বেভকোর নির্দেশ মতো ১০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করাও শুরু করেছেন রাজ্যের বিলিতি ও দেশি মদের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সমস্যা সেই চুক্তির বাংলা বয়ান নিয়ে। সেখানে দেশি মদের নতুন নাম ‘দেশীয় আত্মা’। তবে আবগারি দফতরের দাবি, তারা এই ধরনের ইংরেজি বা বাংলা কোনও নির্দেশিকাই পাঠায়নি। একই সঙ্গে দফতরের দাবি, ইংরেজি বয়ানের এমন অনুবাদ কী ভাবে হল, তা জানা নেই।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
পশ্চিমবঙ্গে দেশি ও বিলিতি মদের মূল ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ রাজ্য আবগারি দফতরের অধীন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন’ (বেভকো) একটি চুক্তি করছে সুরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সেই চুক্তির কিছু শর্ত নিয়ে একটা সময় পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নানা প্রশ্ন থাকলেও তাঁরা তা মেনে নিয়েছেন। বেভকোর নির্দেশ মতো ১০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করাও শুরু করেছেন রাজ্যের বিলিতি ও দেশি মদের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সমস্যা সেই চুক্তির বাংলা বয়ান নিয়ে। সেখানে দেশি মদের নতুন নাম ‘দেশীয় আত্মা’। তবে আবগারি দফতরের দাবি, তারা এই ধরনের ইংরেজি বা বাংলা কোনও নির্দেশিকাই পাঠায়নি। একই সঙ্গে দফতরের দাবি, ইংরেজি বয়ানের এমন অনুবাদ কী ভাবে হল, তা জানা নেই।
চুক্তিপত্রে কী লিখতে হবে, তা জানিয়ে একটি নমুনা ‘টেমপ্লেট’ সুরাবণিকদের পাঠিয়েছে বেভকো। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লেখা একটি চুক্তির বয়ানও পাঠানো হয়। গোল বেধেছে তা নিয়েই। ইংরেজি বয়ানে লেখা হয়েছে, ‘এগ্রিমেন্ট উইথ দ্য রিটেলার অব কান্ট্রি স্পিরিট অ্যান্ড / অর ফরেন লিকার।’ এর বাংলা অনুবাদেই যত গোলমাল। সেখানে সবার উপরে লেখা রয়েছে, ‘দেশীয় আত্মা এবং / অথবা বিদেশী মদের খুচরা বিক্রেতার সাথে চুক্তি।’
এখানেই শেষ নয়। তর্জমার গোটা বয়ান জুড়ে এমন অনেক বাংলা শব্দ রয়েছে, যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ তথা আত্মারাম খাঁচাছাড়া মদ বিক্রেতাদের। চুক্তি করতে হবে বলে ইংরেজিতে ‘এগ্জিকিউট’ শব্দটি রয়েছে। তার বাংলা হয়েছে ‘মৃত্যুদণ্ড’। ইংরেজিতে রয়েছে, ‘টু বি এগ্জিকিউটেড অন ইন্ডিয়ান নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপার অব রুপিজ ১০০ ডেনোমিনেশন।’ তার বাংলা তর্জমা করা হয়েছে, ‘রুপির ভারতীয় নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে / ১০০ টাকা মূল্যমান।’
বয়ান পাওয়ার পরে মদ ব্যবসায়ীদের বেশি করে ভাবাচ্ছে দু’টি শব্দ— ‘দেশীয় আত্মা’ এবং ‘মৃত্যুদণ্ড’। যা নিয়ে চিন্তার চেয়ে বেশি চলছে রসিকতা। মদ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেন লিকার, কান্ট্রি স্পিরিট অ্যান্ড অফ অ্যান্ড অন শপ অ্যান্ড হোটেল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এমন বাংলা তর্জমা দেখে সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি। ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদে ভুল অনেকেরই হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলা পণ্ডিতদের ভাষা। সেটা নিয়ে এমন করাটা আপত্তিকর। এটা বাংলা ভাষার অপমান।’’ মদ ব্যবসায়ী সংগঠনের ওই নেতা আরও বলেন, ‘‘দেশি মদের ভাল বাংলা করতে হলে ‘দেশীয় সুরা’ করতেই পারত। জানি না কোন পণ্ডিত এটা করেছেন! তবে এমন বয়ান পাঠানোর আগে বাংলা ভাষায় বিশেষজ্ঞ কারও সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।’’
আবগারি দফতরের তরফে এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, এটা সম্ভবত কোনও সফটঅয়্যার ব্যবহার করে অনুবাদের ফল। কম্পিউটার ‘স্পিরিট’ মানে ‘আত্মা’ করেছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ভুল যে ভাবেই হোক না কেন, এটা ঠিক যে, পাঠানোর আগে একবার ভাল করে দেখে নেওয়া উচিত ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy