Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Narada Scam

Narada case : টানটান সওয়াল জবাবে বার বার উঠল মমতার ধর্না, প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওড়াল তৃণমূল

সিবিআই-এর দাবি, প্রভাব খাটাতেই ওই ধর্না। তৃণমূলের আইনজীবীরা পাল্টা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী শুধু সতীর্থদের সহানুভূতি দেখাতেই গিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ১৮:০৫
Share: Save:

জামিন নিয়ে সওয়াল জবাবের মধ্যে বুধবারের শুনানিতে বার বার উঠল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না প্রসঙ্গ। কেন মমতা সোমবার কলকাতার সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন, কেন ৫-৬ ঘণ্টা ছিলেন তা নিয়ে চাপানউতর চলে শুনানিতে। সিবিআই-এর দাবি ছিল, প্রভাব খাটাতেই ওই ধর্না। অন্য দিকে, গ্রেফতার হওয়া নেতা-মন্ত্রীদের আইনজীবী সেই দাবির বিরোধিতা করে জানান, মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র সতীর্থদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতেই ওখানে গিয়েছিলেন।

গত সোমবার ব্যাঙ্কশাল আদালত মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন মঞ্জুর করলেও পরে তা নাকচ করে হাই কোর্ট। সেই রায় বহাল থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে বুধবার দুপুর ২টো থেকে হাই কোর্টে ভার্চুয়াল শুনানি শুরু হয়। মাঝে ৫ মিনিটের বিরতি-সহ শুনানি চলে প্রায় বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত। এর পরে আদালত জানায়, বৃহস্পতিবার এই মামলার ফের শুনানি হবে। এর ফলে আপাতত জেল হেফাজতেই থাকতে হচ্ছে ৪ জনকে। যদিও চিকিৎসার জন্য ফিরহাদ ছাড়া বাকিরা এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। ফিরহাদ অসুস্থ হলেও প্রেসিডেন্সি জেলের হাসপাতালেই বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির গোড়া থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে জোর সওয়াল জবাব চলে। ফিরহাদ, সুব্রত, মদন ও শোভনের জামিন চেয়ে সওয়াল করেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, সিদ্ধার্থ লুথরা, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য আইনজীবীরা। অন্য দিকে, সিবিআই-এর তরফে জামিনের বিরোধিতা করেন আইনজীবী তুষার মেহতা এবং ওয়াই জে দস্তুর।

বুধবার দু’টি মামলার যৌথ শুনানি ছিল। গ্রেফতার হওয়া ৪ নেতা-মন্ত্রীর জামিনের মামলা ছাড়াও সওয়াল জবাব চলে নারদ-মামলা ভিন্‌রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার মামলা নিয়েও। পশ্চিমবঙ্গে এই মামলা থাকলে প্রভাব খাটানো হতে পারে বলে দাবি জানায় সিবিআই। উঠে আসে গ্রেফতারের দিন নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না প্রসঙ্গ। যদিও এর জবাবে সিঙ্ঘভি দাবি করেন, সিবিআই দফতরে মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার সঙ্গে প্রভাবের কোনও সম্পর্ক নেই।

বুধবার শুনানির শুরুতেই অভিযুক্তদের সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার দাবি জানান তুষার। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁদের হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করার সুযোগ দেওয়া হোক।’’

পাল্টা সিঙ্ঘভি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বিনা নোটিসে কী ভাবে গ্রেফতার করা হল?’’ অন্তর্বর্তী জামিনের উপর এ ভাবে আসা মামলা আগে ঘটেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে করোনা-কালে গ্রেফতার নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে তিনি বলেন, ‘‘সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিধায়ক। তাঁর বয়স ৭৫ বছরের বেশি। কোভিড পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁকে আটকে রাখা যায় না।’’

অন্য দিকে, সিবিআই প্রশ্ন তোলে, মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীরা আইনি কোনও অনুমতি নিয়ে কি নিজাম প্যালেসে গিয়েছিলেন? এর জবাবে সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের পাশে থাকতে এবং সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

বুধবারের শুনানিতে মুখ্যমন্ত্রীর নিজাম প্যালেসে উপস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ সওয়াল জবাব চলে। দল বেঁধে মুখ্যমন্ত্রী আরও লোকজন নিয়ে সিবিআই দফতরে ঢুকে যান, তাঁকেও গ্রেফতারের দাবি জানান এবং ধর্নাতেও বসে যান বলে দাবি করে সিবিআই। এটাকে নজিরবিহীন বলেও আদালতকে জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী। তুষার বলেন, ‘‘এটা সাধারণ মামলা নয়। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসছেন। এটা কি হতে পারে? এর পর সাধারণ গ্রেফতারেও তো এটা ধারা হয়ে যাবে।’’

আরও পড়ুন:

এর জবাবে সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘এ রকম অনেক মামলায় বিক্ষোভ হয়। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জড়িত ঘটনায় মানুষের ক্ষোভ থাকেই। এটা ঠিকই এ ধরনের বিক্ষোভ দেখানো উচিত নয়। তবে এই বিক্ষোভকে যে ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা-ও ঠিক নয়।’’ সিঙ্ঘভি এমনটাও বলেন যে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অশান্তি হয়নি। বরং, তিনি এবং অন্য বিধায়কেরা অশান্তির বিরোধিতা করেন। তাঁরা কর্মীদের বার বার শান্ত থাকতে বলেন। কোনও প্ররোচনা দেওয়ার উদাহরণ নেই। আসলে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সহকর্মী। তাই হয়তো মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে।’’

এই সওয়াল জবাবের মধ্যেই বিচারপতিদের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী কেন ৫-৬ ঘণ্টা নিজাম প্যালেসে ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। শুনানি চলাকালীন নিম্ন আদালতে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক কেন গিয়েছিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে আদালতে। প্রধান বিচারপতি এমনটাও বলেন যে, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে আসা যেত।’’ এর পরে সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘সিবিআই দফতরে মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ায় কোনও প্রভাব খাটানো হয়েছে বলে মনে করি না। এটি কেন্দ্রীয় সংস্থার দফতর। মুখ্যমন্ত্রী যদি কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশের দফতরে বসে থাকতেন, তা হলে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগ মানা যেত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE