আগুনে ভস্মীভূত তৃণমূল নেতা বাসুদেব সরকারের বাড়ি। সোনবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক।
এলাকা দখল নিয়ে গোষ্ঠীর লড়াইয়ের জেরে এক তৃণমূল কর্মীকে সপরিবার পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ শিলিগুড়ির কাছে পোড়াঝাড়ে তৃণমূল কর্মী বাসুদেব সরকার আগুনের আঁচ টের পেয়ে কোনও মতে তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। তবে তাঁর চোখের সামনেই গোটা বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। ঘরে থাকা টাকা, গয়না, আসবাব, বইপত্র সবই পুড়ে গিয়েছে। বাসুদেববাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। সন্দেহভাজনদের মধ্যে তৃণমূলের কয়েক জনও রয়েছেন বলে বাসুদেববাবু জানিয়েছেন। যদিও জেলা তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, দুই গোষ্ঠীর কোন্দলের সুযোগে এই ঘটনা সিপিএম, বিজেপি-ও ঘটাতে পারে।
পুলিশ তদন্তে নেমে সোমবার বিকেলে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা নিরঞ্জন সরকারও। এ ছাড়া অনিল রায়, মধুসূদন সরকার, রাজু মণ্ডলকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।” ধৃতেরা বাসুদেবের বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে ওঠাবসা করেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। পুলিশ জানায়, ওই রাতে সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘরে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন বাসুদেববাবু ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী। মেয়ে ১২ বছর ও ছেলে ৯ বছর। দেড়টা নাগাদ সন্ধ্যাদেবী ঘুম ভেঙে দেখেন চারিদিকে আলোয় ভরেছে। তিনি তাঁর স্বামীকে ডেকে কীসের আলো দেখতে বলেন। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “কোনও রকমে ছেলেমেয়েকে ঘর থেকে বের করি। কয়েকটা জামা বার করতে পেরেছি শুধু। আর সবই ছাই হয়ে গিয়েছে।” সন্ধ্যা দেবী জানান, তাঁদের প্রতিবেশী তপন দাসের পাম্পসেট রয়েছে। যাতে জল তুলতে না পারা যায় , সে জন্য পাম্পসেটের তারও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাচক্রে, রবিবারই পোড়াঝাড়ে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সে সময়ে অনেকক্ষণ বাসুদেববাবু তাঁর পাশে পাশেই ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। সেখানে তৃণমূলের যুযুধান দু’টি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকেই এলাকায় জমি নিয়ে মারপিট থামানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করা হয় মন্ত্রীকে। তারপরে রাতেই বাসুদেববাবুর বাড়ি পোড়ানো হয়। মন্ত্রী এর পরে ফের সোমবার বিকেলে সেখানে যান। তিনি অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেন। মন্ত্রীর বক্তব্য, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা ঠিক নয়। পুলিশ তদন্ত করছে। দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে। এই এলাকায় অশান্তি বাড়তে দেওয়া যাবে না।”
পোড়াঝাড়ের বাসিন্দারাও চাইছেন চরের জমি দখলের কলকাঠি কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর লড়াই বন্ধ হোক। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গোলমাল চলছেই। কখনও তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী প্রকাশ্যে মারপিট করছে। একে অন্যের বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশ ‘টহল’ দিলেও হামলার ঘটনায় কেউ ধরা পড়ছে না কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এলাকাবাসীদের সন্দেহ, যে হেতু শাসক দলেরই দু’টি গোষ্ঠী ঘটনায় যুক্ত, সে জন্য পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে এ এলাকার তৃণমূলের কর্মী নিরঞ্জনবাবুও আক্রান্ত হন। তাঁর ঘরদোর ভেঙে দেওয়া হয়। সেই সময়ে অভিযোগ ওঠে, এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূলে নবাগত কার্তিক মণ্ডলের লোকজন হামলা করেছেন। কার্তিকবাবু গত পঞ্চায়েত ভোটে সিপিআইয়ের হয়ে পোড়াঝাড় থেকে জেতেন। তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন নিরঞ্জন।
পুরানো তৃণমূল নেতা নিরঞ্জনবাবুই এলাকায় কর্তৃত্ব করতেন। কার্তিকবাবু দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর একাংশের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এর পরেই চরের জমি নিয়ে দুই গোষ্ঠীর গোলমাল বাঁধে। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রতিদিনই খুচখাচ গোলমাল চলছেই। তৃণমূলের দখলে থাকা ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তপন সিংহ বলেন, “এলাকায় দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। এটা অস্বীকার করা যায় না।” তাঁর অভিযোগ, “সেই ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নিচ্ছে সিপিএম।” দলের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক আবার অন্য কথা বলছেন। তাঁর দাবি, “দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি নেই। সিপিএমের চক্রান্ত। বাসুদেব জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোয় তাঁকে এ ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।” বাসুদেববাবু জানান, এলাকায় সিপিএম প্রায় অস্তিত্বহীন। তাঁর সন্দেহ, বিজেপি এ সবের আড়ালে রয়েছে।
দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য দুষেছেন তৃণমূলকেই। তাঁর অভিযোগ, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বিধানসভা এলাকায় জমি মাফিয়ারা যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। সবাই তৃণমূল আশ্রিত। নিচুতলার উপরে নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নেই। তৃণমূলেরএকটাই কাজ, নিজেদের মধ্যে মারামারি করা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy