কালিম্পঙের কর্মিসভায় দার্জিলিং কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়ার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
একবার পাহাড়ে অশান্তির কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “ভয় পাবেন না। ম্যায় হুঁ না।” আর একবার, একতরফা ভাবে দার্জিলিং কেন্দ্রের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করে পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ প্রসঙ্গে বললেন, “আমাকে অনেকে খারাপ কথা বলেছে। সে বলুক। কিন্তু আমি তো দিদি, তাই কারও সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে চাই না।” তবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বা তাদের কোনও নেতার নাম অবশ্য বুধবার পাহাড় ও ডুয়ার্সের দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের দু’টি কর্মিসভায় একবারও উল্লেখ করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, লোকসভা ভোটে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে মোর্চার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন না সম্পর্কের আরও অবনতি হোক। ভোটের পরে জিটিএ-র মাধ্যমেই উন্নয়নের কাজ করতে হবে। মোর্চা যদি ফের বড় আন্দোলনে যায়, তা হলে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। সেই জন্যই তিনি নিজের ‘দিদি’ ভাবমূর্তিই তুলে ধরেছেন। যাতে পাহাড়ের মানুষেরও তাঁর প্রতি বিশ্বাস বাড়ে। পাশাপাশি, নাম না করেও কড়া সমালোচনা করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে ফের ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হতে তাঁর বাঁধবে না।
কালিম্পং মহকুমার গরুবাথানের সভায় পাহাড়ের তৃণমল কর্মী সমর্থকরাও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কাছে বার্তা দিতেই মুখ্যমন্ত্রী তাই মোর্চার নাম না করেই কটাক্ষ করেন, “একটি দল মুখে বলছে যে, তারা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ভোট লড়ছে। কিন্তু একজনও গোর্খা ভাই বা বোনকে প্রার্থী করার জন্য তারা খুঁজে পেল না। দিল্লি থেকে প্রার্থী আনতে হল।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, গোর্খাল্যান্ডের নামে প্রশাসন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের জন্য জিটিএ-কে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সে টাকায় রাজনীতি হচ্ছে বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “ওরা উন্নয়ন না করে কিছু দিন পরপর দিল্লি যায়।” এ দিন গুরুঙ্গের নাম না করেই মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাহাড়ে প্রার্থী দেওয়ার আগে তিন বার মোর্চাকে ফোন করা হয়। প্রতিবারই মোর্চা নেতারা বলেন, পার্টিতে আলোচনা করে জানাবেন। মমতার বক্তব্য, “যেন কত বড় পার্টি ওদের! তবে আমি কিন্তু কারও চাকর নই।” মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এরপরেই ভাইচুংকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভাইচুংও পাহাড়েরই ছেলে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “সিকিমের পাহাড়ও পাহাড়।”
এ দিন বিকেলে বীরপাড়ার সারনা এস টি ক্লাব ময়দানে কর্মিসভাতেও মমতা মোর্চার নাম না করে বলেন, “পাহাড়ের ভাই-বোনেরা ভাল। কিন্তু কয়েক জন নেতা রয়েছেন, যাঁদের কংগ্রেস বা বিজেপি বারবার দিল্লি ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে কানে ফুসমন্তর দেয়।” এই সভায় মমতা অবশ্য সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের নাম করে তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর কথায়, “তৃণমূল একা লড়াই করছে। একা লড়বে। বাঘের বাচ্চার মতো লড়ব। ওর আজ জোট বেঁধেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস সরকার আড়াই বছরে বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা করেছে। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ৬৭ হাজার কোটি টাকা ধার করেছিল কেন্দ্রের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ আমাদের সে টাকা শোধ দিতে হচ্ছে। জোর করে আমাদের না জানিয়ে ফি বছর কেন্দ্র আমাদের থেকে টাকা কেটে নিচ্ছে। ওই টাকা না নিলে আমরা ২০ লক্ষ ছেলে মেয়ের চাকরি করে দিতে পারতাম।”
মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার ছিলেন ফাগু চা বাগানের ডাইরেক্টর্স বাংলোতে। এ দিন সেই বাংলো থেকে পাহাড়ি ঢালু রাস্তায় প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে সভায় আসেন তিনি। পরে ওই রাস্তাটি নিয়েও জিটিএ-কে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “গরুবাথান এত ভাল, কিন্তু এখানকার রাস্তা ততটাই খারাপ। জিটিএ কোনও কাজ করেনি।” ফাগু বাগান থেকে সভাস্থলে আসার পথে চা শ্রমিকেরা মুখ্যমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। সভায় ঢোকার মুখে শেরপা সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের চিরাচরিত পোশাক পরে থাকতে দেখে মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। সভার শেষে বীরপাড়া যাওয়ার পথেও মিনগ্লাস চা বাগানের শ্রমিকদের পাতা তুলতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন তিনি। চা শ্রমিক পুষ্পা বরাইক, চালনি মুন্ডাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
জিটিএ কাজ করছে না এই অভিযোগ মোর্চা নেতারা উড়িয়ে দেন। মোর্চার সহ সম্পাদক জ্যোতি কুমার রাই বলেন, “জিটিএ নিজের কাজ করছে। পাহাড়ে আন্দোলনের সময়ে কাজ বন্ধ ছিল। দাবি পূরণের জন্য বন্ধ করতে হয়েছে। ভোটের বিধিনিষেধ শেষ হলে ফের কাজ শুরু হবে।”
অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতারা বুধবার ফাগু বাগানের বাংলোয় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকে জানিয়েছেন, আগামী ৮ এপ্রিল বাঁকুড়ার খাতড়াতে জনসভা করে মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ দিন পরিষদ ছাড়া লিম্বু, শেরপাদের মতো ডুয়ার্সের জনজাতিগুলির প্রতিনিধিরা এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক ভাবে দেখা করেন। পৃথক উন্নয়ন বোর্ডের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy