বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কোনও মুখ সামনে রাখার ভাবনায় উৎসাহী নয় বাম শিবির। এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশের দাবিকে তারা বিশেষ আমল দিতে নারাজ। বাংলায় অতীতের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে তাঁদের মনোভাব বুঝিয়ে দিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু।
বাম ও কংগ্রেসের আসন-রফা নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’পক্ষের কথা শুরু হয়নি। যৌথ কর্মসূচি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে বামেদের সঙ্গে আলোচনার ভারপ্রাপ্ত কংগ্রেসের কমিটির অন্যতম সদস্য ঋজু ঘোষাল-সহ কিছু নেতা সংবাদমাধ্যমে এবং অন্যত্র দাবি করে চলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে জোট হোক। কংগ্রেসের জন্য অন্তত দেড়শো আসনের দাবিও তুলছেন কেউ কেউ। সিপিএম অবশ্য জোটের বিষয়ে এ বার সতর্ক পদক্ষেপ এবং সংযত মন্তব্যের নীতি নিয়ে চলছে। আলিমুদ্দিনে রবিবার বামফ্রন্ট ও সহযোগী মিলে ১৬ দলের বৈঠকে কংগ্রেসের সঙ্গে আগের বৈঠকের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। তার পরে কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেন, ‘‘কংগ্রেস আলাদা একটা দল। তাদের নেতারা যদি কিছু বলে থাকেন, সেটা কংগ্রেস দলের বিষয়। আমাদের সঙ্গে দু’টো বৈঠকে নির্বাচনের জন্য আসন সমঝোতা বা এই বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তাই এই নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা আন্দোলনের জন্য উদগ্রীব। আন্দোলন না হলে ঐক্য তৈরি হয় না। যৌথ আন্দোলনেই কর্মীদের মনোবল বাড়বে।’’
কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনায় এই প্রসঙ্গ না এলেও তাঁরা কি জোটের মুখ হিসেবে কাউকে সামনে রাখার পক্ষপাতী? বর্ষীয়ান বাম নেতা বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘‘বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসটা একটু স্মরণে রাখতে হবে। দু’বার যুক্তফ্রন্টের সরকার হয়েছে ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে। কোনও বারই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কারও নাম আগাম ঘোষণা করা হয়নি। এমনকি, ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখনও তা-ই। লোকে জানত, জ্যোতি বসুই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোনও ঘোষণা করে লড়াই হয়নি।’’ বিমানবাবু না বললেও সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ বলছেন, ২০১১ সালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে ধরেনি তৃণমূল, তিনি বিধানসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেননি। জনমানসে ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তৃণমূল সরকারে এলে মমতাই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
বিমানবাবু বোঝাতে চেয়েছেন, বিরোধীরা এ রাজ্যে তাদের আন্দোলন ও কর্মসূচির জোরেই ক্ষমতায় এসেছে। ভোটের পরে মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টি ঠিক হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে অবশ্য প্রশ্নটা ভিন্ন। বৈঠকের পরে এ দিন বিমানবাবু গিয়েছিলেন ব্যারাকপুরে শান্তি-শৃঙ্খলার দাবিতে ও ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলে যোগ দিতে। মিছিলে ছিলেন কংগ্রেসের শুভঙ্কর সরকার, তাপস মজুমদারেরা। ধর্মঘটের সমর্থনে আজ, সোমবার কলকাতায় যৌথ মিছিলেও থাকবেন বিমানবাবু ও কংগ্রেস নেতারা।
সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বিজেপিকে ‘পয়লা নম্বর শত্রু’ হিসেবে নিশানা করার যে কথা বলছেন, সেই প্রসঙ্গে এ দিনও প্রশ্ন ছিল বিমানবাবুর কাছে। তিনি বলেন, ‘‘লিবারেশন একটি রাজনৈতিক দল, তাদের মূল্যায়ন থাকতেই পারে। তবে রাজ্যের সব বামপন্থীদের মত এটা নয়। এখানে বিজেপি ও তৃণমূল বারবার বোঝাপড়া করে চলে। এটা ভুলে গিয়ে ঘাসে মুখ দিয়ে চলা যায় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy