একজন খেলোয়াড়ের পুরসভার দেওয়া ‘বার্থ সার্টিফিকেট’-এ লেখা রয়েছে, তার জন্ম হয়েছে কোনও সেবা সদনে। অথচ খেলোয়াড়ের বাবা-মা যে হলফনামা দাখিল করেছেন তাতে লেখা রয়েছে, বাড়িতে জন্ম হয়েছে ছেলের। এমনকী, সেই সময়ে যে দাই ছিলেন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি অভিভাবকদের। বয়সের সার্টিফিকেট নিয়ে এমন নানা অসঙ্গতি থাকার অভিযোগ নিয়ে সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন শিলিগুড়িরই এক টিটি খেলায়োড়ের বাবা জিতেন জানা। সেই অভিযোগে সাড়া দিয়ে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। তদন্ত শুরু হতেই গাঁধী ধামে মধ্যাঞ্চল টেবল টেনিসের আসর থেকে দলের ৬ জন খেলোয়াড় তুলে নিয়েছে নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন।
অন্যান্য অসঙ্গতির অভিযোগের মধ্যে যেমন রয়েছে, কোনও খেলোয়াড়ের জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে ২০০০ সালের আইন অনুসারে। আর তার জন্ম দেখানো হচ্ছে ১৯৯৮ সালের মে মাসে। শহরে বাসিন্দা বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে নার্সিংহোম হলেও অনেক ক্ষেত্রে তাদের জন্ম বাড়িতে হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে। জাল বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করতেই ওই কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। কারও জন্মের একাধিক শংসাপত্রের হদিস মিলেছে। নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস সংস্থা বা ফেডারেশনকে তা জানানো হলেও তারা সে সব দেখছেন না। শহরে বাড়ি হলেও অনেকে মাটিগাড়া বা নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জন্মের নকল শংসাপত্র বার করেছেন বলে অভিযোগ। কারও ক্ষেত্রে দাখিল করা বার্থ সার্টিফিকেটে পুরসভার যে নম্বর দেওয়া রয়েছে বাস্তবে সেই নম্বরে ওই শংসাপত্রের হদিস মিলছে না বলে অভিযোগ। এমনকী পাসপোর্ট বা স্কুলের নথিও জাল শংসাপত্র অনুসারে তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। তা জেনে অনেক ক্ষেত্রে আরটিআই করলেও স্কুলের তরফে বয়সের শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না। এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়িতে টিটি খেলোয়াড়দের জন্মের শংসাপত্র জাল করা নিয়ে।
নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হলেন প্রাক্তন টিটি তারকা মান্তু ঘোষ। গত ১২ অক্টোবর মান্তু দেবীর সংস্থার পক্ষ থেকে টেবল টেনিস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়াকে চিঠি পাঠিয়ে ওই খেলোয়াড়দের তুলে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, মান্তু দেবী ফেডারেশনের যুগ্ম সচিব পদে রয়েছেন। তাই মান্তু দেবীর ভূমিকা নিয়ে টেবিল টেনিস মহলে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ধনরাজ চৌধুরী বলেন, “খেলোয়াড়দের বয়সের নথি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির কাছ থেকে ফেডারেশন চেয়ে পাঠিয়েছে। আগামী ২৭ অক্টোবর এই ব্যাপারে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনার আড়ালে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মান্তু। তাঁর দাবি, “দীর্ঘদিন ধরেই আমাকে এবং সংস্থাকে হেয় করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তা হতে দেব না। সে জন্য খেলতে পাঠিয়েও শেষ পর্বে কয়েকজনের নাম জোনাল থেকে প্রত্যাহার করিয়েছি। ফের নথিপত্র খতিয়ে দেখে ফেডারেশনকে জানিয়ে দেওয়া হবে।” নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব তথা মান্তুর স্বামী সুব্রত রায়ের দাবি, ওই ৬ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৪ জনের শংসাপত্র ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং তাতে বয়স ঠিক রয়েছে। তিনি বলেন, “বাকিদের নথি হাতে পেলেই তা স্পষ্ট হবে।”
নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে খেলোয়াড়দের নাম তাঁরা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তাঁরা সকলেই শিলিগুড়ির। তা ছাড়াও উত্তরবঙ্গ টেবল টেনিস সংস্থার আরও ১০ জন খেলোয়াড়ের নামে সিবিআই-এর কাছে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলার অভিযোগ করেছেন শিলিগুড়ির বাসিন্দা জিতেন জানা। তিনি শিলিগুড়ি টেবল টেনিস অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত। জিতেনবাবুর ছেলে টেবল টেনিস খেলোয়াড়। ভাল খেললেও তাকে নানা ভাবে চক্রান্তের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ জিতেনবাবুর। তিনি বলেন, “আমি এর শেষ দেখতে চাই। জাল শংসাপত্র দিয়ে অনেক খেলোয়াড় বয়স কমিয়ে সহজ বিভাগে খেলছেন। ফেডারেশনে ওই খেলোয়াড়দের যে শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে তা প্রকৃত নয়। অথচ বয়সের প্রকৃত শংসাপত্র দিয়ে যাঁরা খেলছেন তারা ওদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না। বঞ্চিত হচ্ছেন।”
শিলিগুড়ি টেবল টেনিস সংস্থার কর্ণধার অমিত দামও দীর্ঘদিন ধরেই বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ নিয়ে সরব। তাঁর অভিযোগ, “নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন জন্মলগ্ন থেকেই কিছু খেলোয়াড়কে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলাতে উত্সাহ দিচ্ছে। দুজন কর্মকর্তা ওই টিটি সংস্থাকে পারিবারিক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করছেন বলেও অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি।” উত্তরবঙ্গ টেবল টেনিস সংস্থার সচিব সুব্রতবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “অতীতে অমিতবাবুই তাঁর অ্যাকাডেমির অনেক খেলোয়াড়ের বয়স ভাঁড়িয়ে খেলাতেন। যাদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের অনেকে অমিতবাবুর অ্যাকাডেমিতে ছিলেন। এখন তারা সেখানে না থাকায় অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” অমিতবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমার অ্যাকাডেমি থেকে খেলায়াড় গিয়ে বয়সের জাল সার্টিফিকেট দিলে ওঁরা কেন ব্যবস্থা নেননি। সেটা দেখেননি। দেখাটা ওঁদের দায়িত্ব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy