হাতে হাত। সুকনার এক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার। ছবি:বিশ্বরূপ বসাক।
ভোটের দিন পাহাড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা!
বৃহস্পতিবার রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রথম দিনে এমনই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী রইল দার্জিলিং। যেখানে প্রায় চার দশক ধরে পোলিং বুথের ভিতরে-বাইরে এক দলের লোকের দাপট দেখতেই অভ্যস্ত পাহাড়ের মানুষ। সেই দলটা কখনও জিএনএলএফ, কখনও বা মোর্চা।
এ বার কিন্তু পাহাড়ে ভোটের ছবি বলছে, মোর্চা বনাম তৃণমূলের টক্কর জমেছে। দলীয় পতাকা ছেড়ে জিএনএলএফ-এর অনেকেই এ বার ঘাসফুলের শিবিরে হাজির হওয়ায় লড়াইটা জোরদার হয়েছে। আর তারই ফল: দিনভর পুলিশের কাছে মোর্চার একের পর এক অভিযোগ। কখনও তৃণমূলের ‘বাড়াবাড়ির’। কখনও বা ভোটের গতি শ্লথ করতে তৃণমূলের লোকজন জড়ো হওয়ার। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল পাল্টা বলেছে, মোর্চাই ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। দিনান্তে দার্জিলিঙের জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেছেন, “পাহাড়ে সব দলের পক্ষ থেকেই নানা অভিযোগ জমা পড়েছে। অনেক অভিযোগ ঠিক নয়।”
কিন্তু “পাহাড়েও এমন ভোট হয় নাকি! এ তো দারুণ ব্যাপার”, বলছেন ফুদেন শেরপা, মঞ্জু তামাঙ্গের মতো প্রবীণ-প্রবীণারা, যাঁরা লাভা বাজারের পোলিং বুথে ঢোকার আগে দুই শিবিরের টানাটানির মধ্যে পড়েছিলেন। এক দিকে মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থীর ‘পদ্মফুল’! একটু দূরেই হইহই করে ‘ঘাসফুল’! ভোট দেওয়ার পরেও মঞ্জু, ফুদেনদের মতো অনেককে একই সুরে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আগে দেখতাম, সুবাস ঘিসিঙ্গ যা বলতেন তা-ই হতো। পরে বিমল গুরুঙ্গের জমানাতেও একই জিনিস চলছিল। এ বারই প্রথম দেখলাম, অন্য রকম ভোট।”
লাভা কিংবা লোলেগাঁও শুধু নয়, দার্জিলিং পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার অনেকের কাছেই এ বারের ভোটের ছবিটা অন্য রকম ঠেকেছে। যেমন কালিম্পঙের সামতাহারে স্কুলের বুথে আগে কোনও দিনই বিরোধী দলের এজেন্টদের দেখা যায়নি। ঘিসিঙ্গের আমলে জিএনএলএফ, গুরুঙ্গ-জমানায় শুধু মোর্চার প্রতিনিধিদের দেখতে অভ্যস্ত এলাকাবাসী। এ বার তাঁরা দেখলেন, ঘাসফুলের লোকের ভিড় উপচে পড়ছে বুথে যাতায়াতের রাস্তায়। তাতে সামিল দীর্ঘদিন ‘শীতঘুম’-এ থাকা জিএনএলএফ-এর নেতা-কর্মীরাও। প্রতিপক্ষ শিবিরে ভিড় দেখে একাধিক মোর্চা নেতা-কর্মী বললেন, “সামনে ঘাসফুল আছে ঠিকই। আসলে জিএনএলএফ-ই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।”
একই দৃশ্য কালিম্পঙের ডম্বরচক, দার্জিলিঙের ঘুম, কার্শিয়াঙের সোনাদা, তিনধারিয়া, সিপাহিধুরা, পানিঘাটা-সহ পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায়। দার্জিলিং কেন্দ্রের পাহাড়ি এলাকায় মোট বুথ ৮৬৯টি। প্রায় চার দশক ওই সব বুথে কোনও বিরোধী দলই এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক খুঁজে পায়নি। মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার বিরুদ্ধে ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করানোর পরে, ওই সব বুথে এজেন্ট দেওয়া নিয়ে উদ্বেগে ছিল তৃণমূল।
পাহাড়ের জিএনএলএফ নেতাদের প্রায় সকলেই ভোটের দিন তৃণমূলের যাতে এজেন্ট দিতে অসুবিধে না হয়, তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন। তার পরে সর্বত্র না হলেও অধিকাংশ বুথে এজেন্ট দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর কথায়, “এক জনের মর্জিমতো গোটা পাহাড়কে ওঠ-বোস করতে হবে নাকি! এটা পাহাড়ের মানুষ মানবেন না। এ বার হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেবেন।” তবে তৃণমূল যেখানে এজেন্ট দিতে পারেনি, সেখানে মোর্চা গা-জোয়ারি করে ভোট করিয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের পাহাড় শাখার আহ্বায়ক বিন্নি শর্মার।
পাহাড়ে ভোটের ছবিটা যে এ বার কিছুটা বদলাবে, সে ইঙ্গিত অবশ্য ভোটের আগেই মিলেছিল মোর্চা-প্রধান বিমল গুরুঙ্গের কথায়। প্রকাশ্য সভাতেই তিনি ঘোষণা করেন, মোর্চা-বিজেপি প্রার্থীর ভোটে জয়ের ব্যবধান গত বারের চেয়ে প্রায় এক লক্ষ কম হবে। এ দিন ভোট-পর্ব মেটার পরে গুরুঙ্গ কিছু বলেননি। মোর্চার সহকারী সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ বলেন, “কয়েকটি জায়গায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গোলমালের চেষ্টা হলেও ভোট শান্তিপূর্ণই হয়েছে। তৃণমূল বেশির ভাগ বুথে এজেন্ট দিয়েছে বলে দাবি করছে। তা হলে আমাদের বিরুদ্ধে গা-জোয়ারি করে ভোট করানোর অভিযোগ তোলা অর্থহীন।”
রডোডেনড্রনের এই মরসুমে পাহাড়ে কিন্তু ঘাসফুলও ফুটেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy