সংশোধনাগারের মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পড়াতে এ বছর কেউ এগিয়ে আসেননি। তাই উদ্যোগী হলেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরাই। রবিবার জলপাইগুড়ি জেলা সংশোধনাগারে মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পরীক্ষা সমূহের আহ্বায়কের উদ্যোগে এই পড়ানোর ব্যবস্থার সূচনা হয়। এ বার থেকে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা এসে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এক মাস ধরে নিয়মিত পড়াবেন।
সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দিদের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফর্ম পূরণের সময় কিছু সমস্যা দেখা দেয়। জেলে বন্দিদের পড়ানোর জন্য কেউ যোগাযোগ করেনি। সেই সব সমস্যা নিয়ে জেলের জেলার রাজীব রঞ্জনকে ছোটাছুটি করতে হয়। তখনই জেলের বন্দিদের পড়ানোর বিষয়টি তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের জলপাইগুড়ি জেলার মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক সুব্রত রায়কে জানান। জলপাইগুড়ি সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক রাজীব রঞ্জনের অনুরোধে সুব্রত বাবু জেলার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্দিদের পড়ানোর বিষয়টি সুনিশ্চিত করেন।
সুব্রতবাবু বলেন, “আপাতত ঠিক হয়েছে জেলার মোট ৪২ জন শিক্ষক এক মাস ধরে সংশোধনাগারের সাজাপ্রাপ্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পড়াবেন। সোমবার থেকে প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে ওঁরা বন্দিদের পড়াবেন। মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক অধিকর্তাকে জানিয়েই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
জলপাইগুড়ি সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, যে এ বার মাধ্যমিকে মোট ১৫ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি পরীক্ষা দিতে বসবে। তাদের মধ্যে একজন মহিলা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। অন্য বার দু-এক জন ব্যক্তি বন্দিদের পড়াতে উদ্যোগী হলেও এ বার কেউ জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক রাজীব রঞ্জন বলেন, “এ বছর যাঁরা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁরা সকলেই পড়াশোনা করার সময় সমস্যায় পড়ছিলেন। তাই সুব্রতবাবুকে সমস্যার কথা জানাই।” এ বার যাঁরা মাধ্যমিকে বসতে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে ১১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি। দু’জন ৮ বছর, একজন ১০ বছর এবং ১ জন ৫ বছর সাজাপ্রাপ্ত বন্দি আছেন।
১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত মহিলা বন্দি মালতি রাজভর বলেন, “জেল থেকে বার হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছি। জেলের মধ্যে পড়ানোর কেউ না থাকায় সমস্যা হচ্ছিল। এখন ভাল করে পড়াশোনা করতে পারবো।” প্রসঙ্গত, মালতিদেবী একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জেলের মধ্যে বিউটিশিয়ানের কোর্সও করছেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি লছু ইন্দোয়ার পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন। একটি খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৪ সাল থেকে তিনি এই সংশোধনারগারে আছেন। জেলে থাকতে থাকতেই শিক্ষিত বন্দি ও কারারক্ষীদের কাছ থেকে আরও পড়াশোনা শিখে এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তিনি। লছু বলেন, “এক সময় তো জেল থেকে ছাড়া পাব। তখন যাতে কিছু করে খেতে পারি, সে জন্য পরীক্ষা দিচ্ছি।” মালতি ও লছু দু’জনেই জানালেন তাঁদের মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার ইচ্ছে আছে। তাঁরা জানালেন, একই ইচ্ছে বাকি সমস্ত পরীক্ষার্থী বন্দিদেরই আছে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন। প্রধান অতিথি ছিলেন আলিপুরদুয়ার ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক কনকবল্লভ গোস্বামী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy