দিনহাটা স্টেশন থেকে ফের চালু হয়েছে কলকাতাগামী উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের স্পেশাল ট্রেন।
উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস
ভারতীয় রেলের দীর্ঘ ইতিহাসে উত্তরের জনপদে রেল যোগাযোগ খুব একটা সুখকর অবস্থানে না থাকলেও ‘নাই মামার চেয়ে কানামামা’ গোছের মন্দের ভাল রেল পরিষেবাটুকু পেলেও খুশি এই জনপদের মানুষজন। একটা সময় দিনহাটা স্টেশনের উপর দিয়ে রেলগাড়ি চলত ওপার বাংলায় ও কলকাতায়। গীতালদহ-মোগলহাট-কাউনিয়া জংশন ছিল এই রেলপথের সঙ্গে যুক্ত। কথাগুলো এ জন্য বললাম, ১০ জানুয়ারি দিনহাটা থেকে কলকাতাগামী উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্পেশাল ট্রেন হিসেবে যাতায়াত শুরু করল। এই জনপদের মানুষজনের দীর্ঘ দিনের একটা দাবিকে মান্যতা দেওয়া হল। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। তবে সংশয় যে থেকে যাচ্ছে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত এটি স্পেশাল ট্রেন হিসেবেই চলবে। ভয় হয়, কারণ দিনহাটা-মালদহ ট্রেনটি আকস্মিক ভাবে তুলে নিয়ে জনগণকে অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি স্বাচ্ছন্দ্য যাত্রার মাধ্যম। কিন্তু রেলপথ এবং দেশের মানুষ এই রেল পরিষেবার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোচবিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ কিন্তু উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসকে দিনহাটা থেকে যাত্রা করানোর জন্য খুশি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, এই ট্রেনটি যেন বন্ধ না হয়। প্রয়োজনে তা বামনহাট জংশন থেকে চালানো যেতে পারে।
—শুভাশিস দাস, দিনহাটা।
অঙ্গ-দানে সাড়া নেই হাসপাতালের
বেশ কয়েক মাস আগে আমার মতো ৮০ বর্ষীয় এক সহকর্মীর সঙ্গে তাঁর চক্ষুদান বিষয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি খুব খেদ ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছিলেন আমাদের দেশের তথা রাজ্যের অঙ্গদানের পরিকাঠামো নিয়ে। যেখানে তাঁর মতো অনেকের মৃত্যুর পরও চক্ষুদানের সদিচ্ছা থাকলেও সরকারি পরিকাঠামোর অভাবে সাড়া পাচ্ছেন না সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা থেকে। ফলে জীবনের পড়ন্ত অবস্থায় পৌঁছে আজ তিনি অনেকটাই হতাশাগ্রস্ত। সরকারের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন। তাঁর মতো একজন বর্ষীয়ান মানুষ হয়ে আমার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে একটাই প্রশ্ন এই যে, অঙ্গ ও টিসু প্রতিস্থাপনে যখন সরকারি প্রচারেও সাড়া মিলছে না অঙ্গদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে, তখন পরিস্থিতির গুরুত্বটি বিবেচনা করে সহজ ভাবে রাজ্যের বা কেন্দ্রের মেডিক্যাল কলেজ ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে নতুন করে পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না কেন? বিশেষ করে অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যখন তাঁদের মৃত্যুর পর দেহদান বা চক্ষুদান করতে স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন। আর কেনই বা এই অঙ্গদানের বিষয়টি সমস্ত সংবাদপত্রে ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না? এটা যখন অন্যের জীবনরক্ষায় খুব প্রয়োজনীয়! সারা দেশে হাজার হাজার রোগীর ক্ষেত্রে এই অঙ্গস্থাপন অত্যন্ত জরুরি বিষয়। আমরা জানি, সরকারের একক প্রচেষ্টায় এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়, কিন্তু যাঁরা সমাজের বৃহত্তর মানুষের কল্যাণের স্বার্থে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে চলেছেন (বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, এবং নানা ধরনের নেতা), তাঁরা কি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে আসতে পারছেন না ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অঙ্গ সংগ্রহ করতে? আমরা লক্ষ করছি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রচুর অর্থব্যয়ে অঙ্গপ্রতিস্থাপনের সুবিধা মিলছে। কিন্তু সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন এই যে, বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরতা কাটিয়ে বৃহত্তর সমাজের স্বার্থে সরকারি হাসপাতালগুলিতে ওই পরিকাঠামো গড়ে তোলাকে অত্যন্ত জরুরি ভাবছেন না কেন? এক জন বর্ষীয়ান মানুষ হয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে আবেদন রাখব, যে-সমস্ত ডোনার তাদের অঙ্গদানের জন্য আজও সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন, তাদের অন্তিম ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন যাতে আমার উপরোক্ত সহকর্মীর মতো তাঁরা আগামী দিনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে না পড়েন সরকারি উদাসীনতার কারণে তাদের অঙ্গদান করতে না পেরে।
—অরবিন্দকুমার সেন, মহামায়া পাড়া, জলপাইগুড়ি।
জেলায় বেড়েই চলেছে নারী পাচার
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় দালাল ও আড়কাঠির মাধ্যমে ক্রমাগত মেয়ে পাচারের ঘটনা বাড়ছে। বিয়ে অথবা চাকরির লোভ বা অন্য কোনও টোপ দেখিয়ে ভিন্ রাজ্য এবং কলকাতা, মুম্বই, পুণা ও হরিয়ানার পতিতালয়গুলিতে এই জেলার অসহায়, দরিদ্র ও নিরীহ মহিলাদের পাচার করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়ে পাচার চক্রের দালালদের মাধ্যমে এই অবৈধ কাজ চলছে। বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুরে নারী পাচারের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে শুধুমাত্র প্রায় ৩০০ নারী-নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে এই জেলার ৮টি থানা এলাকা থেকে। এর মধ্যে নাবালিকার সংখ্যা রয়েছে ১১৬ জন। বাকিরা ১৮ বছরের উপরে। এই বিপুলসংখ্যক নিখোঁজ মহিলার মাত্র সামান্য শতাংশকেই উদ্ধার করা যায়। বাকিদের খোঁজ মেলে না। বালুরঘাটে সুজিত মুখার্জি লেনের বাসিন্দা ঝুনু দেব নামে এক মহিলা প্রকাশ্যে দেহব্যবসা ও নারী পাচার চক্রের কাজ করছে। অথচ জেলা পুলিশ ও বালুরঘাট থানা ওই মহিলাকে আজও গ্রেফতার করছে না। গোয়েন্দা দফতর থেকে জানা যায়, গত তিন বছরে পাচারের সংখ্যা কমবেশি ৫০০-রও উপরে। জেলার সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন মহিলা সংগঠনগুলির অভিযোগ, এই ব্যাপারে এই জেলার ৮টি থানা, জেলা পুলিশ, ডিআইবি, ডিইবিএ, সিআইডি এবং পুলিশ সুপার চূড়ান্ত উদাসীন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর মহকুমার কুশমন্ডি, বংশীহারী ও হরিরামপুর ব্লক থেকে মূলত দারিদ্রের কারণেই উত্তর ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে নারীপাচারের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি-হওয়া এই সব মেয়ের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্থান হয় পতিতালয়ে, আবার বিহারের পয়সাওলা কিছু লোক এদের ‘ক্রীতদাসী’ হিসেবে কিনে নেয়। শুধু নারীপাচার নয়, এই জেলায় বিগত কয়েক মাসে গৃহবধূ নির্যাতন ও গৃহবধূ খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জেলার জনসংখ্যা সাড়ে ৭ লক্ষের ওপর। শুধু তাই নয়, বালুরঘাট কলেজ ও গঙ্গারামপুর কলেজের ছাত্রীরা এবং অবিবাহিত মহিলারা রাস্তাঘাটে দিনের পর দিন ইভটিজিঙের শিকার হচ্ছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের নারীপাচার বিরোধী সচেতনতা তৈরি এবং পাচারের শিকার হওয়া মেয়েদের উদ্ধারের কাজে অগ্রগণ্য ভূমিকা নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্পার’। তারা প্রশাসনের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে। ‘স্পার’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গঙ্গারামপুরে ৯০, বালুরঘাটে ৩৬ এবং হিলি ব্লকে ৪০ জন মেয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। এদের প্রায় সবাইকেই ভিনরাজ্যের দেহব্যবসায়ীদের কাছে মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy