নথি হাতে নাদের। —নিজস্ব চিত্র।
মোগল আমলে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা এসেছিলেন ইরান থেকে। এ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাযাবর জীবন কাটাতেন। থাকতেন মাঠ, পরিত্যক্ত জমি বা নদীর তীরে, পরিযায়ী পাখির মতো।
তাঁদের উত্তরসূরিরা এখনও থাকেন এ দেশে। তবে যাযাবর জীবন আর নেই। রোজগারের উপায় রয়েছে। রয়েছে ঘরবাড়ি, আধার কার্ড, ভোটার কার্ডও। কিন্তু আগের সব বদলালেও থেকে গিয়েছে ‘ইরানি’ তকমাটুকু।
সব চলছিল ঠিকমতোই। কিন্তু নতুন নাগরিকত্ব আইনের খবরে চিন্তা ছড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, পাঞ্জিপাড়া এবং বিহারের কিসানগঞ্জের ইরানিপাড়ায়। অনেকে ভাবছেন, ফের কি তাঁদের ফিরে যেতে হবে যাযাবর জীবনেই? কারণ সে সব পাড়ার বাসিন্দাদের কাছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড থাকলেও নেই জমির পুরনো নথি।
আরও পড়ুন: তৃণমূল ভাঙবে, দাবি দিলীপের
স্থানীয় সূত্রে খবর, ইসলামপুরে ১১০টি, পাঞ্জিপাড়ায় ২২টি ও কিসানগঞ্জে আড়াইশো ‘ইরানি’ মানুষের বসবাস। ফুটপাতে তাঁদের কেউ কেউ ফেরি করেন চশমা, ঝুটো আংটি, পেস্তা, কাপড়।
ইসলামপুরের মেলামাঠের বাসিন্দা ৮৫ বছরের নাদির আলি জানান, পুরনো দিনে বিভিন্ন সময়ে কোনও নবাব বা রাজা তাঁদের পূর্বপুরুষদের বসবাসের জন্য স্থায়ী জায়গায় দিলেও তাঁদের দলের ‘সর্দার’ তা প্রত্যখান করে দিতেন। তিনি দলের লোকেদের বলতেন, নবাব বা রাজাদের জায়গায় থাকলে মা-মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। নাদিরের কথায়, ‘‘সেটা যে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তা এখন টের পাচ্ছি।’’ ওই বৃদ্ধ আরও জানান, এ রাজ্যে উত্তর দিনাজপুর ছাড়াও তাঁরা রয়েছেন মুর্শিদাবাদে। বিহারের সমস্তিপুর ও কিসানগঞ্জে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, তৎকালীন মুর্শিদাবাদের নবাব এবং ইসলামপুরে জমিদার চৌধুরী পরিবার ও বিহারের খাগড়ার নবাব স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য ওই সব পরিবারদের জমি দেন।
কিসানগঞ্জের খাগড়া মেলা এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ আলি জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম মিশেছেন সমাজের মূলস্রোতে। তিনি বলেন, ‘‘কোনও দিন ইরানে যাওয়ার সুযোগ কারও হয়নি। এ দেশেই জন্ম। আমরা তো তা-ই ভারতীয়ই। তবে নতুন আইনে স্বস্তিতে নেই অনেকেই’’
সেই পাড়ার সলিমুদ্দিন বলেন, ‘‘এখন সমাজে অন্যদের মতো জীবনযাপনের সুযোগ পেয়েছি। সংসারে হাসি ফিরেছে। ঠিক তখন নতুন আইনে আশঙ্কা ছড়িয়েছে। কী যে এ বার হবে জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy