(বাঁ দিকে) মহম্মদ সেলিম এবং (ডান দিকে) সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
সিপিএম তাদের ঘোষিত রাজনৈতিক লাইন থেকে সরে আসেনি। বরং, তৃণমূল কংগ্রেসকেই কিছু দিন আগের আপত্তি থেকে সরে এসে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে গিয়ে বসতে হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে অ-বিজেপি দলগুলির মহা-বৈঠকের পরে এই ভাবেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল রাজ্য সিপিএম। সেই সঙ্গেই জাতীয় স্তরে যা-ই হোক, রাজ্যে শাসক তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধী বামেরা যে কোনও ‘আপস’ করছে না, জনমানসে সেই বার্তা স্পষ্ট করে দিতে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়ানোর পরিকল্পনাও নিচ্ছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে প্রবল সংঘাতে জড়িয়েছিল সিপিএম ও কংগ্রেস। দু’পক্ষেরই বেশ কিছু কর্মী-সমর্থকের প্রাণ গিয়েছে। ভোট লুটের পাশাপাশি পঞ্চায়েতের ভোট-গণনায় বিস্তর ‘কারচুপি’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ বাম এবং কংগ্রেসের। কিন্তু তার পরেও বেঙ্গালুরুর বিরোধী বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরিরা শামিল হওয়ায় বিজেপি প্রচারে নেমেছে, নিচু তলার কর্মীদের লড়াই-রক্তের কোনও মূল্য সিপিএম ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নেই। রাজ্যে তৃণমূলের ‘প্রকৃত বিরোধী’ তারাই, এই প্রচারেও শান দিয়েছে বিজেপি। সেই প্রচারের মোকাবিলায় নামতে হয়েছে সিপিএমকে।
এমতাবস্থায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘পটনা, বেঙ্গালুরু বা অন্য কোথাও বিরোধী দলগুলির বৈঠকে সিপিএমের দলীয় অবস্থান ঠিক হয় না। নিচু তলায় খসড়া দলিল পাঠিয়ে আলোচনা করে অবস্থান ঠিক হয় পার্টি কংগ্রেসে। বিগত কান্নুর পার্টি কংগ্রেসেও সিপিএমের সিদ্ধান্ত ছিল, দেশ বাঁচাতে বিজেপিকে হটাতে হবে। বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে, যাতে তারা বন্ধু না পায়। আর রাজ্য বাঁচাতে তৃণমূলকে হটাতে হবে। সিপিএম সেই কাজই করছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে কোনও নির্বাচনী জোট হয়নি। সিপিএমের রাজনৈতিক অবস্থানে কোনও ‘ইউ-টার্ন’ও হয়নি। কয়েক মাস আগেও আরএসএসের নির্দেশে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে বাইরে রেখে যে আলাদা ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টায় ছিল তৃণমূল, সাগরদিঘির উপনির্বাচনের পরেও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন তিনি একাই যথেষ্ট, তাঁদেরই বরং অবস্থান বদলে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে বসতে হয়েছে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বুধবার বেঙ্গালুরু-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অপশাসনের অভিযোগ এবং পঞ্চায়েত ভোটজনিত পরিস্থিতিতে সেই দলের সঙ্গেই এক মঞ্চে বামেদের দেখা যাওয়ার ফলে কিছু ‘বিভ্রান্তি’ যে দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে। সিপিএমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুই রাজ্য কেরল ও বাংলায় যখন ফলিত স্তরে বিরোধী জোট কার্যকর করা যাবে না, তা হলে এমন উদ্যোগে আখেরে কী লাভ, দলের অন্দরে সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য নেতাদের একাংশও। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, শুধু বিবৃতি নয়, সরকার-বিরোধী আন্দোলনের ঝাঁজও বাড়াতে হবে সিপিএমকে। আগামী ২৫-২৬ জুলাই দলের রাজ্য কমিটির সেই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা। পাশাপাশিই সিপিএমের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, কখনও জেডিইউ, কখনও কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে সিপিএম-তৃণমূল থাকছে। সিপিএম তৃণমূলকে ডেকে আনেনি!
সিপিএমকে নিশানা করা অবশ্য জারি রেখেছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও চুরি করবেন, কারণ এ বার সঙ্গে রয়েছে ইয়েচুরি!’’ সেলিম আবার পাল্টা বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু যখন তৃণমূলে ছিলেন, তখন মমতা সাধু ছিলেন? শুভেন্দুও তো সেই সময়ে অনেক স্বাধীন চোর ছিলেন!’’
এরই মধ্যে কোচবিহারের দিনহাটায় কংগ্রেস, সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে কিছু কর্মী-সমর্থককে বিজেপিতে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক দাবি করেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কুস্তি আর বেঙ্গালুরুতে দোস্তি মানা যায় না! তাই ওই দলগুলি ছেড়ে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।’’ কংগ্রেসের রবীন দাস, ফ ব-র অক্ষয় ঠাকুর, সিপিএমের শুভ্রালোক দাসেরা অবশ্য একযোগে পাল্টা দাবি করেছেন, স্থানীয় সমীকরণের সঙ্গে জাতীয় রাজনীতিকে গুলিয়ে বিজেপি ‘ভুল প্রচার’ করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy