঘ কথামালা’।
কথামালাতেই ভালবাসা, কথামালাতেই অন্ধকারে হারানো সম্পর্ক। অন্ধকার থেকে উচ্চারিত হয়, ‘প্রতীক কোনও পরিচয় নয়, নানা রকম বেড়াল’। অথবা, ‘বুকের ভেতর অজস্র শীতকালের কান্না’। কখনও ঝলসে ওঠে অভিযোগ-অভিমান, ‘বরং আমার মৃত্যু কামনা করো/ওই দৃশ্যে, গভীরতায়, ঠোঁটে, এ ক্ষেত্রে অস্থিরতায়।’ বিশ্বাস-বিশ্বাসহীনতার ‘বিরতিকালীন’ সময় অন্তে ‘সালোকসংশ্লেষ সম্পর্কের গাছ’ জন্ম নেয়। জন্ম নেয় প্রত্যয়, ‘তুমি কবিতা ভালবাসো?/অতএব নির্ঘাৎ আমাকে ভালবাস’। সংযমী শব্দ এবং নৈঃশব্দিক বাক্যবিন্যাস তৈরি করে ছেঁড়া সম্পর্ক আর ভালবাসার অজস্র কোলাজ। বিপ্লব রায়ের কাব্যগ্রন্থ ‘সম্পর্ক, বিরতিকালীন’এ ধরা থাকে সেই সব কোলাজ।
চিকরাশি
‘চিকরাশি’ ৯ (সম্পাদনা : অমিত কুমার দে)এর মুখ্য আকর্ষণ তরাই-ডুয়ার্সের কয়েক জন সাহিত্য-সংস্কৃতি গবেষক। আলোচ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন ড.আনন্দগোপাল ঘোষ, উমেশ শর্মা, গৌরমোহন রায়, দিগ্বিজয় দে সরকার, ডঃ নৃপেন্দ্রনাথ পাল, প্রমোদ নাথ, বিমলেন্দু মজুমদার এবং রতন বিশ্বাস। সঙ্গে তাঁদের প্রকাশিত এবং সম্পাদিত গ্রন্থতালিকা। বাদ পড়েনি প্রবন্ধ এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত রচনার শিরোনাম। ‘স্মরণ’ পর্বে কাজি গোলাম কিবরিয়ার ওপর আলোকপাত নিঃসন্দেহে মূল্যবান সংযোজন। সংকলনে স্থান পেয়েছে উত্তরের ইতিহাস, গল্প-কবিতা এবং অতীত-ঐতিহ্য। রয়েছে ব্যক্তিগত গদ্য, ‘রবীন্দ্রনাথ ও উত্তরবঙ্গ’ গ্রন্থের পাঠ প্রতিক্রিয়া এবং ‘উত্তরের সাহিত্য সংগ্রহশালা’র গ্রন্থতালিকা। বিষয় নির্বাচনে ‘চিকরাশি’ ৯ অনায়াসে জলপাইগুড়ি-ধুপগুড়ির সীমারেখা অতিক্রম করে।
আবৃত্তির কোলাজ
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্র জন্মোৎসব। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় প্রভাতফেরির মধ্যে দিয়ে। নাচ, গান, আবৃত্তির কোলাজে সাজানো হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ডালি। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন উত্তরা মজুমদার, অঙ্কিতা ঠাকুর। স্বর্ণ এক্কা ও তনুশ্রী মুন্ডার নৃত্য দু’টি নজর কেড়েছে। শতাব্দী কর, প্রচেতা দাস ও অহনা রায়ের আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা এনে দেয়। বিভাগের প্রধান উৎপল মণ্ডল, রেজিস্ট্রার অনির্বাণ মিশ্র, অধ্যাপক সুবোধ কুমার যশ, মঞ্জুলা বেরা, কৌশিক জোয়ারদারের আলোচনায় উঠে এল রবীন্দ্রনাথের মানববাদ, বিশ্ব নাগরিকতা ও প্রকৃতি চেতনা।
অনুভব অক্ষরমালায়
শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা নয়। জলাপাইগুড়ির ‘তিস্তানন্দিনী’রা ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথকে অনুভব করলেন অক্ষরমালাতেও। অক্ষরে কেউ গাঁথলেন, ‘তাঁরই সঙ্গে যাপিত হোক আমার বাকি আয়ুষ্কালটুকু’, কেউ লিখলেন চিঠি, ‘একটি মানুষ আমার সেতারেতে তার বেঁধেছিল, সে তুমি, রবিঠাকুর’। কেউ জানালেন, ‘আমি একদিন, তুমি প্রতিদিন’, কেউ পাঠালেন পত্রসংবাদ, ‘রানু ও রবীন্দ্রনাথ’। কাজের অনুভবে তিনি, ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’, কারওবা ‘আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ’। অনুভব-অক্ষরমালার সমাপ্তি, ‘রবীন্দ্রনাথ’এ। সেই মালায় ‘তিস্তানন্দিনী’দের অজস্র অক্ষরগুচ্ছ যত্নে গেঁথে দিয়েছেন দেবযানী সেনগুপ্ত।
স্মরণ কালিম্পংয়ে
কালিম্পংয়ের মিলনী ক্লাবের উদ্যোগে কবির স্মৃতিবিজড়িত ‘গৌরীপুর লজ’এ আয়োজন করা হয়েছিল প্রভাতী অনুষ্ঠানের। রবীন্দ্রনাথের কালিম্পং বাসের দিনগুলির কথা স্মরণ করেন ডি সি রায়, অধ্যাপক মনীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ‘প্রতিদিনের রবীন্দ্রনাথ’ প্রসঙ্গে বলেন মনোজিৎ দাশগুপ্ত। সমবেত সঙ্গীতে মুখরিত হয়ে ওঠে গৌরীপুর লজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy