Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জমাটি শহরেও মেলে না অনেক পরিষেবা

মহকুমার স্বীকৃতি মিলেছে সেই ২০০১ সালে। কিন্তু মহকুমা সদর শহরের ন্যূনতম পরিকাঠামো আজ অবধি পাকাপাকি ভাবে তৈরি হয়নি মালবাজারে। মহকুমায় অনেক দফতরের অফিসই হয়নি।

মাল নদীর ধারে ফেলা হয়েছে জঞ্জাল। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

মাল নদীর ধারে ফেলা হয়েছে জঞ্জাল। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

সব্যসাচী ঘোষ
মালবাজার শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

মহকুমার স্বীকৃতি মিলেছে সেই ২০০১ সালে। কিন্তু মহকুমা সদর শহরের ন্যূনতম পরিকাঠামো আজ অবধি পাকাপাকি ভাবে তৈরি হয়নি মালবাজারে। মহকুমায় অনেক দফতরের অফিসই হয়নি। যে ক’টি দফতর রয়েছে, তাদের নিজস্ব কোনও ভবনও নেই। অফিসারদের জন্য কোনও আবাসন নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়িও বরাদ্দ করেনি রাজ্য সরকার। অফিসারদের একাংশ জানান, সবই ভাড়ার ভিত্তিতে চালাতে হচ্ছে।

নাগরিক পরিষেবার খামতি রয়েছে। এখনও শহরে ডাম্পিং গ্রাউন্ড হয়নি। শহরের বাইরে জঞ্জাল ফেলার প্রয়োজনীয় জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুরসভা ও প্রশাসনের দাবি। শহরের ১৫টি ওয়ার্ডের ৪৫ হাজার জনবসতির প্রতিদিনের জঞ্জাল ফেলা হবে কোথায়? বেশির ভাগ সময়ে মালবাজার লাগোয়া মাল নদীর দক্ষিণের চরে ফেলে দেওয়া হয় যাবতীয় জঞ্জাল। ডুয়ার্সের পর্যটনস্থানগুলির কেন্দ্রবিন্দু এই শহরে এমন নদী দূষণে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।

বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান স্বপন সাহা থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতা সুপ্রতিম সরকার সকলেই ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি না থাকাটাকেই শহরের একটি সমস্যার কারণ বলে মানছেন। স্বপনবাবু বলেন, “শহর লাগোয়া এলাকায় ধাপা তৈরির জমি না মেলায় কোনও পুরবোর্ডই এর সমাধান করে যেতে পারেনি। বিদায়ী পুরবোর্ড মাল নদী লাগোয়া একটি জমি চিহ্নিত করে। আমাদের পুরবোর্ড যে এলাকাটিকে চিহ্নিত করেছে সেখানে দ্রুত ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করা হলে সমস্যা মিটবে।”

অবশ্য মালবাজার শহরে বড় সমস্যা ফাঁকা জমির। মালবাজারের উত্তর, দক্ষিণ আর পশ্চিমে চা বাগান, পূর্বে সামরিক বাহিনীর স্থায়ী সেনা ছাউনি। একমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিমে মালবাজার থেকে বড়দিঘি যাবার রাস্তা বাদ দিয়ে শহরের বিস্তারের কোনও সুযোগই নেই। এই জমি জটেই আটকে রয়েছে মালবাজারের উন্নয়ন। ইন্ডোর স্টেডিয়াম, মুক্তমঞ্চ, স্থায়ী প্রশাসনিক ভবন, সব কিছু রূপায়ণের প্রাথমিক ও প্রথম সমস্যাই তাই জমি। বাসিন্দাদের নিজের প্রয়োজনে দু’কাঠা জমি খুঁজতেও হিমশিম খান।

মালবাজারের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। ২০ বছর আগেও সেই জাতীয় সড়কে মালবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে সুভাষ মোড় অবধি হাতে গোনা কয়েকটি দোকান দেখা যেত। ঘড়ি মোড় ধরে সুভাষ মোড়ের দিকে তাকালে পাহাড়ের রেখা আর আদিগন্ত ছড়িয়ে থাকা চা বাগান নজরে পড়ত। সেখানে এখন তিন থেকে চার তলা দোকান-বাড়ি তৈরি হয়েছে। শহরকে আরও উন্নত করতে ভাল নিকাশি ব্যবস্থা, নতুন রাস্তা তৈরি, নাটক প্রদর্শনী করার মতো মুক্তমঞ্চ, খেলার মাঠ, পাইকারি সব্জির বাজার, সবই প্রয়োজন বলে জানান বিদায়ী পুরবোর্ডের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম পুরবোর্ডের বিদায়ী চেয়ারম্যান সুপ্রতিম সরকার। তাঁর কথায়, “শহর বড় হলেও ভাল কোচিং পেতে শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়ি ছুটতে হয় পড়ুয়াদের। স্বাস্থ্য পরিষেবাও বেহাল।”

যদিও মালবাজারের বাটাইগোল বাজার রোডে, যেখানে সাপ্তাহিক হাট বসে, সেই দু’কিলোমিটার রাস্তা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ায় যানজট সেখানে তীব্র। তবুও শহরের সুভাষ মোড় থেকে ঘড়ি মোড়, দুধ সাদা মেটাল আলোর নীচে প্রশস্ত রাস্তা, সুরের মূর্ছনায় বাহারি ফোয়ারা, ক্যালটেক্স মোড়কে বাংলাদেশের ভাষা শহিদ স্মারকের আদলে বদলে ফেলা, জাতীয় সড়ক বরাবর ফুটপাথ তৈরি করা, সব মিলিয়ে মালবাজার সৌন্দর্যে উত্তরবঙ্গের যে কোনও বড় শহরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে বলেই দাবি করেন তৃণমূল পরিচালিত বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান স্বপনবাবু।

মালবাজার শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পর্যটন। মালবাজার মহকুমা জুড়েই গরুমারা জাতীয় উদ্যান, লাটাগুড়ি, ধুপঝোরা, মূর্তি, চাপড়ামারি যেমন রয়েছে, তেমনই মালবাজার থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় লাভা, ঝান্ডি, ঝালং, জলঢাকাও। বিন্দুও বেশি দূর নয়। তাই মালবাজারকে কেন্দ্র করেই অনেক পর্যটকেরাই ডুয়ার্স বেড়ানোর পরিকল্পনা নেন। বাংলা বা হিন্দি সিনেমার দৃশ্যায়নেও মালবাজার মাঝেমাঝেই স্থান পায়। তাই পর্যটন, শু্যটিং সব নিয়ে জমজমাটই থাকে মালবাজার। এ ক্ষেত্রেও অপরিকল্পিত বিকাশ হচ্ছে বলেও অভিযোগ। যত্রতত্র হোটেল, রিসর্ট খোলা হচ্ছে বলে দাবি। গাড়ির স্ট্যান্ড যেখানে সেখানে তৈরি হচ্ছে। যানজটও বাড়ছে।

এত সমস্যা সত্ত্বেও চলতি বছরটা মালবাজারের উত্‌সবের আমেজ রয়েছে। কারণ, পুরসভার ২৫ বছর পূর্তি রয়েছে। নাগরিক কমিটি গড়ে সেই উত্‌সবের প্রস্তুতি চলছে।

(শেষ)।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে

আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।

Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-শহরের নাম’।

অথবা চিঠি পাঠান,

‘আমার শহর-শহরের নাম’,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,

শিলিগুড়ি ৭৩৪০০১

অন্য বিষয়গুলি:

amar shohor sabyasachi ghosh service
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy