অনুব্রত জেলে যাওয়ার আগে ও এখন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে? বিখ্যাত গানের কলি চোখের জন্য সত্যি হলেও চুলের ক্ষেত্রে নয়। চোখে কাজ না-দিলেও কাজলে (পড়ুন কলপ) চুলে কাজ দেয়। সাদা চুলে কালো কলপ প্রবীণদের মতো অনেক নবীনের কাছেও প্রিয় রূপটান। রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও।
কিন্তু সময় যখন উল্টো স্রোতে বয়, তখন তো আর মনের টান মেনে রূপটান হয় না! সেটাই স্পষ্ট তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের চেহারায়। পুরনো অনুব্রত আর এখনকার অনুব্রতে ফারাক তাই চোখে পড়ছে। গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার আগে কালো কুচকুচে চুল নিয়মিত কলপের অভাবে রগের দু’পাশে অনেকটাই সাদা। গোঁফেও কালো ছাপিয়ে সাদার আধিপত্য।
বিষয়টা কি চোখে লেগেছে বোলপুরের কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের? তিনিই এত দিন অনুব্রতের পোশাক থেকে অন্য সব কিছুর দেখভাল করতেন। ক’দিন আগে তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে বিশ্বজিতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। অনুব্রতের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গিয়েছে, পোশাক থেকে শুরু করে কে কেষ্টদার চুলে কলপ করে দেবে, সবটাই ঠিক করতেন বিশ্বজিৎ। তিনিই বারো মাস অনুব্রতকে ‘সুন্দর’ রাখতে ‘নরসুন্দর’ ডেকে আনতেন। তেমনই এক জন নাম গোপন রাখার শর্তে শুক্রবার বলেন, ‘‘আমি বেশ কয়েক বার দাদার চুলে কলপ করতে গিয়েছি। সে সময় যেটা বুঝতে পেরেছি, উনি খুব ঘন ঘনই রং করাতেন। তবে কত দিন অন্তর সেটা বলতে পারব না। আসলে প্রতি বার তো আর আমি যেতাম না। অনেক সময় অন্যরাও গিয়েছে চুল আর গোঁফে কলপ করতে।’’
কেষ্টর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, নিয়মিত যত্ন করে অনুব্রতের চুল এবং গোঁফে কলপ করা হত। একেবারে সময় মেপে। যাতে সাদা চুল নজরে না পড়ে। কড়া নজরদারি থাকত বিশ্বজিতের। কিন্তু জেলে গিয়ে সেই যত্ন নেওয়া যায় না। টানা জেলবাসে অনুব্রতের চুলের রং বদলে গিয়েছে। প্রথমে সিবিআই হেফাজত এবং তার পরে সংশোধনাগার মিলিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত টানা ৩০ দিন বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন অনুব্রত। দেখে বোঝা যাচ্ছে, এর মধ্যে তাঁর চুল কাটানো হয়েছে। কিন্তু কলপ পড়েনি। ফলে ৬২ বছরের অনুব্রতের চুল এবং গোঁফের স্বাভাবিক রং বেরিয়ে পড়েছে।
ঘটনাচক্রে, একই রকম দেখা গিয়েছিল তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে। চিটফান্ড-কাণ্ডে তিনি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যখন গ্রেফতার হন। তখন তিনি ছিলেন কালো চুল-দাড়ির সুদীপ। কিন্তু যখন জামিনে ছাড়া পান, তখন তাঁকে চেনা দায়। চুল-দাড়ি-গোঁফ সবই সাদা। তার পর থেকে সুদীপকে অবশ্য আর চুল-দাড়িতে কালো রং করতে দেখা যায়নি। এখন সাদা চুল-দাড়ির সুদীপকেই চেনেন সকলে। তাঁর নুতন চেহারায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন সুদীপ নিজেও।
তবে ‘কেষ্টদা’ খুব তাড়াতাড়িই আবার চুলে কলপ করতে পারবেন বলে মনে করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা। বৃহস্পতিবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রতকে ‘বীরের সম্মান দিয়ে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনার’ কথা বলেছিলেন। আর শুক্রবারেই মঙ্গলকোট বিস্ফোরণ মামলায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন অনুব্রত। তার পরেই বলেছেন, ‘‘একটাই কথা বলি— আমি কোনও অন্যায় করি নাই। তাই বেকসুর খালাস হলাম। সবেতেই বেকসুর খালাস হব।’’ খালাস হওয়ার পর তিনিও সুদীপের পথে যাবেন কি না, তা অবশ্য কেষ্টই জানেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy