মুকুল রায় ও মহম্মদ হোসেন মির্জা। ফাইল চিত্র।
মুকুল রায়কে তাঁরই ফ্ল্যাটের সোফায় বসিয়ে, ধৃত পুলিশ কর্তা সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকে সেই ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে, নারদ-এর ‘টাকা লেনদেনের’ পুনর্নির্মাণ করল সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, মির্জা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, মুকুল রায়ের এলগিন রোডের চারতলার ওই ফ্ল্যাটেই তিনি টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন। যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্রের পাল্টা অভিযোগ করেছেন প্রাক্তন তৃণমূল এবং বর্তমানে বিজেপি নেতা মুকুল।
গত কয়েক দিন ধরেই একের পর এক নাটকীয় মোড় প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে চলা নারদ তদন্তে। শুক্রবার রাজ্য পুলিশের কর্তা আইপিএস মির্জাকে গ্রেফতার; মির্জাকে আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর, ওই দিনই বিকেলে মুকুলকে তলব; তিনি সময় চাইলে তা না দিয়ে ফের পরের দিন নোটিস; শনিবার মুকুলকে জেরা মির্জার মুখোমুখি বসিয়ে। আর শনিবার রাত কাটতেই, মির্জাকে নিয়ে মুকুলের ফ্ল্যাটে হাজির হন সিবিআই কর্তারা।
সিবিআই কর্তাদের স্পষ্ট ইঙ্গিত, মির্জা সিবিআইকে জানিয়েছেন— মুকুলের নির্দেশেই ছদ্মপরিচয় দেওয়া ম্যাথুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর ওই এলগিন রোডের ফ্ল্যাটে। আর ওই দিন ঠিক কী ভাবে সেখানে তিনি পৌঁছেছিলেন, মির্জার বয়ান অনুযায়ী ফ্ল্যাটে মুকুল কোথায় ছিলেন, কী ভাবে টাকার লেনদেন হয়— গোটা ‘ঘটনাক্রম’-এর পুনর্নির্মাণ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। তাঁরা প্রায় চল্লিশ মিনিট ওই ফ্ল্যাটে কাটান। এক সিবিআই আধিকারিক বলেন, ‘‘মুকুল রায়ও ফ্ল্যাটে ছিলেন। তাঁকে আমরা আগেই জানিয়েছিলাম যে আমরা পুনর্নির্মাণ করব। তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন।”
আরও পড়ুন: খড়দহে বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার দম্পতির দেহ, লুঠে বাধা পেয়ে খুন, অনুমান পুলিশের
আরও পড়ুন: পুজোর আগে শেষ রবিবার, কেনাকাটায় বাধা হতে পারে বরুণাসুর, কালও বৃষ্টির পূর্বাভাস
এ দিন দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ যখন মুকুল রায়ের ফ্ল্যাটে মির্জাকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছন সিবিআই আধিকারিকরা, তখন ধৃত পুলিশ কর্তাও বেশ খোস মেজাজেই ছিলেন। রীতিমতো পকেটে হাত দিয়ে সিবিআইয়ের সঙ্গে হেঁটে লিফটে উঠতে দেখা যায় তাঁকে। চেক জামা পড়া এসএমএইচ মির্জাকে প্রশ্ন করলে তিনি হাসি মুখে বলেন, ‘‘কেসের আইও (তদন্তকারী অফিসার) সঙ্গে আছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করুন।” আবাসনে মির্জার ঢোকা থেকে শুরু করে লিফট থেকে নামা এবং তার পর ফ্ল্যাটে ঢোকা— সবটাই ভিডিয়োগ্রাফি করেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সব মিলিয়ে হঠাৎ করেই নতুন করে মোড় ঘুরেছে নারদ তদন্তের। এর আগে তদন্তকারীদের একটি অংশই ইঙ্গিত দিয়েছিল, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই টাকা নেওয়ার। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় মির্জা গ্রেফতার হওয়ার পরই।
রাজ্যের পুলিশ মহলে অনেকেই জানেন তৃণমূলে থাকাকালীন মির্জার সঙ্গে মুকুলের ঘনিষ্ঠতার কথা। তৃণমূলে থাকাকালীন মুকুল দলের তরফে দীর্ঘদিন রাজ্য পুলিশ ‘তদারকি’-র দায়িত্বে ছিলেন।
অন্য দিকে সিবিআই সূত্রে খবর, গোটা স্টিং অপারেশনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ম্যাথু স্যামুয়েল নিজে তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে— তিনি মুকুল বাবুর নির্দেশেই মির্জাকে টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন। গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করতে সিবিআই ম্যাথুকেও ডেকে পাঠিয়েছে। তাঁকেও মুকুল এবং মির্জার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই।
তবে গোটা ঘটনাক্রমকেই ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। এ দিন টাকা ‘লেনদেনের’ ঘটনাক্রম পুনর্নির্মাণের পর মুকুল দাবি করেন, ‘‘এটা গোটা তদন্তে একটি রুটিন কাজ।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনও ভিডিয়ো ফুটেজ বা ছবিতে দেখা যায়নি যে আমি টাকা নিয়েছি। যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে আমি তৈরি।” তবে মির্জার বয়ান থেকে যে নারদ তদন্তে জমে থাকা অনেক রহস্যের জট ছাড়ছে তা স্বীকার করছেন সিবিআই আধিকারিকরা। তাই এ দিন সিবিআইয়ের ওই পুনর্নির্মাণ অভিযান রুটিন নয়, বরং তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy