মাথাভাঙার বাইশগুড়িতে প্রেমঘটিত সমস্যার মীমাংসা করতে নিজের বাড়িতে সালিশি সভা বসিয়ে এক যুবককে ছ’ লক্ষ টাকা জরিমানা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক প্রধানের বিরুদ্ধে। ২৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। ইতিমধ্যেই মাথাভাঙা থানার পুলিশের কাছে বিষয়টি জানিয়ে আইনি সাহায্য চেয়েছেন যুবকের পরিবার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের নাম বিপুল বর্মন। অভিযুক্ত তৃণমূলের প্রধানের নাম উদয় সরকার। বিপুলবাবুর দাবি, গত ২৭ অগস্ট তৃণমূল প্রধানের বাড়িতে ওই সালিশি সভা বসে। ৪ সেপ্টেম্বর কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব এবং মাথাভাঙা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গণেশ বিশ্বাসের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান তিনি। প্রধান অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রধানের দাবি, দুই পরিবার বিষয়টি মিটিয়ে দেওয়ার আবেদন নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে ওই যুবকের বাবা নিজে থেকেই মেয়ে পক্ষকে ছয় লক্ষ টাকা দিতে চান। তিনি কোনও জরিমানা করেননি বলে প্রধানের দাবি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মাথাভাঙার বিধায়ক বনমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে সালিশি সভায় কোনও প্রধান জরিমানা করতে পারেন না। আবার অনেক সময় মিথ্যে অভিযোগ দেওয়া হয়। এখানে ঠিক কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইশগুড়ির যুবক বিপুলের সঙ্গে আঠারকোঠা কালপানির এক তরুণীর প্রেম হয়। বিপুলবাবু ওই তরুণীকে বিয়ে করতেও চাইলেও, ওই তরুণীর পরিবার বিয়ের প্রস্তাব মানেননি। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাজারহাটের এক যুবকের সঙ্গে তরুণীর বিয়ে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৪ অগস্ট বিপুলবাবুও বিয়ে করেন। এর পরেই গত ২৬ অগস্ট ওই তরুণী তাঁর মায়ের সঙ্গে বিপুলবাবুর বাড়িতে এসে ওঠেন। বিপুলবাবুর সঙ্গে সংসার করতে চান।
ওই তরুণীর দাবি, “বিপুলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। আমার বিয়ের পরেও বিপুল সম্পর্ক রাখত। আমাকে নিয়ে নানা আত্মীয়ের বাড়িতেও ঘুরেছে। আমাকে বিপুল জানায়, স্বামীকে ডিভোর্স দিলে বিয়ে করবে। বিপুলের কথাতেই স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, অথচ তাঁকে কিছু না জানিয়ে বিপুল চুপিসাড়ে বিয়ে করে ফেলেছেন। ওই তরুণী জানান, সে জন্যই তিনি বিপুলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিপুলবাবু তরুণীর অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমি ওই তরুণীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর পরিবার রাজি ছিল না। তাঁকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। তার পর থেকে আমাদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক ছিল না। পরে আমিও বিয়ে করি। এখন হঠাৎ করে ওই স্বামীর ঘর ছেড়ে আমার এখানে উঠেছেন তরুণী।”
এই অবস্থায়, গত ২৭ অগস্ট বিষয়টি নিয়ে ওই তরুণীর পরিবার পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের দ্বারস্থ হন। রাত ১০ টার সময় দুই পক্ষের উপস্থিতিতে সেখানে সালিশি সভা বসে। ওই সভায় তাঁর বাবা পুষ্পজিৎ বর্মন, আত্মীয় জয়কান্ত বর্মন এবং তিনি উপস্থিত ছিলেন বলে বিপুলবাবু জানান। ওই সভায় প্রধান একতরফা ভাবে বিপুল বর্মনের ছ’ লক্ষ টাকা জরিমানা করে। ২৫ দিনের মধ্যে প্রধানের হাতে টাকা জমা করার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। টাকা না পাওয়া পর্যন্ত ওই তরুণী বিপুলবাবুর বাড়িতেই থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সালিশি সভায়। বিপুলের দাবি, “জোর করে সাদা কাগজে আমার বাবার এবং ভগ্নিপতির সই নেওয়া হয়। কাউকে কিছু জানালে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। আমরা সাধারণ মানুষ।এত টাকা কী করে দেব?”
প্রধান উদয়বাবু অবশ্য ওই অভিযোগ সরাসরি ঊড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই তরুণী বিপুলবাবুর বাড়িতে ওঠার পরে তাঁর বাবা এবং ভাই আমার কাছে আসেন। তাঁরাই বলেন, যা টাকা লাগে আমরা দেব। আপনি বিষয়টি মিটিয়ে দিন। তাঁরা মেয়ে পক্ষকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে চান। আমি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিই আপনারা আইনের পথে যেতে পারেন। না হলে নিজেরা বসে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে পারেন। এ সব ব্যাপারে আমি কিছু করতে পারব না। এখন আমার বিরুদ্ধে জরিমানার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy