ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকি। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে থেকেই ‘উত্তপ্ত’ হতে শুরু করেছিল ভাঙড়। ভোট ঘোষণার পর থেকে শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে জোর টক্কর হয়েছিল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ)। ভাঙড়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। কিন্তু শনিবার, ভোটের দিন নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে তিনি থাকতে পারলেন না ভাঙড়ে। সম্ভবত সেই কারণেই ভাঙড়ের মাটিতে খানিকটা নাবিকহীন এবং নিষ্প্রভ ঠেকল তাঁর দল আইএসএফ-কে।
নওশাদ আদতে হুগলির ফুরফুরা শরিফের ভোটার। কিন্তু ভোটে লড়ে জিতেছিলেন ভাঙড় থেকে। সেই সময় থেকেই আরাবুল ইসলাম, শওকত মোল্লা বা রেজ্জাক মোল্লাদের ঘাঁটিতে নিজের ‘সাংগঠনিক ভিত’ মজবুত করে উঠে দাঁড়িয়েছেন ‘ভাইজান’। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, উজ্জীবিত করেছেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে নরমে-গরমে বাগ্যুদ্ধেও লড়ে গিয়েছেন। বাক্পটু নওশাদ এই পর্বে অনেক সময়ই স্নায়ুযুদ্ধে হারিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী যুগল শওকত-আরাবুলকে।
ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকতকে ভাঙড়ের রাজনৈতিক জমি উদ্ধারের দায়িত্ব দিয়েছিল তাঁর দল। শওকতের সঙ্গেই এই পর্বে নওশাদের টক্কর চলেছে বেশি। তা চলাকালীনই বিধানসভায় পাশাপাশি দুই বিধায়কের হাসিমুখের ছবি দেখা গিয়েছে। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। নওশাদের মতো শওকতও ভোটের দিন ভাঙড়ে থাকতে পারেননি। কারণ, তিনিও ভাঙড়ের ভোটার নন। তাই মনোনয়ন থেকে প্রচারপর্বে দুই যুযুধানের যে লড়াই ভাঙড় দেখেছে, ভোটের দিন তা ছিল না। অনেকের মতে, এটা তৃণমূলের পক্ষে কিছুটা হলেও ‘সুবিধাজনক’ হয়েছে। কারণ, ভাঙড়ে দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকায় স্থানীয় সাংগঠনিক নেতৃত্ব কিছুটা শক্তপোক্ত। তুলনায় ভাঙড়ের আইএসএফ একটু বেশিই নওশাদ-নির্ভর।
প্রসঙ্গত, ভোটের দিন কয়েক আগে নওশাদের বিরুদ্ধে বিহারে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন এক তরুণী। ভাঙড়ের বিধায়ক অবশ্য বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলেই দাবি করেছেন। ওই তরুণী ইতিমধ্যেই গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তবে অনেকে মনে করছেন, ওই অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল নওশাদের উপর তাদের দলে যোগদানের জন্য পরোক্ষে ‘চাপ’ তৈরি করতে চাইছে।
এই সমস্ত জল্পনার আবহেই ভাঙড় শনিবার পঞ্চায়েতের ভোটে অংশ নিয়েছে। মূলত ভাঙড় ২ নম্বর ব্লক ও ভাঙড় ১ নম্বর ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে ভাঙড় বিধানসভা। ভাঙড়ের দুই ব্লকেই সংগঠন রয়েছে নওশাদের আইএসএফের। কিন্তু ভোটের আগে মনোনয়ন পর্বেই ভাঙড় ১-এর লড়াই আইএসএফ হেরে গিয়েছিল প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায়। শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে আইএসএফের লড়াই ছিল ভাঙড় ২ বিধানসভা এলাকায়। নওশাদের অনুপস্থিতি কি সেই লড়াইয়ে পিছিয়ে রাখল তাঁর দলকে? যদিও আইএসএফের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, ভাঙড় ২ ব্লকের তিনটি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে অন্তত দু’টিতে তাঁরা জিতবেনই। ফল যা-ই হোক, ভোটের সকাল থেকে দু’পক্ষের শরীরী ভাষার ফারাক ছিল স্পষ্ট। ভোটের আগের দিন রাতে বিধায়কের মাজেররাইট এলাকার আইএসএফ অফিসে বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন সকালে দু’জন আইএসএফ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু আইএসএফ কর্মীদের একাংশকে রাস্তায় নেমে ‘পাল্টা প্রতিরোধ’ করতে দেখা গিয়েছে ভোটের একেবারে শেষ বেলায়। নইলে দিনভর খানিকটা ঝিমিয়েই ছিলেন তাঁরা। অন্তত সাম্প্রতিক অতীতের তুলনায়।
ঘনিষ্ঠ মহলে নওশাদ ভোটের দিন ভাঙড়ে হাজির থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও নির্বাচন কমিশনের নিয়মের কারণেই তাঁর বিধানসভা এলাকায় বিধায়কের থাকা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, স্থানীয় ভোটার না হলে কেউ ভোটের দিন পঞ্চায়েত এলাকায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তাই শনিবার সকাল থেকে ফুরফুরা শরিফের বাড়িতেই ছিলেন নওশাদ। বেলা বাড়তে জাঙ্গিপাড়া ব্লকের ফুরফুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯২ নম্বর বুথে ভোট দিতে যান। সেখানেই পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দেন নওশাদ। ভাঙড়-সহ রাজ্যের যে সমস্ত জায়গায় আইএসএফ প্রার্থী দিয়েছে, সেই সব জায়গায় দলের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘‘যে সব অভিযোগ আসছে, তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া হচ্ছে। সেই সব নথি একত্র করে আগামী দিনে কী করা যায়, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy