Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

ড্রয়িং খাতায় মা-বাবাকে খোঁজার গল্প বলবে রিমি

মায়ের কথা কেউ জানতে চাইলে, ড্রইং খাতা বের করে ছ’ বছরের রিমি। খাতার পাতায় এক মহিলার হাত ধরে একটি শিশু। মহিলার ছবিতে আঙ্গুল রেখে রিমি দেখায়, এই তো মা। অন্য পাতার ছবিতে ৩টি শিশু। হাত ধরে। রিমি দেখায়, “এটা আমার বোন, এটা ভাই, আর দিদি।”

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৬
Share: Save:

মায়ের কথা কেউ জানতে চাইলে, ড্রইং খাতা বের করে ছ’ বছরের রিমি। খাতার পাতায় এক মহিলার হাত ধরে একটি শিশু। মহিলার ছবিতে আঙ্গুল রেখে রিমি দেখায়, এই তো মা। অন্য পাতার ছবিতে ৩টি শিশু। হাত ধরে। রিমি দেখায়, “এটা আমার বোন, এটা ভাই, আর দিদি।” বছর দু’য়েক আগে রিমির মা মারা গিয়েছেন। প্রতিবন্ধী দিদির শ্বশুরবাড়িতে থাকার জায়গা হয়েছিল। ‘নিরাপত্তা’র আশঙ্কায় শিশু কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার একটি হোমে রাখা হয়। হোম কর্তৃপক্ষ স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন রিমিকে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রথম দিকে, কেবলই মনমরা থাকত সে। তারপরে আঁকা শেখাতে শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এখন পেনসিলের কয়েকটা টানে একে দিতে পারে মানুষের ছবি। স্কুলের দিদিমনিরাও, রিমির ড্রইং খাতার বিভিন্ন পাতায় ‘গুড’ ‘ভেরি গুড’ লিখে দিয়েছেন। হোম কর্তৃপক্ষ জানালেন, অবসর পেলেই ড্রইং খাতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রিমি, আর বাড়ির কথা জানতে চাইলেই প্রশ্নকর্তার সামনে ড্রইং খাতা মেলে ধরে।

মা, দিদি, বোনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও, কী ভাবে ড্রইং খাতার পাতাতে তাঁদের খুঁজে পেয়েছে, সেই কাহিনি শোনাতে কলকাতায় যাচ্ছে রিমি। কলকাতায় যাচ্ছে প্রীতি, সুতপা, কৃষ্ণাও। সকলেই শিলিগুড়ির হাকিমপাড়া হোমের আবাসিক। পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে কেউ হোমে এসেছে, কাউকে আবার উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। শিশু সুরক্ষা আইন অনুযায়ী ওদের নাম পরিবর্তিত করে লেখা হল। আগামী ২০ নভেম্বর কলকাতার রবীন্দ্র সদন মঞ্চে নিজেদের বদলে যাওয়া জীবনের ‘গল্প’ বলবে ৫ আবাসিক। এ বছর বিশ্ব শিশু দিবসের রজত জয়ন্তী বর্ষ। রাজ্য সরকারের শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন থেকে রবীন্দ্র সদনে রাজ্য স্তরের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকেই বিভিন্ন হোমের আবাসিকরা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। দিনভরের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথাও বলার সুযোগ থাকবে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিনির শিলিগুড়ির কো অর্ডিনেটর শেখর সাহা বলেন, “বিভিন্ন বয়সের এমন ৫ আবাসিককে বেছে নেওয়া হয়েছে, যারা নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, বাঁচার নতুন দিশা খুঁজে নিয়েছে। ওদের লড়াইয়ের কথা শুনে অনান্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।” শেখরবাবু জানিয়েছেন, আবাসিকদের ‘কাউন্সিলিং’ করে মুলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। যাদের পড়াশোনার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে, তাদের হাতের নানা কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভর করার চেষ্টা করা হয়। হোম কর্তৃপক্ষ জানালেন, হোমে এসে সেলাই শেখার পরেই বদলে গিয়েছে প্রীতির জীবন।

উত্তরবঙ্গেরই কোনও এক জেলা থেকে উদ্ধারের পরে প্রীতির বর্তমান ঠিকানা শিলিগুড়ির হোম। বয়স পেরিয়ে গিয়েছে বলে তাকে স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। রিমির মতো সেও প্রথম দিকে ‘অবসাদে’ ভুগছিল, ছোট কোনও ঘটনাতেও আতঙ্কিত হয়ে উঠত, রাস্তায় বের হতে চাইত না। হোমের এক কর্মীর কথায়, “ওকে হোমে রেখেই পড়ানো শুরু হয়, নানা মজার গল্পও বলা হতো। তখনই জানা যায়, সেলাই করতে খুব ভালবাসত মেয়েটি।” তারপরে শুরু হয় সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ। এখন প্রীতি নিজেই ‘সেলাই দিদিমনি’, হোমের অন্য আবাসিকদের সেলাই শেখানোর দায়িত্ব ওর উপরেই। ছোটদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া অথবা নিয়ে আসার কাজও করে সে। কম্পিউটারে গেম খেলতে বসে খিলখিলিয়ে হেসেও ওঠে।

একই ভাবে শিশু বয়সেই নির্যাতিতা কৃষ্ণাকে যখন হোমে উদ্ধার করে নিয়ে আসার অন্তত দু’সপ্তাহ কথা বন্ধ ছিল। আর এখন হোমের যে কোনও অনুষ্ঠানে গানের দায়িত্ব কৃষ্ণার। সারাক্ষণই গুনগুন করে চলছে ও। আজ, শুক্রবারে জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চেও থাকবে ও।

এক মঞ্চ থেকে আরেক মঞ্চ। হঠাৎ বদলে যাওয়া চলার পথ, কী ভাবে ফের বাঁক নিয়েছে সে কথাই কলকাতায় শোনাবে রিমি, প্রীতি, কৃষ্ণারা।

অন্য বিষয়গুলি:

drawing book rimi anirban roy siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy