বক্সার জঙ্গলে আদৌ বাঘ রয়েছে কি না, তা নিয়ে অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন মহলে আশঙ্কা দানা বেঁধেছিল। সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে এনটিসিএ বা ন্যাশনাল টাইগার কনজার্ভেশন অথরিটি তাদের রিপোর্টেও জানিয়ে দিল সে কথা। তবে রাজ্যের বনকর্তারা তা মানতে নারাজ। বরং, বক্সায় বাঘ রয়েছে ধরে নিয়েই সোমবার আলিপুরদুয়ারের এই জঙ্গলে ঘটা করে পালন করা হল বাঘ দিবস।
সম্প্রতি সিকিমে ১১ হাজার ফুট উচ্চতায় বাঘের দর্শন মিলেছে। বন্যপ্রাণপ্রেমীরা তাতে খুবই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেই জানা গেল, কেন্দ্রীয় সংস্থা এনটিসিএ জানাচ্ছে, বক্সায় বাঘ নেই।
এর আগে ২০১০ সালে এনটিসিএ-র রিপোর্টে নর্দার্ন ওয়েস্টবেঙ্গলে বাঘের সংখ্যার জায়গাটি ফাঁকা রাখা ছিল। ২০১৪ সালের রিপোর্টে অবশ্য ওই কলামে তিনটি বাঘের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সোমবার ২০১৮ সালে পেশ করা রিপোর্টে বাঘের সংখ্যা শূন্য দেখানো হয়েছে। তাতে শুরু হয়েছে বিতর্কও।
রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল বন্যপ্রাণ রবিকান্ত সিংহ বলেন, “এনটিসিএ-র গণনা নির্দিষ্ট সময়ে করা হয়। সেই সময় বাঘের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গণনা সাত দিন, দশ দিন ধরে হয়। তার মধ্যে যা তথ্য পাওয়া যায়, তার উপরে রিপোর্ট হয়। তার মানে এটা নয় যে, এখানে বাঘ নেই। সুন্দরবনেও ৮৮টি বাঘ রয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তবে আমাদের ফিল্ড রিপোর্টে সেখানে তার চেয়ে বেশি বাঘ রয়েছে। এনটিসিএ-র যেদিন গণনা হয় সেই সময় ৮৮টি পাওয়া যায়।”
রবিকান্ত দাবি করেন, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে একটি বাঘ রয়েছে। তিনি জানান, একটি বাঘকে বাঁচিয়ে রাখতে বন দফতরের তরফে নানা চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চোরাশিকারিদের ভয় থাকায় বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বেশি প্রচার করতে চান না। রবিকান্তবাবু বলেন, ২০০২ সালে তিনি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে ক্ষেত্র অধিকর্তা হিসেবে থাকার সময় একটি বাঘ মারা গিয়েছিল।
তবে এই বির্তকের মাঝেই ২৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসে নানা অনুষ্ঠান হল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে। জয়ন্তীতে বনকর্মী থেকে টুরিস্ট গাইড ও স্কুল পড়ুয়ারা মিছিলে অংশ নেন। রাজাভাত খাওয়া স্কুল পড়ুয়াদের বাঘ নিয়ে প্রকৃতি বিক্ষণ কেন্দ্র তথ্য চিত্র দেখানো হয়। তবে যেখানে জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কমিটি তাদের রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছে যে বক্সায় বাঘ নেই, সেখানে এ ধরনের অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় জনবসতি থাকায় বাঘ থাকার সম্ভাবনা কম। আধিকারিকদের একাংশও বলছেন, বাঘ নির্জন এলাকায় থাকতে পছন্দ করে।
রবিকান্ত জানান, বাঘ গভীর জঙ্গলে থাকে। অসম থেকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আনার পরিকল্পনা রয়েছে। বন দফতর চেষ্টা করছে জঙ্গলের বিভিন্ন বনবস্তিগুলিকে বাইরে নিয়ে আসতে। তার প্রক্রিয়াও চলছে। তবে রাজ্য সরকারের স্পষ্ট নীতি যে জোর করে কাউকে বের করা হবে না। স্বেচ্ছায় যাঁরা বাইরে আসতে চাইবেন, তাঁদের সাহায্য করা হবে। বিষয়টি নিয়ে ডব্লিউআইআইয়ের একটি দল বক্সায় কাজ করছে। তবে জয়ন্তী ও ভুটিয়া বনবস্তির বিষয়টি ইতিবাচ বলে মনে হচ্ছে।
তবে জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সরাসরি সংঘাতে যেতে চাইছেন না রাজ্য বন দফতর।
ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘বছর দু’য়েক আগে নেওড়াভ্যালিতে বাঘের ছবি পাওয়া গিয়েছিল। তা কেন এনটিসিএ-র রিপোর্টে প্রতিফলিত হয়নি? এনটিসিএ কি রিপোর্ট পায়নি? না কি, এনটিসিএ তা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy