(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং (ডান দিকে) নিতিন গডকড়ী। —ফাইল চিত্র।
একটি চালু প্রকল্পের মাঝপথেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে তাতে পরিমার্জন মেনে নিল মোদী সরকার। কেন্দ্রের ‘ভারতমালা’ প্রকল্পের আওতায় পালশিট থেকে ডানকুনির মধ্যে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সেই প্রকল্পেই পরিকাঠামো সংক্রান্ত কিছু পরিমার্জনের অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, সেগুলির বেশির ভাগই সিঙ্গুর এবং তার সংলগ্ন এলাকায়। রাজ্য রাজনীতিতে যে এলাকার নামমাহাত্ম্য অনস্বীকার্য। প্রসঙ্গত, ওই রাস্তার নির্মাণ-দায়িত্বে রয়েছে ‘মোদী-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত আদানি গোষ্ঠী।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, পরিমার্জনের কারণে ওই প্রকল্পের খরচ বাড়তে চলেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা! যা বহন করবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। অভিজ্ঞ আমলাদের অনেকের মতে, সাধারণত, চালু প্রকল্পের ক্ষেত্রে নির্মাণের মাঝপথে তাতে কোনও পরিমার্জনের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব ফেরায়নি নিতিন গডকড়ীর সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রক। পর্যবেক্ষকদের মতে, একশো দিনের কাজ বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কেন্দ্রের বরাদ্দ এখনও আটকে রয়েছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রের কাছে লক্ষাধিক কোটি টাকা বকেয়া থাকার অভিযোগ বার বার করে থাকেন মমতা। সেই দিক থেকে খরচ বাড়বে জেনেও এই প্রকল্পের পরিমার্জনে কেন্দ্রের সম্মতিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ধমানের পালশিট থেকে হুগলির ডানকুনি (জাতীয় সড়ক ১৯ এবং ৬-এর সংযোগস্থল পর্যন্ত)—প্রায় ৬৪ কিলোমিটার (প্রকল্পের নকশা-দৈর্ঘে) পথ সম্প্রসারিত হচ্ছে ছ’লেনে। কাজ চলছে জোর কদমে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, প্রাথমিক নকশায় ওই পথে সাবওয়ে বা ‘ফুট-ওভার ব্রিজ’ করার পরিকল্পনা ছিল না। প্রকল্প শুরুর পর থেকে সিঙ্গুর এলাকার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না সাবওয়ে এবং ফুট-ওভারব্রিজের দাবিতে সরব হন। মিছিল-প্রতিবাদের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এবং গডকড়ীকে সেই দাবি সম্বলিত চিঠি
পাঠিয়েছিলেন তিনি।
এনএইচএআই সূত্রের খবর, ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর কেন্দ্রকে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রীও। এনএইচএআই-এর সঙ্গে গত মে মাস থেকে দফায় দফায় বৈঠক করেন পূর্তসচিব এবং মুখ্যসচিব এমনকি, হুগলি প্রশাসনও। শেষ পর্যন্ত গত মাসের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশের উল্লেখ করেই প্রস্তাবগুলি মানার কথা লিখিত ভাবে (চেঞ্জ অব স্কোপ অর্ডার) রাজ্যকে জানিয়ে দেয় এনএইচএআই।
এনএইচএআই-এর আদেশনামা অনুযায়ী, পালশিট থেকে ডানকুনির মধ্যে ১৭টি জায়গায় সাবওয়ে অথবা ‘ফুট ওভার ব্রিজ’ হবে। তার মধ্যে ১২টি জায়গাই সিঙ্গুর সংলগ্ন। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “প্রথমে ওভার ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু তাতে প্রকল্পের খরচ সব মিলিয়ে অন্তত ৬৫০ কোটি টাকা বেড়ে যেত। তাই এখন সাবওয়ে এবং ফুট ওভার ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। এক-একটি নতুন পরিকাঠামোয় ৮-৯ কোটি টাকা করে খরচ হতে পারে।” বেচারামের বক্তব্য, “ওই এলাকায় পথ দুর্ঘটনা হামেশাই ঘটে থাকে। দুর্ঘটনায় কৃষকমৃত্যুও ঘটেছে। অতিরিক্ত খরচ কেন্দ্রই বহন করবে। প্রাথমিক ভাবে তারা ৪০ কোটি টাকা মঞ্জুরও করেছে।”
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, রাজ্য রাজনীতির পট পরিবর্তনে সিঙ্গুরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। টাটাদের কারখানা বিদায় নিয়েছে। সেখানে নতুন বড় কোনও শিল্প এখনও আসেনি। রাজ্য সরকারের তরফে কৃষিভিত্তিক শিল্প তৈরির প্রস্তাব রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি, রাজ্যের পরিকল্পনায় রয়েছে রঘুনাথপুর-ডানকুনি, ডানকুনি-তাজপুর এবং ডানকুনি-কল্যাণী আর্থিক করিডর প্রকল্পও। ফলে সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করে ডানকুনি এবং বর্ধমান লাগোয়া এলাকায় এমন পরিমার্জন গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy