চিলড্রেন্স পার্কে ছড়িয়ে রয়েছে সিরাপের বোতল। নিজস্ব চিত্র।
শিশু উদ্যানে ইতিউতি ছড়ানো কাফ সিরাপ ও মদের বোতল। ঝোপ জঙ্গলে ঢাকা খেলাঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে আরও হরেক বস্তু যার সঙ্গে শিশুদের কোনও সম্পর্ক নেই। জলপাইগুড়ির চিলড্রেন্স পার্ক এখন রীতিমতো নেশা ও অসামাজিক কাজের নিরাপদ আস্তানা।
এখন পার্কের হাল দেখে কেউ বলবে না যে ১৯৭২ সালে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় শহরের কেন্দ্রস্থলে করলা নদী বাঁধের পাশে ওই শিশু উদ্যান দেখে এতটাই মুগ্ধ হন, যে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ওই ধরনের উদ্যান তৈরির পরিকল্পনা নেন তিনি। প্রবীণেরা চোখের সামনে সেই ঐতিহ্যের সর্বনাশ দেখে মনোকষ্টে ভুগে তা ভুলতে বসেছেন। আর নতুন প্রজন্ম শুনলেও বিশ্বাস করেন না।
সাড়ে তিন বিঘার উদ্যান এখন ঘন ঝোপজঙ্গলে ভরা। শ্বাপদসঙ্কুল পরিবেশে লতাপাতায় জড়িয়ে থাকা শিশুদের কিছু খেলার সরঞ্জাম না দেখলে বোঝার উপায় নেই এটাই ছিল উত্তরবঙ্গের প্রথম চিলড্রেন্স পার্ক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্জন ওই এলাকায় দিনের বেলাতেও শহরের কেউ যেতে চায় না। ওই সুযোগে জঙ্গলের আড়ালে চুটিয়ে চলছে নেশার আসর। তার প্রমাণ মেলে পার্কে ছড়িয়ে থাকা মদের বোতলেও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য ১৯৫৮ সালে শহরের ক্রীড়াপ্রেমী ক্লাব জলপাইগুড়ি ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের (জেওয়াইএমএ) উদ্যোগে ওই উদ্যান গড়ে ওঠে। সংস্থার সম্পাদক তথা শহরের অন্যতম প্রবীণ ব্যক্তি হিমাদ্রিশেখর নন্দী জানান, ১৯৫৪ সালে করলা নদীর বাঁধ তৈরি হয়। ওই সময় অভিভাবকেরা শিশুদের নিয়ে সেখানে বেড়াতে যেতেন। সেটা দেখে ক্লাবের তত্কালীন কর্মকর্তারা শিশুদের খেলার জন্য উদ্যান তৈরির পরিকল্পনা নেন। আর্থিক সাহায্য করেন তত্কালীন কংগ্রেস বিধায়ক শ্রীরাম সিংহ। ১৯৫৮ সালের ২৬ জানুয়ারি উদ্যানের উদ্বোধন হয়। বিধায়কের প্রয়াত বোনের নামে উদ্যানের নামকরণ হয় শান্তি সিংহ উদ্যান। যদিও পরে চিলড্রেন্স পার্ক নামে বেশি পরিচিতি পায় উদ্যানটি।
১৯৬৮ সালের বিধ্বংসী বন্যায় এই উদ্যান মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ক্লাবের তত্কালীন কর্মকর্তা তথা গবেষক চারুচন্দ্র সান্যাল ফের শিশুদের খেলার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। এর পরে কয়েক দশক বেশ ভাল চললেও পরে শুরু হয় অবক্ষয়। হিমাদ্রিশেখরবাবুর কথায়, আর্থিক সংস্থান না থাকায় ক্লাবের পক্ষে উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছিল না। আমরা সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছি। পুরসভাকে বলেছি পার্কের দুর্দশা দেখে খুব কষ্ট হয়।
পুরসভার কর্তারাও শহরের কেন্দ্রস্থলে শিশু উদ্যানের পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে উদ্যানকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তোলা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। তবে সমস্যা দাঁড়িয়েছে জমির মালিকানা নিয়ে। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “খুবই খারাপ অবস্থা উদ্যানের। কিন্তু সেটা ক্লাবের নিজস্ব সম্পত্তি। ওঁরা পুরসভার হাতে তুলে দিলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।” ক্লাবের সম্পাদক জানান, “পুরসভার প্রস্তাব নিয়ে ক্লাবের সভায় আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy