Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

শীতঘুম ঝেড়ে হাতে বসন্ত পেতে চান নিত্য

মিছিলটা যাচ্ছিল হাঁসখালি বাজারের ভিতর দিয়ে। আচমকা মুদির দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন এক যুবক। কিছু বোঝার আগেই মিছিলের সামনের দুধ-সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ঝকঝকে চেহারার হাত দু’টো জড়িয়ে ধরে একগাল হেসে বললেন, ‘‘ভাল আছো নিত্যদা? কত দিন পরে দেখা!” ‘নিত্যদা’ হলেন গিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল। এলাকার সকলের ‘নিত্যদা’। ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজে ছাত্র রাজনীতি করেছেন দাপটের সঙ্গে। টানা তিন বার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক।

প্রচারে কংগ্রেস প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র

প্রচারে কংগ্রেস প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪২
Share: Save:

মিছিলটা যাচ্ছিল হাঁসখালি বাজারের ভিতর দিয়ে।

আচমকা মুদির দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন এক যুবক। কিছু বোঝার আগেই মিছিলের সামনের দুধ-সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ঝকঝকে চেহারার হাত দু’টো জড়িয়ে ধরে একগাল হেসে বললেন, ‘‘ভাল আছো নিত্যদা? কত দিন পরে দেখা!”

‘নিত্যদা’ হলেন গিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ উপ-নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল। এলাকার সকলের ‘নিত্যদা’। ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজে ছাত্র রাজনীতি করেছেন দাপটের সঙ্গে। টানা তিন বার ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক। হাঁসখালি বা কৃষ্ণগঞ্জে এমন কোনও এলাকা নেই, যেখানে তাঁর কোনও না কোনও অনুগামী খুঁজে পাওয়া যাবে না অন্তত এমনটাই দাবি নিত্যদার।

দাদার ঘনিষ্ঠদের দাবি, এই কারণেই কংগ্রেসের দুর্বল সংগঠনের বাইরেও নিত্যদার এমন নিজস্ব ‘নেটওয়ার্ক’ আছে যে শুধু সেটাই তাঁকে জিতিয়ে দিতে পারে। হাঁসখালি বাজারের এই যুবক তাঁদেরই এক জন। কলেজে পড়ার সময়ে নিত্যগোপাল মণ্ডলই ছিলেন তাঁর নেতা। এত দিন পরে নিত্যদাকে দেখে তাই কিছুটা হলেও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন তিনি। বারবার হাত ঝাঁকিয়ে বলে চলেছেন, “এখন আমি যে দলই করি না কেন, নিত্যদা যখন দাঁড়িয়েছে, ওকেই ভোট দেব!” এক গাল হেসে সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে এগিয়ে যান সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি।

এগিয়ে ঢুকে পড়েন সব্জি বাজারে। এক সব্জি বিক্রেতার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে নেন নিত্যগোপাল। তার পর চলে যান মাছের বাজারে। প্রত্যেকের সামনে গিয়ে হাত জোড় করে ভোট চাইতে থাকেন। এক বিক্রেতা আর এক জনকে বলেই ফেলেন, “আর কেউ আসেনি, নিত্য কিন্তু এসেছে!” বাজারটা থেকে বেরিয়ে নিত্যগোপাল গিয়ে ওঠেন হুডখোলা গাড়িতে। তাঁকে নিয়ে গোটা ছয়েক গাড়ির রোড-শো এগোতে থাকে তারিণীপুরের দিকে।

রাস্তার দু’দিকে বিঘের পর বিঘে পিঁয়াজের খেত। সেই পিঁয়াজ মাঠ থেকে বাজারে নিয়ে যেতে প্রতি বছর প্রচুর লরি এই গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। তাতে রাস্তার ভেঙে এবড়োখেবড়ো হয়ে গিয়েছে। একটানা অনেকটা যাওয়ার পরে আবার সেই পথ ধরেই ফেরা। গ্রামের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের দিকে হাত নাড়তে-নাড়তে এগিয়ে যান নিত্যগোপাল, পরে ফিরে আসেন হাঁসখালি বাজারে। রাস্তার হোটেলে কর্মীদের নিয়ে ডিম ভাত খাওয়া। পরে দুটো কমলালেবু। যদিও শীত যাই-যাই, বসন্ত এসে গেছে!

দুপুরের খাওয়ার ওই ফাঁকটুকুই জিরোনো। তার পরেই রোড-শো এগিয়ে চলে ঘাঘরারচরের দিকে। সেখান থেকে চিত্রশালী হয়ে আরামডাঙা, প্রভাতনগর, হরিহরনগর হয়ে নিত্যগোপাল আর তাঁর জনা কয়েক কর্মী এগিয়ে চলেন। মাইক একটানা বলতে থাকে ‘ছাত্রনেতা নিত্যগোপাল মণ্ডলকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।” বিকেল ৪টে নাগাদ আবার চিত্রশালী বাজারে পথসভা। সেখানে হাজির থাকতে হবে প্রার্থীকে। তার পরে ময়ূরহাটে পথসভা সেরে ঘরে ফিরতে রাত।

গত লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেস মাত্র হাজার ছয়েক ভোট পেয়েছিল। তা সত্ত্বেও সকাল থেকে রাত এই দৌড়ে বেড়ানো কেন? কতটাই বা ভাল ফল আশা করতে পারেন তাঁরা? আচমকা প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত, তার পরেই দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে ছাত্রনেতা বলেন, “এখানে সংগঠনটা তো একেবারে শেষই হয়ে গিয়েছিল। আমরা চেষ্টা করছি সেটাকে আবার চাঙ্গা করতে। তার জন্যই অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে এই পরিশ্রম। কাউকে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। ফল যা হওয়ার হবে।”

ফের গাড়িতে উঠছেন। তার মধ্যেই থমকে মুখ ঘুরিয়ে নিত্যগোপালের হুঙ্কার “যারা বলছে কংগ্রেস সাইনবোর্ড হয়ে গিয়েছে, তারা যোগ্য জবাব পাবে। দেখে নেবেন।”

কৃষ্ণগঞ্জে তবে কংগ্রেসের শীতঘুম শেষ? বসন্ত এসে গেছে?

জবাব নেই। ঝরাপাতা উড়িয়ে চলে গেল গাড়ি।

অন্য বিষয়গুলি:

nittagopal mandal haskhali rally
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy