মেয়ে প্রিয়াঙ্কার বিয়ের কার্ড হাতে চন্দনা সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের জন্য ঋণ নিতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু সে টাকা আর শোধ করা হল না মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের নয়ন রায়ের। বৃহস্পতিবার জেলায় বাজ পড়ে অনেকে মারা গিয়েছেন। সেই ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে খেজুরগাছির নয়ন এবং তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার। পরের দিন, শুক্রবারই ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি এসেছিলেন কিস্তির টাকার খোঁজে। চাঁদা তুলে সেই কিস্তি মিটিয়ে দিলেন পড়শিরাই।
ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজারের কথায়, “এমন সচরাচর দেখা যায় না।”
বাড়ির দেওয়ালে এখনও লেখা— ‘শুভ বিবাহ’। মনে করিয়ে দিচ্ছে, মোটে মাস দুয়েক আগে বিয়ে হয়েছে নয়ন-প্রিয়াঙ্কার। তখন বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন নয়ন। বিয়ের খরচ বাদে যা বেঁচেছিল, তাতে হরিশ্চন্দ্রপুরের কুর্সাডাঙিতে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় লিজ়ে জমি নিয়ে পাট চাষ শুরু করেন। ঠিক করেন, পাট উঠলেই ঋণ শোধ করে দেবেন। মাঠে নিড়ানোর কাজ করতেন নিজেই। সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী। শ্বশুর বিমল সিংহ পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি দিল্লি যাবেন। তাই শ্বশুরবাড়িতে যান নয়ন। বৃহস্পতিবার স্ত্রীকে নিয়ে পাট নিড়ানোর কাজে জমিতে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন শাশুড়ি চন্দনা আর শ্যালিকা মঞ্জো। সেখানেই বাজ পড়ে মারা যান নয়ন-প্রিয়াঙ্কা।
তিন ভাইয়ের মধ্যে নয়ন মেজো। দুই ভাই দিনমজুর। তাঁদের পৃথক সংসার। বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়িতে অসুস্থ মা সুমিয়া। ছেলে-বৌমার মৃত্যুসংবাদ শোনার পর থেকেই শোকে পাথর তিনি। এ দিন মৃতদেহ আনতে মালদহ মেডিক্যালে যান পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়েরা। ঘটনাচক্রে, এ দিন সকালে নয়নের বাড়িতে যান ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি। ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তির বারোশো টাকার জন্য।
সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কুশিদা শাখার ম্যানেজার রঞ্জন ঘোষ বলেন, “ঋণ রয়েছে নয়নের মায়ের নামে। আমাদের কর্মী ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। কিস্তি মেটানোয় চাপ দেওয়া হয়নি। ওই পরিবারের পড়শি কয়েক জন মিলে কিস্তির টাকা মিটিয়ে দেন।” নয়নের প্রতিবেশী কল্পনা রায় বলেন, ‘‘আমরাও ওই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছি। সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে হয়। নয়নের বাড়ির সবাই মালদহে গিয়েছিলেন। একেই ওদের পরিবারে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার উপরে ঋণ খেলাপ হলে সমস্যা হতে পারে। তাই কয়েক জন মিলে কিস্তির টাকাটা দিয়ে দিই। মানুষের বিপদে-আপদে এটুকু করব না!’’ আর এক পড়শি সুরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘এই সবে বিয়ে হল। সবাই মিলে কত আনন্দ করেছি। এ ভাবে যে সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেই পারিনি!’’
শোকের ছবি নয়নের শ্বশুরবাড়িতেও। চোখের সামনে মেয়ে-জামাইয়ের মৃত্যু ভুলতে পারছেন না চন্দনা সিংহ। এ দিন পরিবারটির সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান মন্ত্রী তজমুল হোসেন। দুপুরে চন্দনার হাতে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেন বিডিও সৌমেন মণ্ডল। বিডিও বলেন, ‘‘দু’টি পরিবারই যাতে সরকারি সুবিধা পায়, প্রশাসনের তরফে তা দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy