নিহত প্রদীপ রায়। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথে ভরদুপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়ে গেলেন পঞ্চায়েতের এক নির্মাণ সহায়ক। সোমবার রায়গঞ্জের কমলাবাড়ি ২ পঞ্চায়েতের খাদিমপুর এলাকায় এই ঘটনায় নিহত হন প্রদীপ রায় (৩৫)। তাঁর বাড়ি ওই পঞ্চায়েতেরই ঝাড়বাড়ি এলাকায়। তিনি কমলাবাড়ি ১ নম্বর পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়কের পদে কর্মরত ছিলেন। নিহতের ভাই উত্তম রায় তাঁদের প্রতিবেশী একই পরিবারের চার জন-সহ আরও অজ্ঞাত পরিচয় পাঁচ-ছ’জন দুষ্কৃতীর নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার রাত ন’টা নাগাদ পুলিশ প্রতিবেশী চিত্ত রায় ও চিন্ময় রায় নামে দুই ভাইকে গ্রেফতার করেছে।
এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ প্রদীপবাবু নিজের স্কুটিতে চেপে বাড়ি থেকে অফিসে যাচ্ছিলেন। সেই সময় বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে খাদিমপুর এলাকায় দুষ্কৃতীরা দুটি মোটরবাইকে চেপে এসে চলন্ত অবস্থায় তাঁকে একটি গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি মোটরবাইক ফেলে রাস্তার পাশে ধানের জমিতে পালানোর চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীরা তাঁর পিছু ধাওয়া করে। পর পর কয়েক রাউন্ড গুলি করে মিশন মোড়ের দিকে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদের জেরে দুষ্কৃতীরা প্রদীপবাবুকে গুলি করে খুন করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে পেশাগত কাজে কোনও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাঁকে খুন হতে হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এখানেই প্রদীপবাবুর উপরে হামলা হয়। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
২০০৭ সালে প্রদীপবাবু ইটাহার ব্লকের সুরুণ ২ পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক পদে যোগ দেন। প্রায় সাত বছর সেখানে কাজ করার পর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি সেখান থেকে বদলি হয়ে কমলাবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়কের পদে যোগ দেন। সুরুণ-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য নিবারণ বর্মন বলেন, “প্রদীপবাবু এক জন সৎ এবং কর্তব্যপরায়ণ মানুষ ছিলেন। তিনি দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেননি। এ রকম একজন মানুষকে কেনও খুন হতে হল, তা পুলিশই তদন্ত করে বার করুক।” রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “কেবল জমি নিয়ে বিবাদ ছাড়া এই খুনের পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কমলাবাড়ি-১ পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান পরেশচন্দ্র সরকার জানান, প্রায় তিন মাস আগে প্রদীপবাবু তাঁর পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়কের পদে কাজে যোগ দিলেও এখনও পর্যন্ত তিনি কোনও নির্মাণ বা উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত হননি। তাঁর কথায়, “লোকসভা ভোটের জন্য পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজ আটকে রয়েছে। তাই পেশাগত কাজে কোনও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় প্রদীপবাবুকে খুন হতে হয়েছে, এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর সদস্যরা নিরাপত্তার দাবিতে আজ, মঙ্গলবার জেলাশাসক স্মিতা পাণ্ডেকে স্মারকলিপি জমা দেবেন। প্রদীপবাবুর ও তাঁর স্ত্রী শিল্পীদেবীর দু’বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তাঁর বাবা প্রমথনাথবাবু পেশায় চাষি। মা রেণুকাদেবী গৃহবধূ। তিন ভাইয়ের মধ্যে প্রদীপবাবুই বড়। তাঁর মেজ ভাই কমলেশবাবুর গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। ছোট ভাই উত্তমবাবু পাঞ্জাবে বিএসএফে চাকরি করেন। উত্তমবাবু জানান, প্রদীপবাবুর সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা ছিল না। এলাকার বাসিন্দারা জমি সংক্রান্ত কোনও রকম সমস্যায় পড়লে প্রদীপবাবু তাঁদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তাঁর অভিযোগ, “কয়েক মাস আগে এলাকায় সরকারি জমি দখল করার প্রতিবাদ করেন দাদা। সে কারণে এমন হয়ে থাকতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy