চা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে উত্তরকন্যায় বৈঠক।—নিজস্ব চিত্র।
একজন রাজ্যের প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন। অন্যজন তুলে ধরলেন প্রস্তাবের নানান ‘খামতি’। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বের এই বিপরীত অবস্থানে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে অষ্টম ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও নিষ্ফলাই রইল। সোমবার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় প্রায় পাঁচ ঘন্টার বৈঠকের পর রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিলেন দলের শ্রমিক সংগঠনের সভানেত্রী দোলা সেন। পক্ষান্তরে, চা শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সরকারের প্রস্তাবের নানা ‘খামতি’ তুলে ধরলেন। এই অবস্থায় নতুন চুক্তি কবে হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হল বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “মজুরি বৃদ্ধির চুক্তির খসড়া সবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ঐক্যমতে পৌঁছানো যায়নি। শ্রমিক, মালিক সবাইকে পাঁচদিন সময় দেওয়া হয়েছে। লিখিতভাবে তাঁরা মতামত জানাবেন। তার পরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকে ফের চুক্তি করা হবে।” পরবর্তী বৈঠক নিয়ে মলয়বাবুর বক্তব্য, “শিলিগুড়িতেই দ্রুত বৈঠক হবে।”
দলীয় রাজনীতিতে দোলা সেন ও শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় বরাবরই ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করেন। এর আগেও বিভিন্ন সময় তাঁদের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। উত্তরকন্যার বৈঠকে দোলাদেবী যেমন আইএনটিটিইউসির সভানেত্রী হিসাবে যোগ দিয়েছেন, সেখানে শোভনদেববাবু আসেন তরাই-ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়াকার্স ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি হিসাবে। এদিনের বৈঠকে দোলাদেবী আগাগোড়াই কার্যত পাশে দাঁড়িয়েছেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের। দোলীদেবীর কথায়, “শ্রম দফতর চুক্তির যে খসড়া পেশ করেছে। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তিনদশকের বাম আমলে যা মজুরি বেড়েছিল তা বলার নয়। আমরা প্রথমবার ২৮ টাকা বাড়িয়েছি। এবার ৩৭ টাকার উপর বাড়ানোর প্রস্তাব আসল। এর পর ন্যূনতম মজুরি চুক্তিও হবে। এর থেকে ভাল কী হতে পারে?” আগামী ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে শ্রমিক সমাবেশ করার পর আমরা শ্রম দফতরে সংগঠনের বক্তব্য জানিয়ে দেব।”
অন্যদিকে শোভনদেব বাবু বলেন, “সরকারের দিকের লোক হলেও শ্রমিক স্বার্থে আমাদের বক্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে সময়সীমা বাঁধতে হবে। তা অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। শ্রমমন্ত্রী তো চা মন্ত্রী নন, ওঁর আরও অনেক কাজ রয়েছে। কাজেই এটা দ্রুত করা দরকার।”
তিনি জানান,পাহাড়ে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সমতলের থেকে পাঁচ টাকা কম থাকায় এখন তা বাড়িয়ে সমতলের সমান করা হয়েছে। আবার সপ্তাহে টানা ছয়দিন কাজ করলে আড়াই টাকা করে প্রতিদিন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সেটা প্রথমেই মজুরির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া উচিৎ। নির্ধারিত পরিমাণের বেশি পাতা তুললে কেজি প্রতি ২ টাকা বা আড়াই টাকা করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ শ্রমিকরা পান ৪ বা ৫ টাকা। চুক্তিতে উল্লিখিত দু’বেলা কাজের কথা নিয়েও আপত্তি জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, ওই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন বাগান মালিকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করবেন শ্রমিকরা। এই বক্তব্যই লিখিতভাবে জানাবেন তাঁরা।
এদিনের বৈঠকের শুরুতেই সরকারের তরফে চুক্তির খসড়া সবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। খসড়ায় আপাতত তিন বছরের জন্য মজুরি চুক্তির কথা বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রথম বছর ১৭.৫০ টাকা এবং পরের দুই বছর ১০ টাকা করে মজুরি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ন্যূনতম মজুরি (মাসে ৬৭০০ টাকা) নিয়ে সিদ্ধান্তর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তা কার্যকর হলে তিন বছরের চুক্তি খারিজ হয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ের শ্রমিকেরা ৯০ টাকা এবং সমতলের শ্রমিকরা ৯৫ টাকা করে মজুরি পান।
এদিনও তিন বছরের মজুরি চুক্তির বিরোধিতা করেছে ২৩টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। তাঁরা জানিয়েছেন, এখন তিন বছরের চুক্তি করলে পরে ন্যূনতম মজুরি মালিকেরা না মেনে আদালতেও যেতে পারেন। আর খসড়াতে তিন বছরের চুক্তি বাতিল হবে তা স্পষ্ট করে বলা নেই। তা কার্যকরী হবে না এটাই বলা হচ্ছে। মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, “আমাদের চাপে সরকার কিছুটা পিছিয়ে এসেছে ঠিকই। মন্ত্রী তো চাপ দিয়ে চুক্তি করাতে চাইছিলেন। তবে আমরা ন্যূনতম মজুরি ছাড়া অন্য কিছু বুঝি না। আগামী ১৯ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy