দলের কর্মীদের কড়া বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েই দলের ভিতরের ফাঁকফোকরগুলো বড্ড বেশি করে ধরা পড়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ফাঁকগুলোকে মাথায় রেখেই দলের ঐক্য এবং শৃঙ্খলারক্ষায় কড়া বার্তা দিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের বর্ধিত কমিটির বৈঠকে সেই সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো ঢাকতে মমতার কঠোর মনোভাব দেখা গেল। স্পষ্ট ভাবে তিনি এ দিন কর্মীদের জানিয়ে দিলেন, দলের ভিতর কোনও রকম দ্বন্দ্ব বা কোন্দল চলবে না। পুরনো তৃণমূলকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। কোনও রকম তোলাবাজি করা যাবে না। কোনও নেতা নিজেকে দলের থেকে বড় ভাবলে তাঁকে তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে। যুব তৃণমূল যদি মূল সংগঠনের থেকে ছাপিয়ে যেতে চায়, সেটাও বরদাস্ত করা হবে না। বহু জায়গাতে দল যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এবং সংঘর্ষে জেরবার, সে সব ঠেকাতে এ দিন কড়া হতে দেখা গেল তৃণমূল নেত্রীকে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্নগুলো উঠছিল। অনেক জায়গাতেই সঠিক ‘মর্যাদা’ না পেয়ে দলের পুরনো কর্মীদের একটা অংশ নির্দল প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়েন। জিতে গিয়ে তাঁরা দলকে বেশ বেগ দিয়েছেন। পাশাপাশি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এটাও বুঝতে পারছিলেন, এমনকি প্রকাশ্যে তাঁরা স্বীকারও করে নিচ্ছিলেন, নিচু স্তরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এ দিন সেই প্রসঙ্গকে মাথায় রেখে মমতা বলেন, ‘‘পুরনো কর্মীদের ভুলে গেলে চলবে না। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে। আমার কাছে সব ব্লকের খবর থাকে। জনসংযোগ বাড়াতে হবে। জনসংযোগ না থাকলে তৃণমূল করার দরকার নেই। গায়ে হাওয়া লাগিয়ে চললে হবে না।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, প্রতিটা জেলাপরিষদের সভাধিপতি কে হবেন, সেটা ঠিক করবেন খোদ মমতা। এমনকি, গ্রামসভাতেও দেখা হবে, কে মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। মমতার বার্তা, ‘‘যাঁরা মানুষকে ভালবাসে না, মানুষের সঙ্গে থাকেন না, তাঁদের তৃণমূলে থাকার কোনও প্রয়োজন নেই।’’
আরও পড়ুন: আহা প্রাণ জুড়োল, কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় স্বস্তির বর্ষণ
ভিনধর্মে বিয়ে, তাই পাসপোর্ট দফতরে হেনস্থা! বিদেশমন্ত্রীর দ্বারস্থ দম্পতি
লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিরোধী দলগুলিকেও একহাত নিয়েছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, এ রাজ্যে সিপিএম বিজেপির হাত ধরেছে। আর কংগ্রেস দিল্লিতে বিরোধিতা করলেও এ রাজ্যে বিজেপির পাশে রয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা জীবন হাতে নিয়ে কাজ করছেন। গুলি-বন্দুক দিয়ে রাজনীতি হয় না। এ রাজ্যে সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। মানুষের টাকা লুঠ করছে ওরা।’’ এর পরেই রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের নাম না করে মমতা হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘কেউ কেউ বলছেন, এনকাউন্টার করবেন। আমি বলছি, আসুন, ক্ষমতা দেখান।’’
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিভিন্ন জেলা থেকেই ইদানীং অভিযোগ পাচ্ছিলেন, যুব তৃণমূলের ছায়ায় বেশ কিছু জায়গায় ঢেকে যাচ্ছে তৃণমূল। এমনকি, যুব নেতারা অনেক সময়েই জেলার নেতাদের মানেন না। মমতা এ দিন সেই দ্বন্দ্বের জায়গাটাও কড়া হাতে সামলানোর চেষ্টা করেছেন। যুব তৃণমূল যে মূল সংগঠনের একটা অংশ, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যুব তৃণমূল আর তৃণমূলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলবে না। তৃণমূলের অধীনে যুব তৃণমূল। মূল সংগঠনকে মাথায় রেখেই চলতে হবে যুব সংগঠনকে। কোথাও যুব এবং তৃণমূলের দুটো পার্টি অফিস পাশাপাশি রাখা যাবে না। দুই সংগঠনের অনুষ্ঠানও করা যাবে না এক দিনে।’’
জঙ্গলমহল-সহ রাজ্যের যে সমস্ত জায়গায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে খারাপ ফল হয়েছে, সেই সব এলাকার দলীয় নেতৃত্বকেও এ দিন কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতাদের তিনি মঞ্চ থেকে জানিয়ে দেন, দলের ফল কেন খারাপ হল, তা জানিয়ে ১০ দিনের মধ্যে তাঁর কাছে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। কোথায় দলের দুই নেতার মধ্যে বিভেদ তৈরি হলে, তা মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। না হলে, দু’জনকেই দল থেকে বার করে নতুন নেতা তুলে আনার হুঁশিয়ারিও এ দিন দেন মমতা। মঞ্চ থেকে বিভিন্ন জেলার একাধিক নেতার নাম করে তাঁদের সতর্কবার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী। বাদ যাননি বিধায়ক-মন্ত্রীরাও।
আরও পড়ুন:
সওয়া সাত লাখে নিম্নবিত্তের জন্য ‘নিজশ্রী’ আনছে রাজ্য সরকার
নয়া বছরে রাজ্যে ডিএ ১৮%, ঘোষণা মমতার
এ দিন মঞ্চ থেকে তিনি ২১ জুলাইয়ে সভায় জেলার সকল কর্মী-সমর্থকদের আসার আহ্বান জানান মমতা। পাশাপাশি, কেন্দ্রের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জেলায় জেলায় কর্মসূচি গড়ে তোলাও কথাও বলেন তিনি। ২১ জুলাইয়ের পর থেকে ওই সব কর্মসূচি হবে। জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় যে সমস্ত পরিবার ‘অসহায়’ হয়ে পড়ছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশও দেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। সাহায্য করতে হবে পরিবারগুলোকে। প্রত্যেক জেলায় আমাদের নজর রাখতে হবে।’’
নেতাজি ইন্ডোরের এ দিনের সভা বুঝিয়ে দিল, এ রাজ্যে আপাতত মমতার পাখির চোখ লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব যাতে খারাপ ফলের কারণ না হয়ে ওঠে, সেই সম্ভাবনা ঠেকাতে মমতা যে বদ্ধপরিকর, এ দিন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy