—ফাইল চিত্র।
পাহাড়ে বিজেপির অন্দরে ভূমিপুত্র-বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন খোদ দলীয় বিধায়ক! দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ বার দার্জিলিং লোকসভা আসনে বাইরের কোনও মুখকে ভোটে লড়তে দেওয়া যাবে না। প্রার্থী করতে হবে ভূমিপুত্রকেই! বিধায়কের এই দাবিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে দলের অন্দরে মন্থন শুরু হয়েছে। সেই আবহে এলাকায় জনসংযোগে মন দিতে দেখা গেল দেশের প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে! ঘটনাচক্রে, গত বছর থেকেই শ্রিংলার নাম নিয়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে জল্পনা শুরু হয়েছে। ভূমিপুত্র হওয়ায় তাঁকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং আসন থেকে প্রার্থী করা হতে পারে বলেও দাবি করেছিলেন পাহাড়ে দলের একাংশ।
শ্রিংলা শিলিগুড়ির প্রধাননগরের বাসিন্দা। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ভোট যত এগিয়ে আসছে, এলাকার আরও ‘সক্রিয়’ হচ্ছেন প্রাক্তন এই আমলা। পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলের শিলিগুড়িতে তাঁকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, কখনও প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে, কখনও আবার শহরের চায়ের দোকানে স্থানীয়দের সঙ্গে আড্ডাও দিচ্ছেন। শুক্রবার শিলিগুড়ির কাছে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন শ্রিংলা। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রায়ই শিলিগুড়ি আসি। ছোটবেলায় এই মহানন্দা নদীর পাড়ের খেলাধুলো করে বেড়ে উঠেছি। চায়ে পে চর্চায় যোগ দিচ্ছি। জনসংযোগ বাড়াচ্ছি। আজ বহু অনুষ্ঠানেও যেতে হবে।’’
পাহাড়ে বিজেপি সূত্রে খবর, দলের একাংশ চাইছেন না, বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্তাকেই আবার প্রার্থী করা হোক। তাঁরা এ বার ‘ভূমিপুত্র’কেই চাইছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিষ্ণুপ্রসাদ। অন্য দিকে, রাজুও ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁকেই দার্জিলিং আসন থেকে আবার প্রার্থী করা হতে পারে। এ সব নিয়ে পাহাড়ে কার্যত আড়াভাড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে দল। তার মধ্যেই আবার শ্রিংলার নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। দলেরই একাংশের দাবি, বিদেশসচিব পদে থাকার সময় থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘সুনজরে’ শ্রিংলা। সব দিক দেখে তাঁকে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দেশের ‘চিফ কোঅর্ডিনেটর’ও করা হয়েছিল। ফলে দার্জিলিং আসনের জন্য যাঁদের কথা ভাবা হয়েছে, সেই তালিকায় শ্রিংলার নাম থাকা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। বরং, সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে প্রাক্তন এই আমলার এগিয়ে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে— তিনি দার্জিলিং জেলার আদি বাসিন্দা।
লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে এখনই সরাসরি প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না শ্রিংলা। শুক্রবারও তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তত্ত্বাবধানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বিদেশসচিবের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি জি২০-র দায়িত্ব পাওয়া সবটাই, প্রধানমন্ত্রীর জন্য হয়েছে। এটা আমার সৌভাগ্য যে, মোদীজির মতো মহাপুরুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমি এখন শিকড়ের কাছে এসেছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘জনসংযোগ রাখা উচিত। আমাকে শিলিগুড়িতে বা দার্জিলিঙে থাকতে হলে সকলের মাঝে সকলকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। আপাতত ভাবে সামাজিক কাজে নিজেকে যুক্ত করেছি।’’
দলীয় সূত্রে খবর, দার্জিলিং আসনের জেতা-হারা বরাবর পাহাড়ের একটি বড় অংশের ভোটের উপর নির্ভর করে থাকে। দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং, মিরিকে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান, সাধারণত তিনিই জেতেন। স্থানীয়দের বদলে বাইরে থেকে ‘পরিচিত নামে’র কাউকে এই আসনে দাঁড় করানো আশির দশকের পর থেকে শুরু হয়। ইন্দ্রজিৎ খুল্লার, যশোবন্ত সিংহ, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, রাজু বিস্তা শেষ সংযোজন। এই আসনের জন্য বিজেপি গত বারের ভোটে রাজুর পাশাপাশি দেশের জনপ্রিয় এক ধর্মগুরুর নাম নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। একাধিক বার পাহাড়ে এলেও শেষ অবধি তিনি দাঁড়াননি। এ বার শ্রিংলার নাম নিয়ে সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। পাহাড়ের নেতারা জানান, ভূমিপুত্র হওয়ার কারণে শ্রিংলার দার্জিলিং পাহাড়ে পরিচিতি রয়েছে। আত্মীয়েরা ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি কূটনীতিক হিসাবে গত কয়েক দশকে যে কাজ করেছেন, তাকেও বিবেচনার মধ্যে রাখছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। বিশ্ব পরিভ্রমণ করে শ্রিংলার মধ্যেও যে শিকড়মুখী হওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে, তা-ও দলীয় নেতৃত্বের নজরে রয়েছেন বলে দাবি বিজেপির ওই সূত্রের।
শ্রিংলার ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, প্রাক্তন বিদেশসচিবের বাবা হিন্দু, মা বৌদ্ধ। তার ফলে পাহাড়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের জন্য নিজের বেশ কিছু ভাবনাচিন্তার কথাও ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন। সে রকমই এক ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘হর্ষবর্ধনবাবু মনে করেন, উত্তরবঙ্গের জন্য এমন পরিকল্পনা দরকার, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই ভাবে মানুষের কাজে লাগবে। কিছু কাজ উনি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। আরও অনেক পরিকল্পনা ওঁর মাথায় রয়েছে। সুযোগ পেলে উনি নিশ্চয়ই তা বাস্তবায়িত করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy