Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dilip Ghosh

বিজেপিতে দিলীপ আরও কোণঠাসা কি! লোকসভা নির্বাচনে ঘোষকে নিয়ে কী ভাবছেন গেরুয়া নেতৃত্ব?

রাজ্য বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কী ভাবে কাজে লাগাবে, তা নিয়ে এখনও অনেক ধোঁয়াশা। মঙ্গলবারের বৈঠকে আসেননি দিলীপ। তিনি নাকি দায়িত্ব না পেলেই খুশি হবেন!

Name of Dilip Ghosh is not in Lok Sabha Election 2024 management team of state BJP.

দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩০
Share: Save:

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রাজ্য সভাপতি পদ গিয়েছিল দিলীপ ঘোষের। তার বিনিময়ে অবশ্য সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ পেয়েছিলেন। তবে পরে আচমকাই তাঁকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে দিলীপ এখন রাজ্য বিজেপির কোনও পদে নেই। সংগঠনে দায়িত্বমুক্ত দিলীপ এখন শুধুই এক জন সাংসদ। যদিও রাজ্য নেতৃত্ব বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে বৈঠকে ডাকেন। কারণ, তিনি কোনও পদে না-থাকলেও রাজ্য বিজেপির কোর কমিটিতে রয়েছেন। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো ঘটনা দেখা গেল সদ্য তৈরি হওয়া বিজেপির লোকসভা নির্বাচন কমিটির দায়িত্ব ভাগের তালিকায়। সেখানে কোথাও নেই দিলীপের নাম।

মঙ্গলবার নিউ টাউনের একটি হোটেলে দিনভর বৈঠক হয় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের। মূলত লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনা হয়। সেখানেই ঘোষণা করা হয় আগে থেকে তৈরি করা নির্বাচন পরিচালন কমিটি। মোট ১০১ জন সদস্য থাকছেন কমিটিতে। তাঁদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে ৩৫টি বিভাগ। সেই সব বিভাগের প্রধানদের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কোথাও দিলীপের নাম নেই। ওই তালিকায় তাঁর নাম থাকার কথাও নয়। একই সঙ্গে লোকসভা যোজনার শীর্ষ নেতৃত্বের তালিকাও তৈরি হয়েছে। রাজ্যের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত চার কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, অমিত মালব্য এবং আশা লাকড়ার নাম রয়েছে সকলের উপরে। এর পরে পাঁচ সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো, অগ্নিমিত্রা পাল, দীপক বর্মণ এবং জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামও রয়েছে। মোট ১৩ জনের তালিকায় রয়েছেন দুই সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং সতীশ ধন্দ। সেখানেও নেই দিলীপের নাম।

মঙ্গলবারের বৈঠকে অবশ্য ডাক পেয়েছিলেন দিলীপ। তবে তিনি সেই বৈঠকে যোগ না দিয়ে চলে যান গঙ্গাসাগরে। দলকে জানিয়ে দেন, আগেই ঠিক করা সাগর সফরের জন্য তিনি বৈঠকে হাজির থাকতে পারছেন না। মঙ্গলের বৈঠকে গরহাজিরার জন্যই কি কোনও তালিকায় নেই দিলীপের নাম? এ নিয়ে স্বয়ং দিলীপকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনও তালিকা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমার নিজের কেন্দ্র নিয়ে তো ব্যস্ত থাকতেই হবে, এর পরে দল আমায় যেখানে যেতে বলবে, যা বলবে সবই করব।’’

কিন্তু দিলীপের নাম নেই কেন? এ নিয়ে রাজ্য বিজেপির কোনও নেতাই মুখ খুলতে নারাজ। সকলেই ওই তালিকা প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কারণ, দলের সিদ্ধান্ত, নির্বাচন পরিচালনার কমিটি এখনই প্রকাশ্যে আনা হবে না। তবে রাজ্যের এক নেতা একান্তে বলেন, ‘‘দিলীপদার নাম কোনও তালিকায় রাখতে হয় নাকি! উনি এই রাজ্যে বিজেপির সবচেয়ে সফল নেতা। দায়িত্ব নেওয়ার পরে দু’টি নির্বাচনে নিজে জিতেছেন, অন্যকে জিতিয়েছেন। তাঁর জমানাতেই বিজেপির সাংসদ সংখ্যা ১৮ হয়েছে। বিধায়ক সংখ্যা দুই থেকে ৭৭-এ পৌঁছেছে। উনি অভিভাবক হিসাবে সবেতেই থাকবেন।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘এখনও তো দল পুরোপুরি কমিটি ঘোষণা করেনি। সেটা হলে তখন দেখবেন! আর দিলীপদা আমাদের তারকা প্রচারকদের অন্যতম হবেন। কারণ, তিনি জিততে এবং জেতাতে জানেন।’’

এমন মত যেমন রয়েছে, তেমনই দিলীপের গুণগ্রাহীদের মধ্যেও ঘোষকে নিয়ে নানা সময়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অতীতে দিলীপ রাজ্য নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলছেন বলে যখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুখ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তখনই রাজ্য বিজেপির ওই নেতারা বলতেন, ‘‘দিলীপদার সতর্ক থাকা উচিত। এর পরে হয়তো ওঁকে লোকসভা নির্বাচনে টিকিটও দিতে চাইবেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’ এখন বিজেপির দু’টি রাজ্য দফতরেই দিলীপের জন্য আলাদা কোনও ঘর নেই। পুরনো দফতরের যে ঘরটিতে তিনি বসতেন, সেটি বন্ধ করে দেওয়ার পরে রাজ্য নেতাদের না জানিয়ে বিজয় সম্মেলন করেছিলেন মুরলীধর সেন লেনের দফতরের হলঘরে। এর পরে দিলীপকে বার্তা দিতে রাজ্য নেতৃত্ব ওই ঘরটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। সেই সময়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন দিলীপের অনুগামীরা। তবে দিলীপ এ সব নিয়ে সোজাসাপ্টা জবাবে বলেছিলেন, ‘‘আমি অত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না। আমি সঙ্ঘের প্রচারক ছিলাম, আছি, থাকব। সংগঠন রাজনীতিতে পাঠিয়েছে, এসেছি। বললে, পুরনো কাজে ফিরে যাব।’’

তবে দিলীপের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব টিকিট না দেওয়ার মতো অপ্রসন্ন নন বলেই খবর। সম্প্রতি কলকাতায় এসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন রাজ্য নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন তখন দিলীপের মতামতও শুনতে চান। বিজেপি সূত্রে জানা যায়, দিলীপের দেওয়া পরামর্শকে যে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট করেন নড্ডা, শাহেরা। যদিও দিলীপ-ঘনিষ্ঠদের দাবি অন্য। তাঁদের দাবি, দিলীপ নিজের আসন মেদিনীপুরে আবার জয় নিশ্চিত করাকেই এখন ‘পাখির চোখ’ করেছেন। দলের নির্দেশে অন্য আসনে প্রচারে গেলেও মূল লক্ষ্য থাকবে মেদিনীপুরই। সেই কারণেই তাঁকে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হল কি হল না, তা নিয়ে কিছু ভাবছেন না। বরং, বড় দায়িত্ব না দেওয়া হলে মেদিনীপুরে বেশি করে মন এবং সময় দেওয়া যাবে বলে কিছুটা খুশিই তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Dilip Ghosh Lok Sabha Vote Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy