রেললাইনহীন নন্দীগ্রাম স্টেশন।—নিজস্ব চিত্র।
দিনের আলোর মুখ দেখতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের নন্দীগ্রাম-দেশপ্রাণ রেল প্রকল্প। কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের জোট থেকে তৃণমূল বেরিয়ে আসার পর নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প রূপায়ণের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে এ বার নতুন করে এই প্রকল্পটি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। বুধবার এলাকা পরিদর্শনে এসে প্রকল্প ফের চালুর কথা জানালেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অনিলকুমার মিশ্র।
রেল সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পের কাজ পুনরায় চালু করার সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করেছিল রেলওয়ে বোর্ড। তমলুকের (তৃণমূল) সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীও গত এপ্রিল মাসে জানিয়েছিলেন, ওই প্রকল্প শুরু করার আবেদন জানিয়ে তিনি যে চিঠি দিয়েছিলেন রেল মন্ত্রককে, তাতে সাড়া মিলেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন সাংসদ। তার পর বুধবার এলাকা পরিদর্শনে এসে রেলের আধিকারিক অনিলকুমার জানান, নন্দীগ্রাম-দেশপ্রাণ রেল প্রকল্পের দৈর্ঘ ২২ কিমি লম্বা। এর মধ্যে ১৮.৫ কিলোমিটার রেললাইনের কাজ হবে নন্দীগ্রাম থেকে। দেশপ্রাণ স্টেশনের আগে দিঘা-তমলুক রেললাইনের সঙ্গে তা সংযুক্ত হবে। জিএম বলেন, ‘‘কিছু সময়ের জন্য প্রকল্পটি ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন নতুন করে এই প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই একটি এজেন্সি কাজ শুরু করেছে। যেখানে জল নেই, সেখানে কাজ শুরু হবে আগে। কিছু জায়গায় অধিগৃহীত জমিগুলিকে নতুন করে চিহ্নিত করতে হবে। তার পর নন্দীগ্রামের দিক থেকে দেশপ্রাণ অভিমুখে কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
কত দিনে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ? এই প্রশ্নের জবাবে অনিল বলেন, ‘‘১৮.৫ কিলোমিটারের অনুমোদন মিলেছে। সময় তো লাগবেই। তবে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করছি। যত শীঘ্র সম্ভব এই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করার বিষয়ে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতার উদ্যোগে দেশপ্রাণ নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পটির সূচনা হয়। এই লাইনটি যুক্ত হচ্ছে দিঘা তমলুক রেল লাইনের দেশপ্রাণ স্টেশনের কাছে। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ থেকে লাইনের জায়গায় মাটি ভরাট, একাধিক ওভারব্রিজ এবং নন্দীগ্রাম স্টেশনের কাজও অনেকটাই এগিয়ে যায়। কিন্তু মাঝপথে মমতা ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর এই প্রকল্পটিকে ক্রমেই ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একটা সময় প্রকল্পটিকে সম্পূর্ণ স্থগিত করে দেওয়া হয়। স্থানীয়েরাও আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার ঘোষণার পর এ বার নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন এলাকাবাসীরা।
রেল প্রকল্পের জন্য এলাকাবাসীদের অনেকেই জমি দিয়েছিলেন। তাঁদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প রূপায়িত না হওয়ায় সেই চাকরি মেলেনি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে অনিলকুমার শুধু বলেন, ‘‘এই বিষয়ে রেল ভাবনাচিন্তা করছে।’’ এ প্রসঙ্গে পরে ‘জমিহারা’ শুভজিৎ জানা বলেন, ‘‘ওঁরা দেখে চলে গেলেন। কেউ বলেননি, আমাদের চাকরি দেওয়া হবে! জমি অধিগ্রহণের সময় আমাদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমরা অপেক্ষা করে রয়েছি এই প্রকল্পের জন্য। চাকরির দাবিতে আমরা দীর্ঘ আইনি লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছি। লাইনের কাজ শুরু হলে আমাদের চাকরি হবে বলেই আশা করছি।’’
এ ব্যাপারে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য অভিজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘রেল তার নিজস্ব পদ্ধতিতে কাজ শুরু করবে। আমরা আশাবাদী, অতি শীঘ্রই নন্দীগ্রামের মানুষ রেলের পরিষেবা পাবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুল পরিকল্পনার জন্য প্রকল্পটি প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইচ্ছায় সেই প্রকল্প পুনরায় বাস্তবায়িত হতে চলেছে।’’ পাল্টা তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প ও জেলিংহাম প্রকল্পকে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল বিজেপির সরকার। এখন লোকসভা ভোট সামনে চলে আসায় হঠাৎ করে নন্দীগ্রামের কথা মনে পড়েছে।’’ নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের নেতা সুফিয়ানের সংযোজন, ‘‘এই রেল প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ছিল। কিন্তু বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই এই প্রকল্পের জমিদাতাদের চাকরি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই নিয়ে ভূরি ভূরি মামলা চলছে। সে সবের নিষ্পত্তি না করেই হঠাৎ করে রেলের কাজ শুরু করার বার্তা দিচ্ছেন আধিকারিকেরা এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যেরই নজির গড়বে। বিজেপির কোনও ক্রেডিট নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy