আতঙ্ক: উপরে উদ্বেগ ডোমকলের নওদাপাড়ায়। ছবি: সাফিউল্লা উসলাম
ঘুমে জড়িয়ে রয়েছে তখন গোটা ডোমকল। শুনশান চারপাশ। আচমকা পাকা রাস্তা থেকে কাঁচা রাস্তায় মোড় নিল দামি ছোট গাড়িগুলো। এক এক করে গিয়ে দাঁড়াল রানিনগরে আবু সুফিয়ান এবং জলঙ্গির ঘোষপাড়ার আতিউর রহমানের সামনে। সেই বাড়িগুলোও তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। ছোট গাড়ি থেকে পুলিশকর্মীরা নেমে প্রথমেই ঘিরে ফেলেন চারপাশ। আন্ধকারের মধ্যে তাঁদের টর্চের উজ্জ্বল আলো আর বুটের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় পাড়ার। তার পরেই কয়েক জন নিজেদের মধ্যে ফোন ও ওয়াকিটকিতে কথা বলতে বলতে বার করে ফেলেন আগ্নেয়াস্ত্র। দ্রুত পায়ে পৌঁছে যান নির্দিষ্ট বাড়ির সদর দরজায়। খিরকির দোরে তখন পাহারা দিচ্ছেন আর এক দল। হতভম্ব বাড়ির লোক দরজা খোলার আগেই দেখেন অনেকে বাড়িতে ঢুকে পড়েছেন। আবু সুফিয়ানের বড় ছেলে ওয়াসিম আক্রম বলে, ‘‘বাড়িতে পাঁচিল টপকেই ঢুকে পড়েছিল ওরা। উঠোনে নেমে জানলার রড থেকে ছাতাটা খুলে তা দিয়ে আমার গায়ে খোঁচা দেয়। তাতেই ঘুম ভাঙে। তত ক্ষণে দরজায় লাথি মারার শব্দও পাচ্ছিলাম। লাথি মেরে দরজা ভেঙেও দেয়। বাবা তখন পিছন দিক দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সে দিকেও পুলিশ ছিল। তারাই বাবাকে ধরে ফেলে।’’
আতিউরের ভাই ইউসুফ বলেন, ‘‘তখন গভীর রাত। আমার এক ভাইয়ের জ্বর। তাকে ঘুম পাড়িয়ে মোবাইল দেখছি, হঠাৎ শুনি পুলিশ ঘরে ঢুকে পড়েছে। আমাকেই প্রথম ধরে। তার পরে আতিউরের ঘরে যায় ওরা। আতিউরকে ঘুম থেকে তুলে ওর ঘরের সব কিছু ওলটপালট করে তল্লাশি শুরু করে। খাতা বা ডায়েরিতে যত ফোন নম্বর লেখা ছিল, সব ছিঁড়ে নিয়ে নেয়। বইপত্র ঘেঁটে দেখে। তার পরে ভাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে চলে যায়। ভাইকে মারধরও করে। ওরা সারা বাড়িও তল্লাশি করেছে।’’
সেখান থেকে এনআইএ ও পুলিশের দল এক এক করে মাইনুল মণ্ডল, আল মামুন কামাল, লিউ ইয়ন, নাজমুস সাকিবের বাড়িতে হানা দেয় তারা। তখন ভোর হয়ে গিয়েছে। কামালের বাড়িতে যখন তারা ঢোকে তখন সকাল ৬টা। পাড়া তখন জেগে গিয়েছে। অনেকে রাস্তাতেও নেমে পড়েছেন। গাড়ি চলাচল অল্প হলেও শুরু হয়েছে। হঠাৎ তাঁরা দেখেন, পাঁচটা গাড়ি রাস্তার উপরে রেখে পায়ে হেঁটে পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা পৌঁছে গিয়েছেন কামালের বাড়ি। সকাল হয়ে গিয়েছে বলে, দ্রুত কামালকে গাড়িতে তুলে চলে যান।
মাইনুলের ভাই আইনুল মণ্ডল বলেন, ‘‘তখন রাত কাটেনি। ভোর হচ্ছে। বাড়ি পুরো ঘিরে ফেলেছিল ওরা। সদর দরজায় দু’এক ঘা দিয়েই ওরা পাঁচিল টপকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। মাইনুলের নাম ধরে ডাকছিল। তার পরে তার ঘরে গিয়ে তাকে ধরে।’’ বাড়ির লোক জানতে চান, কেন মাইনুলকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আইনুলের বক্তব্য, গোয়েন্দারা তখন ফোনে রেকর্ড করা একটি বক্তব্য তাঁদের শোনান। তার পরেই দাদাকে টানতে টানতে মারঘর করতে করতে নিয়ে চলে যায়।’’ এই ভাবেই ধরা হয়েছে বাকি তিন জনকেও। মুর্শিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে কেরলের এর্নাকুলাম থেকে। তাঁর বাড়িতে যখন খবরটা পৌঁছয়, তখন সবে রান্না চাপানো হয়েছিল উনুনে। কিন্তু সেই ভাত আর খাওয়া হয়নি গোটা পরিবারের। জেলা পুলিশ সুপার কে শবরীরাজকুমার বলেন, ‘‘জেলা পুলিশের একটি দল কলকাতা গিয়েছে এবং ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করছে। যাদের আটক করেছে এনআইএ তাঁদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy