জলপাইগুড়ির দিনবাজারের হাল এমনই। অবস্থার বদল চান বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।
বয়েলখানা বাজারের পুর ব্যবসায়ীদের সমস্যা কম নয়। সেখানে বস্তি এবং বাজার যেন এক হয়ে গিয়েছে। এক সময় বাজারটি বেশ ছড়িয়ে ছিল। পাশে একটা বস্তি গড়ে ওঠায় বাজারের একটা বড় অংশ বস্তির মধ্যে ঢুকে যায় বলে অভিযোগ।
পুরসভার পক্ষ থেকে বাজারে শেডঘর নির্মাণ না করে অপরিকল্পিতভাবে সামনে একটা ভবন তৈরি করা হয়। ফলে, ভবনই প্রথম সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সব্জি এবং মাংসের দোকানিরা সেই ভবনের সামনে চলে যান। কারণ, ভবনের পরে ফাঁকা সামান্য অংশ ছিল। পরে মাছ ব্যবসায়ীদের জন্য একটি শেড তৈরি হয়। বয়েলখানা পৌরবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক খোকন সরকার বলেন, “ওই ভবন তৈরি করায় বাজারের মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাজার এবং বস্তি এক হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় উঠে এসেছেন। বাজারে নিকাশি ব্যবস্থাও বেহাল হয়ে পড়েছে। একটি হিমঘরও দীর্ঘদিন বন্ধ।”
বয়েলখানার মতো নিকাশির সমস্যার সমাধান হচ্ছে না দিনবাজারেও। অথচ অতীতে দিনবাজারে নিকাশির তেমন সমস্যা ছিল না বলে প্রবীণ বাসিন্দাদের দাবি। তাঁদের সূত্রেই দিনবাজারের পত্তনের ব্যাপারে কিছু কথা জানা গিয়েছে,। যেমন, রানি জগদীশ্বরী যখন বাজারের পত্তন করেন, সেই সময় এবং তারও পরে জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় ঘন জঙ্গল ছিল। রাত হলেই বুনো জন্তুরা বার হতো। ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই বেলাবেলি বেচাকেনা করে ফিরে যেতেন। সন্ধ্যার সময় কেউ পারতপক্ষে বাজার মুখো হতেন না। তা হলে চিতাবাঘ, বাঘের হানা কিংবা হাতির পালের মুকে পড়ার আশঙ্কা ছিল। দিনে বাজার বসত বলেই কালে কালে বাজারের নাম হয়ে যায় দিনবাজার।
এখনও সেই অবস্থা অবশ্য অনেকটাই পাল্টেছে। সন্ধ্যার পরেও কিছুটা সময় দিনবাজার খোলা থাকে। দিনবাজারের প্রথম অংশটা সন্ধ্যার পর খোলা থাকে। মাছবাজার থেকে পরের অংশটা সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যায়। তবে রাত বাড়লে আরেক সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
যেমন, রাত যত বাড়তে থাকে ততই অবৈধ মদের কারবারিরা বাজারের এই অংশের দখল নিয়ে নেন বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়িতে সবকটি বাজারেই নাকি এমন আসর বসে বলেও অভিযোগ। স্টেশন বাজার, মিউনিসিপ্যাল মার্কেট, বউবাজার সর্বত্র একই অভিযোগ। বউবাজারের ব্যবসায়ীরা কয়েকজন বলেন, “পুরসভার তৈরি অসমাপ্ত ভবনের ছাদের ওপর রোজই রাত নামলে মদের আসর বসে।”
জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রধানশিক্ষক ধীরাজ ঘোষ বলেন, “সন্ধের পর আমি দিনবাজার কেন, কোনও বাজারেই এ সব কারণে যেতে চাই না। দিনবাজারের মাছবাজার পর্যন্ত কোনদিন সন্ধের পরে যেতে পারি না। তার পরের অংশ তো দূরের কথা বিকেলের পর আমি কোনওদিন বিশেষ দরকারেও বাজারে যাই না। কারণ আমি জানি সেখানে অবৈধ কাজের কারবারিরা চলে আসে।”
১৩৪ বছরের পুরনো দিনবাজারে এখনও আছে ১৮৯৪ সালে ফণীন্দ্রদেবের তৈরী টিন শেড। পুরসভা অনেক উন্নয়ন করলেও সেই শেডের হাল পেরাতে চেষ্টা করেনি বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি নিয়ে গবেষকদের অন্যতম উমেশ শর্মা বলেন, “রাজ আমলের তৈরি হলেও এমন বাড়ি যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। পুরসভার উচিত পুরনো বাড়ি নতুন করে তৈরি করা।”
বস্তুত, জলপাইগুড়ির অনেক বাজারই পরিকল্পিত ভাবে গড়া জরুরি বলে বাসিন্দারা মনে করেন। জলপাইগুড়ির বাজারগুলোতে ঢোকা এবং বার হওয়া বাসিন্দাদের পক্ষে কষ্টকর। বিশেষ করে মহিলাদের পক্ষে বাজার করা যেন বেশি সমস্যার।
সমাজপাড়ার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা কাকলি সাহা বলেন, “অপরিসর রাস্তার কারণে বাজার করা সমস্যা হয়ে পড়ে। শেড না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজেরা পলিথিনের শিট ওপরে দেন। সেই শিটে বর্ষায় জল জমে হঠাত্ করে মাথায় পড়ে মাথা ভিজে যায়। সরু গলি পথে বাজার করতে গেলে ধাক্কা লাগে। বাজার ঠিকমত পরিস্কার না হওয়ার জন্য দুর্গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে।”
হাকিমপাড়ার বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষিকা মৌমিতা সেনগুপ্তের অভিজ্ঞতাও সুখপ্রদ নয়। তিনি বলেন, “বাজারের মধ্যে বর্ষা কেন সারা বছরই জল জমে থাকে। দিনবাজারে কিছু অবৈধ রেঁস্তোরা হয়েছে। সেই রেস্তোঁরাগুলো বাজারের জায়গা নিয়েছে বলে শুনেছি। মাছবাজারে কোনও অজ্ঞাত কারণে অধের্র্ক জায়গায় বিক্রেতারা বসেন। কেন জানি না ফাঁকা থাকতেও বাকি সমস্ত ব্যবসায়ী নীচে কাদার মধ্যে বসেন। সেখান থেকে মাছ কেনা সমস্যা হয়ে পড়ে।” বাসিন্দাদের এ হেন সমস্যা নিয়ে দিনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির বক্তব্য কি? কী ভাবছেন পুরসভা-প্রশাসনের কর্তারা?
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy