চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এ বারও কোনও নিষ্পত্তি হল না। বুধবার উত্তরকন্যায় শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, শ্রম দফতরের প্রধান সচিব অমল রায় চৌধুরীর উপস্থিতিতে চা বাগানগুলির বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে চতুর্থ দফায় এই বৈঠক হয়। বর্তমানে চা বাগানের শ্রমিকেরা দৈনিক ৯৫ টাকা মজুরি পান। শ্রমমন্ত্রী বৈঠকে মালিকপক্ষকে সরকারের ন্যূনতম মজুরির কথা মাথায় রেখে নতুন মজুরি কত হবে সেই প্রস্তাব দিতে বলেন। মালিকপক্ষ অবশ্য সে রকম কোনও প্রস্তাব দেননি। অন্য দিকে শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যে শাসক দলের নিয়ন্ত্রিত দু’টি সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করেন দোলা সেন এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আইএনটিটিইউসি-র সভানেত্রী দোলা দেবী গোড়া থেকেই শ্রমিকদের মহার্ঘ্যভাতার বিষয়টি পরে আলোচনা হবে জানিয়ে আগে মজুরি নির্ধারণের বিষয়টির উপর জোর দেন। অন্য দিকে তরাই ডুয়ার্স প্লান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি শোভনবাবু মহার্ঘ্যভাতার বিষয়টি একই সঙ্গে ফয়সলা করার দাবি তোলেন। তা নিয়ে বৈঠকে শ্রমমন্ত্রীর সামনেই শাসক দলের দুই সংগঠনের প্রতিনিধিদের চাপান উতোর চলে। এ দিনের বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় আগামী ২৫ জুলাই ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
মালিকপক্ষের তরফে কনসালটেটিভ কমিটি অব প্ল্যান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মনোজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “শ্রমিক সংগঠনগুলি বিভিন্ন রকম মজুরির দাবি তুলছে। তাই বিষয়টি ভেবে বলার জন্য আমরা সময় চেয়েছি। আশা করি এ ব্যাপারে পরবর্তী বৈঠক ইতিবাচক হবে।”
আগামী ১৯ জুলাই দার্জিলিঙে সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে নিয়ে মহার্ঘ্যভাতা এবং সরকারের ন্যুনতম মজুরির আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মজুরি চুক্তির দাবিতে জমায়েতের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ফোরাম। বৈঠক শেষে যোগাযোগ করা হলে শ্রমমন্ত্রী বলেন, “দ্রুত মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি ঠিক হোক, আমরা তাই চাই। সে কথাই মালিকপক্ষকে জানানো হয়েছে। নতুন চুক্তি হতে দেরি হলে শ্রমিকদের সমস্যা যেমন বাড়বে তেমনই পরবর্তীতে মালিকদের এক সঙ্গে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা দিতে সমস্যা হবে। আশা করি পরবর্তী বৈঠকে তা ঠিক করা সম্ভব হবে।”
তবে এ দিন তাদেরই শ্রমিক সংগঠনের দুই পক্ষের প্রতিনিধি দোলাদেবী এবং শোভনদেবের মধ্যে মহার্ঘ্যভাতার দাবি নিয়ে চাপানউতোর প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, এই নিয়ে চার দফা বৈঠক হল। আগের বৈঠকগুলিতে মহার্ঘ্যভাতার বিষয়টির চেয়ে মজুরির বিষয়টি জোর দেওয়া হয়েছিল। তাই এখন মহার্ঘ্যভাতার প্রসঙ্গ আসলে জটিল হতে পারে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এ দিন বৈঠকের শুরুতে ঘন্টাখানেক থেকে বেরিয়ে যান। কলকাতায় ফিরে যাওয়ার তাড়া থাকায় শ্রমমন্ত্রীও বৈঠক শেষের আগেই বিমান ধরতে বেরিয়ে যান।
শোভনদেব জানিয়েছেন, বৈঠকে মালিকেরা দাবি করছেন, ১৯৭৪ সালের পর থেকে মহার্ঘ্যভাতা না থাকলেও প্রতি বছর তারা যে মজুরি বাড়ান, তার হিসাবের মধ্যেই মহার্ঘভাতার বিষয়টি ধরা থাকে। শোভনবাবু বলেন, “মহার্ঘ্যভাতার বিষয়টি আলাদা ভাবে বিবেচনা করে তা শ্রমিকদের দিতে হবে। তার পর ন্যূনতম কত মজুরি হবে, তা জানাক মালিকপক্ষ। সে কথাই এ দিন বৈঠকে বলা হয়েছে।” শোভনবাবুর দাবি সমর্থন করেছেন সিটু নিয়ন্ত্রিত চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম, আরএসপি নিয়ন্ত্রিত ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনোহর তিরকে, কোঅর্ডিনেশন কমিটি অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের আহ্বায়ক চিত্ত দে-সহ অনেক সংগঠনই। বিভিন্ন চা শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ফোরামের পক্ষে জিয়াউলবাবু বলেন, “আমরা চাই মহার্ঘ্যভাতা, মজুরির বিষয়টি নিষ্পত্তি হোক। সরকার পক্ষও তা চাইছেন। তামিলনাড়ু এবং কেরলে চা শ্রমিকেরা অনেক বেশি মজুরি পান তা উল্লেখ করে শ্রমমন্ত্রী মালিকপক্ষকে মজুরি ঠিক করার প্রস্তাব দিতে বলেন। অথচ মালিকপক্ষ তা করতে দেরি করছে। পরবর্তী বৈঠকে সমস্যা না মিটলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।”
দোলাদেবী বলেন, ‘‘জিয়াউলবাবুরা গত ৩৪ বছরে মহার্ঘ্যভাতা নিয়ে সরব হননি। এখন তাঁদের মুখে ও সব মানায় না। এ দিন বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে, দুই মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সরকার নির্ধারিত ন্যুনতম মজুরি ২০৬ টাকা। আমরা তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি বছর ২৩ টাকা হারে দৈনিক মজুরি বাড়াতে বলেছি। মজুরির বিষয়টি আগে ঠিক হলে তার পর মাহর্ঘ্যভাতা এবং অন্যান্য বিষয়গুলি পরবর্তী আলোচনায় আসুক সেটাই আমরা চাই।” বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি চাইলেও আগের আলোচনাগুলিতে দোলাদেবী মহার্ঘভাতার প্রসঙ্গ তুললেই বাধা দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। তরাই ডুয়ার্স প্লান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতারা এ দিন তাই শোভনবাবুকে থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কেন না তারা মহার্ঘভাতার বিষয়টি মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy