নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে এ ভাবেই চাষ-জমিতে তৈরি হয়েছে ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র
নন্দীগ্রামের চাষি হাজি শেখ আলমগির হোসেন২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের ‘কৃষক সম্মান’ পুরস্কার পেয়েছিলেন। মূলত ধান চাষ, জৈব সার প্রয়োগের জন্যই এসেছিল সম্মান।
তিন বছরে ছবিটা ঘুরে গিয়েছে। আলমগির এখন প্রধানত মাছ চাষি। ‘নন্দীগ্রাম ভ্যানামেই অ্যান্ড বাগদা অ্যাকোয়া কালচার সমিতি’র সভাপতিও তিনি।
এক সময় চাষের জমি বাঁচাতে এই নন্দীগ্রামে ঝরেছিল রক্ত। রাজ্য-রাজনীতিতে বদলের শুরুও অনেকটা এই মাটি থেকে। নন্দীগ্রামের শিল্প-সম্ভাবনা তখন যে সব প্রশ্নের মুখে পড়েছিল, তার মধ্যে ছিল পর্যাপ্ত জলের অভাবও। এখন অবশ্য সেই জলেই বদলে যাচ্ছে মাটির চরিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল ঘেঁষা এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে চাষজমিকে ভেড়িতে পরিণত করার প্রবণতা রয়েছে। তবে নন্দীগ্রামে গত তিন-চার বছরে এই ধারা দেখা যাচ্ছে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। গত কয়েক বছরে তার মধ্যে আড়াই হাজার হেক্টরে মাছের ভেড়ি হয়েছে বলে ‘নন্দীগ্রাম ভ্যানামেই অ্যান্ড বাগদা অ্যাকোয়া কালচার সমিতি’ জানাচ্ছে। আর নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লক ধরলে এলাকাটা প্রায় ছ’হাজার একর।
চাষ ছেড়ে মৎস্যজীবী হয়ে যাওয়া অনেকেই জানাচ্ছেন, তাঁদের জমির বেশির ভাগ ছিল একফসলি। এক বিঘায় চাষে বছরে বড় জোর ৩,৫০০ টাকা লাভ হত। সেখানে ওই জমি মাছ চাষের জন্য লিজ় দিলে প্রতি বছর বিঘা প্রতি লাভ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। অঙ্কটা প্রায় ৮ গুণ বেশি। আলমগিরও বলছিলেন, ‘‘মাছ চাষে অনেক বেশি লাভ। আর এখানে বড় সমস্যা হল নিকাশি। আমপানের এত দিন পরেও আমার ২০ বিঘা জমি জলের তলায়। লোকের জমিতে বীজতলা ফেলতে যেতে হচ্ছে। এই সব কারণে নন্দীগ্রামবাসীর অনেকেই মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।’’
আরও পড়ুন: সভাপতিকে ‘না’ বলে দূরেই বিরোধী নেতা
‘নন্দীগ্রাম ভ্যানামেই অ্যান্ড বাগদা অ্যাকোয়া কালচার সমিতি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বছরে গড়ে প্রায় ৬০০ একর জমি মাছ চাষে বরাদ্দ হচ্ছে। বাড়ছে মাছ চাষির সংখ্যাও। বর্তমানে নন্দীগ্রামে মাছ চাষ করেন প্রায় সাত হাজার মানুষ। তিন বছর আগেও সংখ্যাটা চার হাজার ছিল।
নন্দীগ্রামবাসীর মধ্যে যে কৃষি-বিমুখ হয়ে মাছ চাষে মন দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা অস্বীকার করছেন না নন্দীগ্রামের কৃষি আধিকারিক দীপাঞ্জনা রায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে মাছ চাষে অল্প সময়ে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই বহু কৃষক মাছ চাষে ঝুঁকেছেন।’’
স্থানীয় কৃষকদের অবশ্য অভিযোগ, ধীরে ধীরে চাষে উৎসাহ কমার পিছনে কৃষি দফতরেরও ভূমিকা রয়েছে। কৃষি দফতর নতুন চাষে গুরুত্ব দিচ্ছে না। দফতর থেকে দেওয়া বীজের মান খারাপ। ফলে চাষ করতে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। লাভের অঙ্ক কমে। বদলে নিজে মাছ চাষ না করে যদি মাছ চাষের জন্য জমি লিজেও দেওয়া হয়, তা হলেও লাভ থাকে অনেকটাই।
তবে দীপাঞ্জনার বক্তব্য, ‘‘বীজের গুণগত মান খারাপ বলে কোনও অভিযোগ কেউ জানাননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy