সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।
তিন বছরে জাতীয় রাজনীতিতে পরিস্থিতির বিরাট কোনও পরিবর্তন হয়নি। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান বা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় দৃকপাত না করে বিজেপি এবং তাদের পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার ‘স্বৈরাচারী’ পথে এগিয়ে চলেছে। এমতাবস্থায় কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর রাস্তা থেকে সরে আসার কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তাঁর বক্তব্য, হায়দরাবাদে গত পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন এখন বদলানোর তেমন কোনও যুক্তি নেই। বরং, এখন ওই লাইন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক!
সাধারণ সম্পাদক পুরনো লাইন বহাল রাখার পক্ষে সওয়াল করলেও কংগ্রেস-সঙ্গের প্রশ্নে সিপিএমের মধ্যে বিতর্ক বহাল আছে। কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা-সহ দক্ষিণ ভারত এবং আরও কিছু রাজ্যের নেতারা কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আপত্তি তুলেছেন। এই বিতর্ক সঙ্গে রেখেই আপাতত পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক দলিল চূড়ান্ত করার কাজে হাত দেওয়া হবে। আগামী জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠকে সেই চূড়ান্ত খসড়া পেশ করা হবে সম্মতির জন্য। তার পরে কান্নুরে ২৩তম পার্টি কংগ্রেসে দলের অবস্থান ঠিক হবে। দলেরই একাংশের মতে, পুরনো রাজনৈতিক লাইন ধরে রাখতে শেষ পর্যন্ত ইয়েচুরি সফল হবেন কি না, তার উপরেই নির্ভর করবে পরবর্তী দফায় তাঁর সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা বা না থাকা।
দিল্লির হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ ভবনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গত দু’দিন কেরলের নেতৃত্বে দলের একাংশ দাবি করেছেন, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে হিতে বিপরীত হচ্ছে এবং আরও হবে। বিজেপির মোকাবিলা করার নামে কংগ্রেস অনেক ক্ষেত্রে ‘নরম হিন্দুত্বের’ লাইন নিচ্ছে। আবার বাংলা-সহ দলের অন্য অংশের পাল্টা দাবি, কেরলকে দিয়ে গোটা দেশের পরিস্থিতি বিচার করতে যাওয়া ঠিক নয়। এই প্রেক্ষিতেই রবিবার কেন্দ্রীয় কমিটির জবাবি ভাষণে ইয়েচুরি বলেছেন, বিজেপিকে পরাস্ত করতে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে সংহত করাই তাঁদের লক্ষ্য। তবে রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতি আলাদা। দলীয় সূত্রের খবর, সারা দেশের নিরিখে বিজেপির বিপরীতে মূল বিরোধী দল যে কংগ্রেসই, তা উল্লেখ করেছেন ইয়েচুরি। তাঁর যুক্তি, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তৃতীয় ফ্রন্টের মতো পৃথক কোনও ব্যবস্থার ফল যে অতীতে একেবারেই ভাল হয়নি, সেই উদাহরণও হাতের সামনে রয়েছে। তবে নির্বাচনী জোট কোথায় কার সঙ্গে হবে, তা সেই সময়ের পরিস্থিতি বুঝেই চূড়ান্ত হবে বলে তিনি বৈঠকে জানিয়েছেন।
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন বামেদের সামনে যে নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে, তাকে কাজে লাগানোর কথা অবশ্য বলছেন দলের সকলেই। এ বারের আন্দোলনে বড় জমির মালিক কৃষকেরা শামিল হয়েছেন, যাঁরা অতীতে ভূস্বামী-নির্ভর দলগুলির সঙ্গে থাকতেন। এই আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের সব অংশের মধ্যে বামেদের ভিত্তি প্রসারিত করা এবং পাশাপাশি শ্রমিক, কৃষক-সহ বৃহত্তর শ্রেণির ঐক্য গড়ে সুযোগ দেখছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy