মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
তিনি কি যাবেন? নাকি দূরত্ব রেখে দেবেন?
বুধবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নেতাদের কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকে ডেকেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গোটা তৃণমূল তাকিয়ে ছিল একটি বিষয়ের দিকেই— জেলার সাংগঠনিক বৈঠকে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকেন? দেখা গেল, মমতার বাড়ির বৈঠকে হাজির হয়েছেন অভিষেক। গত নভেম্বর থেকে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে মতের ‘বৈপরীত্য’ নিয়ে শাসকদলের অন্দরমহল আলোড়িত। দুই শিবিরের নেতাদের বিবৃতিযুদ্ধ তাতে আরও জল-বাতাস দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের সংগঠন নিয়ে বৈঠকে অভিষেক কী করেন, তা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত ছিল না। তবে দেখা গেল সাংগঠনিক বৈঠকে হাজির হয়েছেন অভিষেক। যা দেখে দলের ভিতরে স্বস্তির শ্বাস ফেলেছেন অনেকেই। ওই বৈঠকে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। যাঁর অভিষেক সম্পর্কে মন্তব্য দলের ভিতরে-বাইরে বিতর্ক তৈরি করেছিল। যাঁরা মনে করছেন, শাসকদলের সর্বোচ্চ স্তরে যে ‘শৈত্য’ চলছিল, তা আপাতত কেটে গেল। আবার সন্দিগ্ধুদের মতে, তা এখনই বলে দেওয়া যায় না। আগামী শুক্রবার মুর্শিদাবাদ জেলার নেতাদের নিয়ে এনই সাংগঠনিক বৈঠক করার কথা মমতার। সেই বৈঠকেও অভিষেক থাকেন কিনা, সে দিকে নজর রাখতে হবে।
গত অক্টোবর থেকেই অভিষেক দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে ‘দূরত্ব’ রচনা করেছিলেন। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠদের কাছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছিলেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে তিনি নিজেকে ডায়মন্ড হারবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চান। দল তাঁকে কোনও কর্মসূচি দিলে তিনি অবশ্যই সেখানে যাবেন, কিন্তু ওই একই সময়ে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে কোনও কর্মসূচি থাকলে ডায়মন্ড হারবারই অগ্রাধিকার পাবে।
ঘনিষ্ঠদের কাছে বলা অভিষেকের ওই বক্তব্যে তৃণমূলের অন্দরে আলোড়ন শুরু হয়। পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায় বিভিন্ন নেতার পরস্পরকে আক্রমণ করে বক্তব্যে। যার ফলে শাসক শিবিরের ভিতরে জল্পনা এবং বিভিন্ন ভিন্নমত নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছিল। কারণ, দলের সর্বোচ্চ স্তরে মতের যে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছিল, তা সাংগঠনিক নীতি নির্ধারণের বিষয়ে। মমতা দলের সর্বোচ্চ নেত্রী। অভিষেক দু’নম্বর। এই পরিস্থিতিতে মূলত বয়সনীতি নিয়ে দু’জনেই নিজস্ব অবস্থানে অনড় ছিলেন। যেমন, গত রবিবার ডায়মন্ড হারবারের কর্মসূচি থেকে অভিষেক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি তাঁর অবস্থানে অনড়। অভিষেকের বক্তব্য ছিল, মমতা সরকার চালাচ্ছেন। মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন। তিনিই নেত্রী। কিন্তু পাশাপাশিই তৃণমূলের সেনাপতি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বয়সনীতি নিয়ে তিনি তাঁর একই অবস্থানে রয়েছেন। অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আজ আমি যতটা কাজ করতে পারছি, ৫৬ বছর হলে সেই কাজ করতে পারব? ৭০ হলে কি পারব?’’ সেই সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ আরও এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটে তিনি নিজের কেন্দ্রেই বেশি মনোনিবেশ করতে চান। আবার অভিষেকের ওই বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গঙ্গাসাগরের সরকারি মঞ্চ থেকে প্রবীণ দুই আমলা (দু’জনেই প্রাক্তন মুখ্যসচিব) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে দেখিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘যোগ্যতা থাকলে ৬০ বছর হয়ে গেলেই আমরা তাঁদের বিদায় দিই না। আমরা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাই।’’ অনেকেই মনে করেছিলেন, সরকারি মঞ্চ থেকে দলকেই বার্তা দিয়েছিলেন মমতা।
এই প্রেক্ষাপটে বুধবার মমতার বাড়ির দলীয় বৈঠকে অভিষেকের থাকা না-থাকার দিকে তৃণমূলের নবীন-প্রবীণ সকলেই তাকিয়েছিলেন। কারণ, দলের সাংগঠনিক বিষয় দেখাশোনার ভার মমতা অভিষেকের হাতেই ন্যস্ত করেছিলেন। পদাধিকার বলেই অভিষেকের সাংগঠনিক বৈঠকে থাকার কথা। ফলে তিনি না গেলে তা দলের ভাবমূর্তির পক্ষে খুব ভাল হত না। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা বুধবার দুপুরেই ঘরোয়া আলোচনায় বলেছিলেন, ‘‘বিকেলে অভিষেক না গেলে বিষয়টা খারাপ দেখতে হবে।’’ তবে পাশাপাশিই তিনি বলেছিলেন, ‘‘বৈঠকে গেলেও এমন ভাবার কারণ নেই যে, অভিষেক তাঁর মৌলিক অবস্থান বদল করেছেন।’’
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারের বৈঠকে অভিষেক প্রথমে বলতে চাননি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলতে বলেন। ওই সূত্রের দাবি, মমতা অভিষেককে বলেন, ‘‘তুই যখন এসেছিস, তখন বল।’’ তার পরেই বলতে ওঠেন অভিষেক। লোকসভা ভোটের আগে একটি বিজেপি-বিরোধী পুস্তিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান মমতা। সেই পুস্তিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিষেককে।
গত ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দিনভর নবীন-প্রবীণ বিতর্ক চলেছিল। পরিস্থিতি এমন হয় যে সন্ধ্যা মমতা তাঁর বাড়িতে অভিষেককে ডেকে পাঠান। দু’জনের মধ্যে প্রায় দু’ঘন্টা বৈঠক হয়। কিন্তু তার পরে নতুন করে, নতুন মোড়কে সেই বিতর্ক শুরু হয়। যে বিতর্কে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান ব্যক্ত করেন অভিষেক ও মমতা। সেই আবহেই বুধবার অভিষেকের মমতার বাড়ির সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। উল্লেখযোগ্য ভাবে, বৈঠকে অভিষেক এবং বক্সী— উভয়েই ছিলেন। দু’জনেই বক্তৃতাও করেন। এখন দেখার, মমতার ছোঁয়ায় নবীন-প্রবীণে মিলমিশ হয় কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy