—ফাইল চিত্র
দেশে-বিদেশে ক্রিকেট মাঠে বিভিন্ন সময়ে অনেক চাপ সামলেছেন তিনি। রোগশয্যাতেও সপাটে ছক্কা হাঁকিয়ে মানসিক চাপের জল্পনাটাকে বাউন্ডারির বাইরে ফেলে দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। জিনগত সমস্যা ছাড়াও অত্যধিক মানসিক চাপ তাঁর হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সৌরভ রবিবার চিকিৎসকদের কাছে বলেছেন, ‘‘আজকের জীবনে মানসিক চাপ কার নেই? সকলেরই আছে। খেলোয়াড় জীবনে যে-মানসিক চাপ ছিল, সেই তুলনায় এখন তো কোনও চাপ নেই।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার চিকিৎসকেরা যখন তাঁকে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান, প্রথমে তা বিশ্বাস করতে চাননি সৌরভ। পরে অবশ্য বুঝেছেন, কী ঘটেছে। দক্ষিণ কলকাতার যে-হাসপাতালে তিনি আছেন, সেখানকার ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা এ দিন বলেন, ‘‘সৌরভের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। রক্তচাপ, নাড়ির গতি স্বাভাবিক। দুপুরে ভালই ঘুমিয়েছেন। ওঁকে হাসপাতালের খাবারই দেওয়া হচ্ছে।’’ দুপুরে তাঁর খাদ্য-তালিকায় ছিল ভাত ও মাঝের ঝোল। পরিবার ও কয়েক জন পরিচিত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছাড়া আর কাউকেই এখন সৌরভের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। ৫১৬ নম্বর কেবিনে টিভি না-দেখলেও এ দিন সংবাদপত্রে চোখ বুলিয়েছেন বিসিসিআই সভাপতি।
সৌরভের হৃৎপিণ্ডের তিনটি ধমনীতে ‘ব্লক’ ধরা পড়েছে। ডান দিকের ধমনীতে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানো হয়েছে। বাঁ দিকের দু’টি ধমনীতে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করতে হবে কি না, এফএফআর পরীক্ষা করে তা দেখতে হবে বলে জানান হৃদ্রোগ চিকিৎসক বিশ্বকেশ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘কত শতাংশ ব্লক, তা জানতে হবে। পারফিউশন স্ক্যান করে দেখতে হবে, ধমনীর ব্লক হৃৎপিণ্ডের পেশিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দেখতে হবে, ব্লকেজ সরালে পেশি কতটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে।’’ মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিনিধি, হৃদ্রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল জানান, কবে কী করা হবে, সেই বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। আজ, সোমবার বোর্ডের সদস্যেরা সৌরভের পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সৌরভেরও অভিমত নেওয়া হবে। চিকিৎসকদের মতে, সৌরভ সজ্ঞানে রয়েছেন। তিনি কতটা যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, বার বার তার প্রমাণ মিলেছে মাঠে। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তাঁর সিদ্ধান্ত জানা জরুরি।
মেডিক্যাল বোর্ডে সৌতিকবাবু ছাড়াও আছেন হৃদ্রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল, আফতাব খান, এসবি রায়, কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন ভবতোষ বিশ্বাস, কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেটিস্ট পলাশ কুমার ও আশিস পাত্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সৌরভের পরিবারের তরফে হৃদ্রোগ চিকিৎসক দেবী শেঠির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনিও ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ককে দেখতে রাজি হয়েছেন। কাল, মঙ্গলবার তিনি কলকাতায় আসতে পারেন।
সৌরভ শনিবার হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে বিদেশের চিকিৎসক ছাড়াও ভিন্ রাজ্যের কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন রমাকান্ত পাণ্ডা, ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়োলজিস্ট অশোক শেঠের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকেরা। এ দিন সৌরভকে দেখতে যান শিলিগুড়ি পুর বোর্ডের চেয়ারপার্সন অশোক ভট্টাচার্য। পরে তিনি জানান, বেশ কিছু ক্ষণ কথা হয়েছে। রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে কয়েক দিন ধরে তৈরি হওয়া জল্পনার চাপ পড়ছিল সৌরভের উপরে। সেই কারণেও এমন সমস্যা হতে পারে বলে অশোকবাবুর অভিমত। তিনি বলেন, ‘‘উনি যে-জগতের মানুষ, সেই জগতেই যেন থাকেন। অন্য চাপ যেন না-নেন। তাঁর উপরে যেন মানসিক চাপ না-থাকে।’’ কয়েক দিন আগেও সৌরভের বেহালার বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন অশোকবাবু। অনুরোধ করেছিলেন, সৌরভ যেন কোনও মতেই রাজনীতিতে না-যান।
সৌরভকে দেখতে এ দিন হাসপাতালে যান উত্তরপ্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা কেশবপ্রসাদ মৌর্য ও রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সিংহও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy