Advertisement
E-Paper

জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনের নজরে সিপিআর কর্মসূচি

সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনও দেশের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়া-চিকিৎসক, এমনকি হাসপাতালে আসা সাধারণ মানুষের জানার জন্য সিপিআর-এর প্রচার কর্মসূচিতে জোর দিয়েছে।

An image of Heart Attack

—প্রতীকী চিত্র।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৪
Share
Save

‘কার্ডিয়োপালমোনারি রিসাসিটেশন’ বা সিপিআর, আচমকা হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণ বাঁচাতে যা অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতি জানেন, এ দেশে এমন সাধারণ মানুষের সংখ্যা মাত্র দুই শতাংশ! আকস্মিক মৃত্যু ঠেকাতে এই পরিসংখ্যানের পরিবর্তন জরুরি বলেই মত হৃদ‌্‌রোগ চিকিৎসকদের।

তাই, সম্প্রতি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনও দেশের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়া-চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী, এমনকি হাসপাতালে আসা সাধারণ মানুষের জানার জন্য সিপিআর-এর প্রচার কর্মসূচিতে জোর দিয়েছে। হৃদ‌্‌রোগ চিকিৎসক ধীমান কাহালির কথায়, ‘‘উন্নত দেশগুলিতে ৪৫-৫০ শতাংশ সাধারণ মানুষ সিপিআর সম্পর্কে জানেন। সেখানে আমাদের দেশে মাত্র ২ শতাংশ মানুষ জানেন। যার ফলে এখানে হাসপাতালের বাইরে আকস্মিক মৃত্যুর হার অনেক বেশি।’’ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরের তিন মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পরে যত সময় যায়, ততই রোগীর মস্তিষ্কে প্রভাব পড়তে শুরু করে। সেখানে সিপিআর জানা থাকলে শুধু রাস্তাঘাটে নয়, বাড়ির কেউ আচমকা হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হলে তাঁকেও প্রাথমিক সাহায্য করা সম্ভব।

হৃদ‌্‌রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘রোগী হঠাৎ অস্বস্তি বোধ করছেন, চোখে অন্ধকার দেখছেন এবং ক্রমশ এলিয়ে পড়ছেন দেখলে বুঝতে হবে তিনি হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তৎক্ষণাৎ গলার পাশে ক্যারোটিড ধমনী বা হাতের পালস রেট দেখে, সিপিআর শুরু করতে হবে।’’ এনএমসি-র সিপিআর প্রচার কর্মসূচিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নোডাল অফিসার, চিকিৎসক দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী জানান, সিপিআরের
দু’টি মূল উপাদান হল রোগীর বুকে চাপ দিয়ে হৃদ‌্‌যন্ত্রের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা এবং তাঁর মুখে মুখ দিয়ে (মাউথ-টু-মাউথ) ফুসফুসে বাতাস পাঠানো। যদি দেখা যায়, শ্বাস নিচ্ছেন না অথচ নাড়ির গতি মিলছে, তা হলে মুখ দিয়ে বাতাস পাঠানোর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। আর, যদি দু’টিই বন্ধ থাকে, তৎক্ষণাৎ বুকে চাপ দিতে হবে। লাইফগার্ড প্রশিক্ষক উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আচমকা হৃদ্‌যন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের কাজ করা বন্ধ হলে এই পদ্ধতিতে শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন চলাচল স্বাভাবিক করা যায়। তাতে প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ রোগীকে বাঁচানো যায়।’’

বর্তমানে অত্যাধিক মানসিক চাপ হৃদ‌্‌রোগে আক্রান্তের আশঙ্কাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সেই প্রেক্ষিতে দেশ জুড়ে বিনামূল্যে সিপিআরের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে মনিপাল হাসপাতাল। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব হার্ট দিবসে মাত্র এক দিনে দেশের প্রায় ৩৩টি শহর থেকে ২৪ হাজার মানুষ প্রশিক্ষণের জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন। জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে প্রায় ১২০০ জন অংশ নিয়েছেন। সব থেকে বেশি অংশ নিয়েছেন দিল্লি থেকে। বিষয়টি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নথিভুক্ত হয়েছে।

বেঙ্গালুরুতে তারই শংসাপত্র প্রদানের এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক কপিলদেব বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, হৃৎপিণ্ড কখনও বিশ্রাম নেয় না। সেটি সারাক্ষণ কাজ করে বলেই আমরা বেঁচে থাকি। তাই সিপিআর যদি শিখে রাখা যায়, তা হলে যে কোনও মানুষ অন্যের প্রাণ বাঁচাতে পারেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPR Heart Attack National Medical Commission

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}