Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
দুর্ঘটনার চার দিন পরে রুজু মামলা

বাজেয়াপ্ত হল গাড়ি, মিলল চালকের হদিসও

শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি মোড়ে গাড়ির ধাক্কায় ২ ভাইয়ের গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনার চার দিনের মাথায় অবশেষে মামলা দায়ের করল পুলিশ। শুক্রবার মামলা দায়ের হয়। এতদিন গাড়ির কোনও হদিস পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির ওসি মহেশ সিংহ না পেলেও এদিন তা বাজেয়াপ্ত করেন। ঘটনাচক্রে, গাড়ির চালকেরও হদিস এদিনই পেয়েছে পুলিশ। শিলিগুড়ি আদালতে কুমার থাপা নামে ওই চালক আত্মসমর্পণ করেছেন।

সেবক রোডে দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত বাজেয়াপ্ত গাড়ি।

সেবক রোডে দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত বাজেয়াপ্ত গাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি মোড়ে গাড়ির ধাক্কায় ২ ভাইয়ের গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনার চার দিনের মাথায় অবশেষে মামলা দায়ের করল পুলিশ। শুক্রবার মামলা দায়ের হয়। এতদিন গাড়ির কোনও হদিস পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির ওসি মহেশ সিংহ না পেলেও এদিন তা বাজেয়াপ্ত করেন। ঘটনাচক্রে, গাড়ির চালকেরও হদিস এদিনই পেয়েছে পুলিশ। শিলিগুড়ি আদালতে কুমার থাপা নামে ওই চালক আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে তিনি জামিন পান। কিন্তু, ওই রাতে কুমার গাড়ি চালাচ্ছিলেন কি না সেই ব্যাপারেই নানা প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। কারণ, ঘটনাস্থলে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার কার্যকরী সভাপতি নান্টু পাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মহেন্দ্র সিঙ্ঘল তত্‌পরতা দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ।

ইতিমধ্যে যে গাড়িটি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেটি মহেন্দ্রবাবুর স্ত্রীর নামে রয়েছে। এলাকায় মহেন্দ্রবাবু নান্টুবাবুর একান্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দুর্ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে নান্টুবাবু ও মহেন্দ্রবাবু দুজনে একসঙ্গে শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে দল সূত্রের খবর। সেখান থেকে দুজনে ফেরেন। এর কিছুক্ষণ পরে গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। অথচ নান্টুবাবু ও মহেন্দ্রবাবু দুজনেই দাবি করেছেন, তাঁরা গাড়িতে ছিলেন না। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই এলাকাটি সিসিটিভির আওকায় থাকার কথা। তাই সিসিটিবির ফুটেজ খকতিয়ে দেখে কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তা নিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসীদের অনেকেই। পরিবহণ বিভাগের কয়েকজন অফিসার জানান, ওই চালকই গাড়ি চালাচ্ছিলেন কি না নিশ্চিত করতে ‘গ্যারাজ রেজিস্টার বাজেয়াপ্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে গাড়ির মালিক চালককে চালানোর জন্য যে লিখিত অনুমতি দিয়েছেন সেটাও পুলিশকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। উপরন্তু, গাড়িটি গ্যারাজ তেকে কখন বেরিয়েছে ও কখন ঢুকেছে তা রেজিস্টারে লেখা হয়েছিল কি না সেই ব্যাপারেও স্পষ্ট তথ্য পুলিশকে আদালতে দিতে হবে বলে এক পরিবহণ অফিসার জানিয়েছেন।

এমনকী, ঘটনার পরে তিন দিন কেন পানিটাঙ্কি ফাঁড়ি নিষ্ক্রিয় ছিল, কেনই বা মহেন্দ্রবাবু দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গাড়িটি থানায় নথিভুক্ত করিয়ে চালককে আত্মসমর্পণ করাননি সেই প্রশ্নেও তদন্ত চেয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তৃণমূল নেতা নান্টুবাবু শাসক দলের জেলার অন্যতম নেতা হয়েও কেন একান্ত ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ির চালককে আত্মসমর্পণ করাতে উদ্যোগী হননি তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও প্রশ্ন রয়েছে।

এই নানা প্রশ্ন, বিতর্কের কথা পৌঁছেছে পুলিশ ও শাসক দলের কাছেও। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “নির্দিষ্ট ধারায় মামলা হওয়ার পরে একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গাড়ি চালকও আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে যে রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়েছে তার কাছে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেখানে কী ছবি ধরা পড়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফুটেজ মিললে কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাও জানা যাবে।” আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারক পুলিশের কাছে ঘটনার ‘রিপোর্ট’ চেয়ে পাঠিয়েছেন। আগামী ৫ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন সে বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “দুর্ঘটনার কথা শুনেছি। দলীয় পর্যায়ে সব কিছুর ব্যাপারে খোঁজখবর নেব।”

ব্যবসায়ী মহেন্দ্র সিঙ্গলের দাবি, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সার্কিটে হাউসে গিয়েছিলাম। ফেরার পরে নান্টুবাবু স্কুটারে যান। আমার গাড়ি কিছু জিনিস দিতে মেয়ের কাছে মিলনপল্লিতে যায়। ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটে।” নান্টুবাবু এ দিনও দাবি করেছেন, তিনি গাড়িতে ছিলেন না। নান্টুবাবুর কথায়, “সার্কিট হাউস থেকে ফিরে আসার পরে নিজের স্কুটার নিয়ে বের হয়েছিলাম। তখনই দুর্ঘটনার খবর পাই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মহিন্দরের গাড়িটি একটি বাইককে ধাক্কা মেরেছে। দুই জখম ভাইকে নার্সিংহোমে ভর্তি করাই। পুলিশকেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করি।” তাঁর দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে গাড়িতে থাকা কিংবা গাড়ি চালানোর অভিযোগ রটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি বলেন, “তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।” কিন্তু, দুর্ঘটনার পরে চালককে আত্মসমর্পণ করাতে এত সময় লাগল কেন সেই ব্যাপারে মহেন্দ্রবাবুর যুক্তি, কুমার বাড়িতে চলে গিয়েছিল।

—নিজস্ব চিত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri car cease accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy