Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অশান্তি এড়াতে কলেজে ঢালাও ‘ছাড়’ হাজিরায়

প্রথম সেমেস্টারের পরে মার্চে এই নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কলেজগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দেখা যায়, অনেক কলেজই ন্যূনতম ৬০% হাজিরার নিয়ম শিথিল করে দিয়েছে!

মধুমিতা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৯ ০৩:৪৯
Share: Save:

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলিতে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) পদ্ধতিতে পঠনপাঠন চালু হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ক্লাসে ন্যূনতম ৬০% হাজিরা বাধ্যতামূলক। পরীক্ষায় হাজিরার উপরে থাকে ১০ নম্বর। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন কলেজে সেই নিয়মের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। নামমাত্র হাজিরাতেই কলেজগুলি পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসার সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

প্রথম সেমেস্টারের পরে মার্চে এই নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কলেজগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দেখা যায়, অনেক কলেজই ন্যূনতম ৬০% হাজিরার নিয়ম শিথিল করে দিয়েছে! পরবর্তী সেমেস্টারের ক্ষেত্রেও একই কাণ্ড ঘটছে বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, প্রথম সেমেস্টারে বিভিন্ন কলেজে হাজিরা বিধি ঘিরে বিক্ষোভ, ঘেরাও, হাজিরা খাতা লুটের ঘটনাও ঘটেছে। পুরনো নিয়মে স্নাতকে ৬০-৭৫% হাজিরা থাকলে জরিমানা দিয়ে পরীক্ষায় বসা যেত। ৬০ শতাংশের কম হলে পরীক্ষায় বসা যেত না। তখনও অধিকাংশ কলেজ সেই নিয়ম মানত না বলে অভিযোগ।

নিয়ম মানা হচ্ছে না কেন?

উত্তর কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, আগে ১০ শতাংশেরও কম হাজিরা রয়েছে, এমন পড়ুয়াদেরও পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হত। ক্ষোভ-বিক্ষোভ এড়ানোই ছিল তার প্রধান কারণ। সিবিসিএস চালু হওয়ার পরেও সেই বিক্ষোভের ভয়ে বহু কলেজ পুরনো পথে হাঁটছে। অনার্সের পড়ুয়াদের যদি বা কিছুটা হাজিরা থাকছে, জেনারেলের অবস্থা খুবই করুণ। মধ্য কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ জানান, কোনও পড়ুয়া কলেজের কোনও একটা ক্লাস টেস্ট দিয়েছে, এমন রেকর্ড থাকলেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ঘেরাও-গন্ডগোল সকলেই এড়াতে চায়। অন্য এক অধ্যক্ষের বক্তব্য, ‘‘এ অনেকটা টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খেলা! ২০% হাজিরা থাকলেই পরীক্ষায় বসতে পারবে।’’ দক্ষিণের শহরতলির এক কলেজের অধ্যক্ষ জানাচ্ছেন, হাজিরা নিয়ে কিছু ভাবা হচ্ছে না। দু’-চার দিন ক্লাস করলেই দ্বিতীয় সিমেস্টারের ফর্ম পূরণের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকারা কত দিন ছুটি নেবেন, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে। অনেক শিক্ষকের দাবি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো নিয়মে ৪৫ দিন গরমের ছুটির উল্লেখ আছে। কিন্তু সিবিসিএস পদ্ধতিতে এ ভাবে টানা ছুটি নেওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই অধ্যক্ষদের অভিমত।।

মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ বৈঠকে জানা যায়, ছ’মাস অন্তর পরীক্ষার ফলে কলেজগুলো প্রবল চাপে পড়ছে। অধ্যক্ষদের একাংশের মতে, এই পদ্ধতিতে যে কঠোর নিয়মের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে তা বাধা পাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে প্রতি সেমেস্টারে ৯০ দিন প্রয়োজন। কিন্তু ছুটি বাদ দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে ৭০-৭৫ দিন। এর মধ্যে কম শিক্ষক নিয়ে পাঠ্যক্রম শেষ করাই অসুবিধাজনক। শিক্ষকদের ছুটি নেওয়ার বিষয়টি পদ্ধতিকে আরও জটিল করেছে বলেই মনে করছে শিক্ষক শিবিরের একাংশ। এক অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘শিক্ষকেরা ছুটি নিলে তাঁদের তো জোর করে আটকানো যায় না। অধ্যক্ষেরা বেত হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তাঁদের অন্য কাজ থাকে।’’

বাম নেতৃত্বাধীন রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র সহ-সভাপতি প্রবোধ মিশ্র মঙ্গলবার বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের হাজিরা হ্রাসের বিষয়টি মহামারির পর্যায়ে গিয়েছে! যার যা হাজিরা, তাতেই পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, কিছুটা অবকাশ তো দিতেই হবে শিক্ষকদের। তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র নেতা সুজয় ঘোষ জানান, সিবিসিএস পদ্ধতিতে পড়ুয়াদের হাজিরা নিয়ে কলেজগুলির মনোভাব যে খুবই ঢিলেঢালা, সেটা তাঁদের নজরে এসেছে। ‘‘শিক্ষকেরাই উন্নত পঠনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের ক্লাসে ফেরাতে পারেন। তাঁরা সদর্থক ভূমিকা পালন করুন। তা হলে পড়ুয়াদেরও আগ্রহ বাড়বে,’’ বলেন সুজয়বাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

Attendance Academics Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy