গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নামে কী আসে যায়! এ কথা মহাপুরুষদের। সাধারণের কাছে নাম অনেক কিছু। ভবভূতি, ব্রজগোপাল, ননীবালা, হিরণ্ময়ী, বিশ্বম্ভর থেকে দেবার্ক, ভিকি বুঝিয়ে দেয় চরিত্রদের সময়কাল। আবার দুর্লভকুমারের বাসস্থান যেমন রূপকথা, তেমনই সোহনলাল, মহুল, পলাশদের বাড়ি কোথায়, তা-ও আন্দাজ করা যায়। বিলাসহুল বহুতলে যেমন অমল-বিমল-কমলরা থাকেন না তেমনই বস্তির ঝুপড়িতে মোনালিসা, সুচেতনা পাওয়া কঠিন।
কিন্তু সবাই আছেন যেখানে, সেটি ‘বাংলা’। রাজ্য কিংবা দেশ ভাবলে ভুল হবে।এ বাংলা মদীয় বাংলা। যার আদরের নাম ‘দিশি’।
সবই দিশি। ডাক নাম এক হলেও কৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনামের মতো পশ্চিমবঙ্গে বাংলা মদের নামও শতাধিক। রাজ্য সরকারের আবগারি দফতরের ওয়েবসাইটে ১১৬টি ব্র্যান্ডের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। দিশি মদের ব্র্যান্ড আদিকালেও ছিল। একটা সময় বাজারে খ্যাত ছিল ‘কালী’ মার্কা দিশি। এর পরে ‘অমানুষ’, ‘ঝটকা’ নামেও বাংলা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ব্র্যান্ড বাংলার নাম যেন বহুর মধ্যে ঐক্যের খোঁজ। বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি বাহলি-বলি-টলি এক দেহে লীন।
তালিকায় সবার উপরে ‘ফার্স্ট ডোজ’। ২৮ টাকা দামের ৭০ ডিগ্রি বাংলার ৩০০ মিলিলিটারের বোতল সদ্যই এসেছে বাজারে। এই নামের সঙ্গে করোনা টিকার সম্পর্ক আছে কি না জানা যায়নি। যেমন জানা যায়নি ‘বিরাট’ ব্র্যান্ডের সঙ্গে কোহলীর কোনও যোগ রয়েছে কি না। ওই তালিকায় সৌরভ, শাহরুখ, রাজেশ খন্নার অনুসঙ্গে ‘দাদা’, ‘দাদা প্লাস’ ‘বাজিগর’ এবং ‘বাবুমশাই’ আছেন।
আর ‘বাংলার বাঘ’ পরিচিত নানা নামে। তালিকায় যেমন শুধুই ‘বাঘ’ রয়েছে, তেমনই রয়েছে ‘বেঙ্গল ফাইটার’, ‘বেঙ্গল টাইগার প্রিমিয়াম’। এই বেঙ্গল টাইগারের প্রিমিয়াম প্লাস, স্ট্রং, সুপার প্রিমিয়াম ইত্যাদি রকমফেরও রয়েছে।
বিলিতিতে ‘বিপি’ মানে ‘ব্লেন্ডার্স প্রাইড’। বাংলায় ‘বিপি’ হল‘বেঙ্গলস প্রাইড’। গর্বের বাংলায় ‘ভাই’, ‘বিন্দাস’, ‘বুলবুল’, ‘বুলেট’ থেকে ফিল্মি নাম ‘দিল সে’, ‘দিলওয়ালে’, ‘দোস্তি’, ‘হিরো’, ‘চ্যাম্পিয়ন’, ‘দিলরুবা’, ‘মস্তি’, ‘মর্দানা’ আছে।
নাম শুনে স্বাদও চেনা যায়। যেমন কমলা স্বাদের বাংলা মদের নাম ‘ক্যাপ্টেন অরেঞ্জ’, মহুয়া স্বাদের ‘মহুল’, মিষ্টি মিষ্টি স্বাদের বাংলা মদের নাম‘মোনালিসা মিঠি’। এ ছাড়া‘জয়’, ‘উড়ান’, ‘উল্লাস’, ‘হিমালয়ান টুক টুক’, ‘মধুবনী’ও বাংলার অন্যান্য নাম।
তবে নামে এত বৈচিত্র থাকলেও বিলিতির সহজলভ্যতার তুলনায় দিশি কারণবারি এখন আর ঠিক ‘এলিট’ নয়। ঋত্বিক-শক্তির যুগের যৌবনের উপবন খালাসিটোলা নাকি আর সে ভাবে টানে না একালের ‘খাস’ বাঙালিকে। বাংলা এখন নিছকই গরিবের ‘বাংলু’। তাঁদেরও মন টানে না। ট্যাঁকের টানে যেতে হয় খালাসিটোলায়। সুরাপ্রেমীদের বক্তব্য, বাংলা ‘ব্র্যান্ড’ হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ঝাঁঝ কমে গিয়েছে। এখনকার ৬০ বা ৭০ ডিগ্রির ‘কান্ট্রি লিকার’ যেন ডিগবাজি খাওয়াতে পারে না ঠিকঠাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy