অবসর যাপন: নবনীতা দেবসেনের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বজয়ী ঘরের ছেলের এক দিনের কলকাতা-যাপন সীমাবদ্ধ রইল অন্তরঙ্গ পরিসরেই।
মঙ্গলবার রাতে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বহুতলে পা রেখেই অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন ছোটবেলার বন্ধু বাপ্পা সেনকে— ‘‘দেরি করিস না, তাড়াতাড়ি চলে আয়।’’ বাপ্পা, আর এক বন্ধু উজ্জয়ন ভট্টাচার্য, উজ্জয়নের স্ত্রী ইরা চলে আসেন তড়িঘড়ি। সঙ্গে উপহার— রাশিদ খানের গান-সহ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সংগ্রহ। বাড়ির তৈরি মুড়িঘণ্ট, কাতলা কালিয়া, কাবাব, পায়েস-যোগে আড্ডা জমে ওঠে। যোগ দেন অভিজিতের মা নির্মলাদেবীও।
বুধবার গভীর রাতে আমেরিকার উড়ান ধরতে বাড়ি ছাড়ার আগে পর্যন্ত অভিজিৎ গোটা দিনটা কাটালেন ছুটির মেজাজে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভেচ্ছাপত্র এসেছিল আগেই। এ দিন সকালে ফুল, বই, নকুড়ের সন্দেশ নিয়ে প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদের প্রতিনিধিরা বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন অভিজিতের সঙ্গে। সংসদের সভানেত্রী নবনীতা দেবসেনের স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে তাঁকে বলা হয় জানুয়ারিতে একটি অন্তরঙ্গ অনুষ্ঠানের তোড়জোড়ের কথা। এর পর হলুদ পাঞ্জাবি, সুতির ট্রাউজ়ার্স, স্যান্ডাল পরিহিত অভিজিৎ পৌঁছে যান হিন্দুস্তান পার্কে নবনীতাদেবীর বাড়ি ‘ভালো-বাসা’য়।
নবনীতা দেবসেনের বাড়িতে ঢুকছেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
একদা এই বাড়ির অদূরে মহানির্বাণ রোডেই মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন অভিজিৎ। নবনীতা ও অমর্ত্য সেনের দুই কন্যা অন্তরা, নন্দনা এবং তাঁদের ‘ঝিমা-দা’ অভিজিতের প্রায় একসঙ্গেই বড় হওয়া। নন্দনা বলছিলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময়ে দীপকমামা (অভিজিতের বাবা, অধ্যাপক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়) আমায় বহু বার গাড়িতে কলেজে পৌঁছে দিয়েছেন।’’
বছরখানেক আগেও বস্টনে তাঁর ‘নবনীতামাসি’-র সঙ্গে দেখা করেছিলেন অভিজিৎ। এ দিন ‘ভালো-বাসা’য় গিয়েছিলেন নিজের নতুন বই ‘গুড ইকনমিক্স ফর হার্ড টাইমস’ হাতে নিয়ে (যে বই তাঁর সন্তানদের উৎসর্গ করেছেন নোবেলজয়ী)। আর বেরোলেন নবনীতার ‘ভালো-বাসার বারান্দা’ বইটি হাতে। নবনীতা বলছিলেন, ‘‘ওঁর নতুন বই নিয়ে কথা হল। তার মানেই তো দেশের অর্থনীতির হালের কথা।’’ যদিও শুধু অর্থনীতি নয়, অভিজিৎ ও তাঁর বন্ধুদের পুরনো কথাও উঠে আসে ঘণ্টাখানেকের আড্ডায়। অভিজিতের বাচ্চাদের ছবি দেখে নবনীতা, তাঁর মেয়েরা ভারী খুশি!
দক্ষিণ কলকাতার একটি পোশাকের দোকানে কেনাকাটা করতে ব্যস্ত নোবেলজয়ী। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
নবনীতার বাড়ি থেকে বেরিয়েই স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের জন্য পোশাক কিনলেন নোবেলজয়ী। সবই ভারতীয় পোশাক— চুড়িদার, কুর্তা, পাজামা, জহরকোট। তার পর বাড়ি ফিরে ইলিশ-ভাতে মধ্যাহ্নভোজ।
রাত আটটা নাগাদ অভিজিৎ মাকে নিয়ে নৈশাহার সারতে যান দেশপ্রিয় পার্কে পারিবারিক বন্ধু দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, রুদ্র চট্টোপাধ্যায়দের বাড়িতে। তাঁরা উপহার দেন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের চায়ের প্যাকেট। বাপ্পা, উজ্জয়নেরা বলছিলেন, ‘‘ঝিমার মধ্যে ‘বিরাট কিছু করে ফেলেছি’ ভাবটা একটুও নেই। আগের মতো পুরনো হাসি-গল্প হল।’’ বন্ধুর কাছে উজ্জয়ন জানতে চান, আমেরিকায় ফিরে তিনি কি আবার অধ্যাপনাই করবেন? অভিজিৎ হেসে বলেন, ‘‘মাইনে তো পাই পড়ানোর জন্যই। পড়াতে তো হবেই।’’
জানুয়ারিতে ফের আসার কথা বিশ্বজয়ী বঙ্গসন্তানের। এখনই সেই পথ চেয়ে সুহৃদবর্গ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy