নকশালবাড়ির ঘটনার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের মিছিল। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সীমা বলের (এসএসবি) অভিযানের সময় গুলিতে নিহত যুবকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন দার্জিলিং জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। বুধবার দলের জেলা সভাপতি রথীন বসুর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল নকশালবাড়ির শান্তিনগরের বাড়িটিতে যান। শিবকুমার রায় নামের ওই যুবক তৃণমূলের চালক সংগঠনের সদস্যও ছিলেন। গত মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। কিন্তু ওই পরিবারটির বাড়িতে না যাওয়ায় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভও দেখা দিয়েছিল।
এ দিনই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে এদিন নকশালবাড়িতে ২৪ ঘন্টা ব্যবসা বন্ধও করেছেন। সকাল ১০টা নাগাদ স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড থেকে কয়েকশো ব্যবসায়ীকে নিয়ে নিরাপত্তা, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে মিছিলও করেছেন ব্যবসায়ীরা। পরে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের কাছে স্বারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী নকশালবাড়িতে গিয়েও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা না বলাও একাংশ ব্যবসায়ীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
এই অবস্থায় আজ, বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর এলাকা গিয়ে ব্যবসায়ী এবং নিহতের বাড়িতে যাওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “আমার সোমবার বহু আগাম কর্মসূচি ছিল। তাও সময় বার করে এক দফায় এলাকায় গিয়েছিলাম। বাসিন্দা, জখমদের সঙ্গে কথা বলেছি। আবার আসব বলেও ছিলাম। বৃহস্পতিবার আবার যাচ্ছি ব্যবসায়ী, নিহতের পরিবার সবার সঙ্গেও কথা বলব। বিরোধীরা অযথা এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন।’’
মন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। জেলা বিজেপি সভাপতি রথীনবাবু বলেন, “মন্ত্রী প্রথমে নিহতের বাড়িতে না গিয়ে যে এলাকার গরু পাচারের অভিযোগ উঠেছে, সেখানে গিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও কথা বলেননি। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ থাকাটা স্বাভাবিক।” তিনি জানান, আমরা নিহতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারটির সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রাদ্ধশান্তির জন্য সাহায্য করা হচ্ছে। নিহতের ছোট ছোট দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে। ঋণের গাড়িও রয়েছে। আমরা এসএসবি-র সঙ্গে কথা বলছি। দলীয়ভাবে উচ্চমহলে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পরিবারটিকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে।
নিহতের মাসতুতো দাদা মনোজ রায় বলেন, “পিকনিক থেকে ফিরে এলাকায় গিয়ে নিরীহ ভাই মারা যায়। এদিন বিজেপি’র নেতারা এসেছিলেন, সাহায্যে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আর কেউ আসেননি। আর ভাইয়ের বন্ধুরা ও সংগঠনের লোকেরা কিছু সাহায্য করেছে।”
গত সোমবার নকশালবাড়ির তোতারামে গরু পাচারের খবর পেয়ে অভিযান চালায় এসএসবি। একাংশ বাসিন্দাদের সঙ্গে এসএসবি-র সংঘর্ষও হয়। এসএসবি-র দাবি, জওয়ানদের উপর হামলা হয়। মহিলাদের টানা হেঁচড়া করা ছাড়াও অস্ত্র কাড়ার চেষ্টা হয়। দেশি বন্দুক থেকে গুলিও ছোঁড়া হয়। সেই সময় জওয়ানেরা শূন্যে ৮ রাউন্ড গুলি চালায়। এলাকাবাসীর অবশ্য পাল্টা দাবি, জওয়ানেরা বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে জমির হাল, দুধের ব্যবসার গরু, মোষ নিয়ে যাচ্ছিল। প্রতিরোধ করায় গুলি চালায় জওয়ানেরা। পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে ওই গাড়ির চালক মারা যান।
রাতেই তোতারামের ঘটনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে নকশালবাড়ি বাজারে। একদল দুষ্কৃতী বাজারের ব্যবসায়ীদের হুমকি দেওয়া ছাড়াও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর করা হয়। এর পরে থানার হামলা ছাড়াও বাস, ট্রাক-সহ একাধিক সরকারি গাড়িও ভাঙা হয়। আতঙ্কে গোটা নকশালবাড়ি বন্ধের চেহারা নেয়। নকশালবাড়ি ব্যবসায়ী সমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিল সাহা বলেন, “আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। সীমান্তকে ঘিরে গোলমাল হলেই শহরে ব্যবসায়ীদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে। তাই আমরা বন্ধ করে পুলিশ-প্রশাসনকে দুষ্কৃতীদের ধরতে বলেছি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী আজ, বৃহস্পতিবার আসবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা তাঁকেও সব বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy