ফেরা: মহদিপুর সীমান্তে ওই আট কিশোরী ও যুবতী। নিজস্ব চিত্র
প্রিজন ভ্যানে চেপে আসতে হয়েছিল সরকারি হোমে। তাই প্রিজন ভ্যান দেখলেই দু’চোখ জলে ভিজে যেত বছর সাতের মেয়েটির। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল আটটা নাগাদ হোমের সামনে প্রিজন ভ্যানটি এসে দাঁড়াতেই সবার আগে দৌড়ে উঠেছিল সে। নিজে বসেই পাশের আসনটিতে হাত রেখেছিল ১১ বছরের দিদির জন্য। শুধু নিজের দিদিই নয়, আরও ছয় দিদিকে দ্রুত ভ্যানে ওঠানোর জন্য তৎপর হয়েছিল একরত্তি মেয়েটি।
মালদহ জেলা প্রশাসন ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির তৎপরতায় জেলার সরকারি হোমে থাকা আট কিশোরী ও যুবতীকে এ দিন পাঠানো হল বাংলাদেশে। ইংরেজবাজারের মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে ওই মেয়েদের এ দিন ঘরে ফেরানো হয়। ঘরে ফেরার আনন্দ থাকলেও বছরের পর বছর হোমের স্মৃতি মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অনেকেই।
মালদহের সরকারি হোমে প্রায় ৭৬ জন মহিলা আবাসিক রয়েছেন। তারমধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। এ দিন আটজন বাংলাদেশিকে ঘরে ফেরানো হল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন যাদের বাড়ি ফেরানো হল তাদের পরিবারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বাড়ির লোকেরাও তাদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছেন। তারপরেই দু’দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সেই মেয়েদের বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, বছর সাতের ওই মেয়েটি তিন বছর আগে বাবা-মা এবং দিদির সঙ্গে এ পারে এসেছিল। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে তারা ধরা পড়ে যায় বিএসএফের হাতে। বাবা-মাকে পাঠানো হয় জেলে। আর ওই দুই নাবালিকার ঠাঁই হয় মালদহের মকদমপুরের ওই সরকারি হোমে।
বছর পাঁচেক আগে বাংলাদেশ থেকে এ পারে পাচার করা হয়েছিল সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া এক মেয়েকে। আগাম বুঝতে পেরে বালুরঘাট পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিল সে। তারপর থেকে তারও ঠিকানা হয় মালদহের হোম। কেউ আবার এ পারে এসেছিল কাজের সন্ধানে। বাংলাদেশের দৌলতপুরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমি তিন বছরের মেয়েকে বাড়িতে রেখে কাজের সন্ধানে ভারতে ঢুকে পড়েছিলাম। ছ’বছর পর বাড়ি ফিরছি। মেয়ে আমাদের চিন্তে পারবে কিনা সেটাই শুধু ভাবছি।’’
বুধবার রাতে হোমের তরফে ওই কিশোরী-যুবতীদের বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ঘরে ফিরতে পারার আনন্দ মুহূর্তেও চোখ ভিজে যাচ্ছিল অনেকেরই। তাদের কথায়, ‘‘পাঁচ বছর হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে শুধুই বাড়ির কথা ভেবেছি। বাড়ি যে ফিরতে পারব তা কখনও ভাবতেই পারেনি। এখন ঘরে ফেরার সময় এতদিনের সঙ্গীদের ছেড়ে যেতেও খারাপ লাগছে।” চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান চৈতালী ঘোষ সরকার বলেন, “বাংলাদেশের বর্ডার গার্ডের হাতে আমরা মেয়েদের তুলে দিয়েছি। তারাই ওঁদের পরিবারের হাতে তুলে দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy