ইংরেজবাজারে চলছে মহাকালীর পুজো। —নিজস্ব চিত্র।
অমাবস্যা নয়, চতুর্দশীতে আরাধনা করা হয় মহাকালীর। একই নিয়মে ব্রিটিশ আমল থেকেই মালদহের ইংরেজবাজার শহরে ব্যায়াম সমিতির উদ্যোগে পূজিত হয়ে আসছে দশ মাথার কালী। আর এই পুজোকে ঘিরে চরম উৎসাহিত শহরবাসী। মঙ্গলবার দুপুরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে সূচনা হল মহাকালীর। এদিন দুপুরে যাবতীয় নিয়ম মেনে সম্পন্ন হয় পুজো। শহরের প্রবীণ নাগরিক তথা পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য নটরাজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য গঠন করা হয়েছিল এই ব্যায়াম সমিতির। এলাকার যুবকদের ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে মহাশক্তির আরাধনা করা শুরু হয়।’’
তিনি জানান, ইংরেজেরা পুজো বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তবে সফল হয়নি। সেই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে দশ মাথার কালীর আরাধনা করা হচ্ছে। এখন এই পুজো এলাকাবাসী তথা শহরবাসীর কাছেও আবেগের হয়ে উঠেছে। যার জন্য শোভাযাত্রা দেখার জন্য রাস্তার দুই ধারে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান।
ইংরেজবাজার শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গাবাগ এলাকায় রয়েছে ব্যায়াম সমিতি। ১৯৩০ সালে স্থাপিত হয় এই সমিতির। ওই বছরই মহাকালীর আরাধনা করা হয়। পুজো তথা সমিতির প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন বিপ্লবী কমলকৃষ্ণ চৌধুরী। এই সমিতিতে ব্যায়ামের পাশাপাশি লাঠি চালানো শেখানো হতো। যাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারে যুবকেরা। পুজো স্থাপিত হওয়ার বছর তিনেক শহরের পুড়াটুলি এলাকায় অস্থায়ী জায়গায় কালীপুজো ও ব্যায়াম চলত। পরে গঙ্গাবাগ এলাকায় নিজস্ব জায়গায় দেবীর আরাধনা শুরু হয়।
প্রথম থেকেই অমাবস্যার আগের দিন অর্থাৎ চতুর্দশীতে দিনের বেলায় পুজো করা হয়। এখনও দিনের বেলাতে একই তিথিতেই পুজো হয়। দশ দেবীর শক্তিকে একত্রিত করার জন্য এমন রূপের প্রতিমা করা হয়েছিল বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। প্রতিমার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এখানে শিব থাকে না। শুধু মাত্র মহাশক্তিরই আরাধনা করা হয়। প্রথম প্রতিমা তৈরি করেছিলেন রামকেষ্ট দাস এবং প্রথম পুরোহিত ছিলেন শরৎ পন্ডিত। বংশ পরম্পরায় তাঁদের পরিবার প্রতিমা এবং পুজো করে আসছেন। প্রায় ৪৬ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করতেন শিবু পাল। এ বার অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রতিমা তৈরি করতে পারেননি। এ বার প্রতিমা গড়েছেন অষ্টম দাস।
নিয়ম অনুযায়ী এদিন দুপুর দু’টো থেকে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। তন্ত্র মতে পুজো করা হয় দশমাথার কালীর। আগে দশ জন পুরোহিত মিলে পুজো করতেন। এখন একজন পুরোহিত দিয়েই চলে পুজো। এদিন শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। ইংরেজবাজারের ফুলবাড়ি মোড় থেকে রাজমোহল রোড হয়ে গঙ্গাবাগ এলাকায় দেবীর মন্দিরে নিয়ে আসা হয়।
শোভাযাত্রায় ভাংড়া থেকে আদিবাসী নৃত্যও হয়। এ ছাড়া ব্যায়াম সমিতির ছেলেরা শোভাযাত্রায় নানা যোগ ব্যায়াম দেখান। রাস্তার দুই ধারে শোভাযাত্রা দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান। সমিতির উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এ বারের পুজোর বাজেট ছয় লক্ষ টাকা। তিন দিন ধরে প্রতিমা মণ্ডপে রাখা হয়। তারপর মহানন্দা নদীতে শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে দেবীর বির্সজন করা হয়। এ ছাড়া তিন দিন ধরেই চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এলাকার দুঃস্থদের বস্ত্র বিলিও করা হয়। বিভিন্ন বাহারি রঙের আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy