অধিগ্রহণের বদলে খরিদ। রাজ্যের এই শর্ত দিল্লি মেনে নেওয়ায় খুলে গেল সীমান্তে বেড়া-জমির জট।
কোন পথে জমি নেওয়া হবে, তা নিয়ে দুই সরকারে চাপান-উতোর চলছিল। যার জেরে গত পাঁচ বছরে সীমান্তে বেড়া বাঁধা শুরুই করা যায়নি। রাজ্যে দিদির বিপুল জয়ের পরে এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। যাবতীয় মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে সহযোগিতার রাস্তায় হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। ঠিক হয়েছে, সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জমি কিনে নেওয়া হবে। তার জন্য টাকা দেবে কেন্দ্র। কেনাকাটার যাবতীয় বন্দোবস্ত করে দেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য প্রশাসন।
এবং রাজ্যের শর্তটি দিল্লি মেনে নেওয়ায় এ বার বেড়া তৈরি শুরু হয়ে যাবে বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা। এখনও পশ্চিমবঙ্গের আটটি জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে ১৮০ কিলোমিটারে বেড়া বাঁধা বাকি। তারই ৯০ কিলোমিটারে বেড়ার জমি জোগাড় করা নিয়ে গত পাঁচ বছর দু’সরকারে দড়ি টানাটানি চলেছে।
কী রকম? ২০১১-য় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে ঘোষণা করে দেন, জবরদস্তি জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। অথচ নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তে বেড়া জরুরি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ মুখ্যমন্ত্রীকে অন্তত তিনটি চিঠি দিয়েও বরফ গলাতে পারেননি। বিকল্প হিসেবে কেন্দ্রকে নবান্ন প্রস্তাব দেয়, সরাসরি জমি কিনে নিক বিএসএফ। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রকল্পে জমির জোগান দিতে হবে রাজ্যকেই। আর অধিগ্রহণের মাধ্যমেই তার সংস্থান করতে হবে। টানাপড়েন চলতে থাকে। ২০১৪-য় নতুন অধিগ্রহণ আইন চালু হওয়ায় জটিলতা বাড়ে। পুরনো প্রকল্পের ক্ষেত্রে ১৮৯৪-র আইন মেনে জমি নিতে বাধা না-থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী রাজি হননি।
‘‘তবে মমতা দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরায় দমবন্ধ অবস্থাটা কেটেছে।’’— পর্যবেক্ষণ নবান্নের এক কর্তার। তাঁর কথায়, ‘‘দুই সরকারই কিছুটা নমনীয়। আমাদের প্রস্তাব, বেড়ার জমি কেনার ব্যবস্থা রাজ্যই করুক। জমির দাম ও ক্ষতিপূরণের টাকা জোগাক বিএসএফ।’’ প্রস্তাবটি কেন্দ্র মেনে নিয়েছে। বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় সদরের ডিআইজি পিআর সুমিয়ন বিজয় রাজের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা আশার কথা। আমরা শিগগির প্রস্তাব জমা দেব।’’
দু’তরফই কিছুটা নরম হল কেন?
এক বিএসএফ-কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের পক্ষে জমি কেনা সম্ভব ছিল না। রাজ্য সরকার ডিএম’দের দিয়ে জমি কিনিয়ে দিতে রাজি হওয়ায় অধিগ্রহণের দাবি থেকে সরে এসেছি।’’ নবান্নের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের প্রকল্পের জন্য জমি কেনার নীতি নেওয়া হয়েছে ২০১৪-য়। সেই মতো কেন্দ্রকে বলা হয়েছিল, জমি আমরা কিনে দিতে পারি। দিল্লি সায় দিয়েছে।’’
প্রশাসনের মতে, এ হেন ‘সহযোগিতা’ নতুন নয়। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রুট বদল ঘিরে টালবাহানার সময় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব মেনেছেন। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের অনুরোধে আসানসোলের ইএসআই হাসপাতালে জট কাটাতে এগিয়েছেন মমতা। কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ বা জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে জমি-সমস্যা মেটাতেও মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কার্যকর হয়েছে। যদিও মমতা সরকারের ‘জমি খরিদ’ নীতি মেনে প্রকল্প রূপায়ণের পথে মোদীর সরকার আগে হাঁটেনি। এ বার যেটা প্রথম হল।
গত ২৭ মে মমতার শপথে এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি উন্নয়নে সহযোগিতার বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। বেড়া বাঁধার মধ্য দিয়ে তার বাস্তবায়নের পথ আরও প্রশস্ত হবে বলে আশায় আছে রাজ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy