বেহাল রাস্তা। নওদার কেদারচাঁদপুর গ্রামে ঢোকার রাস্তা (বাঁ দিকে)। দুধসর হয়ে সর্বাঙ্গপুর যাওয়ার রাস্তা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ বছরে ভোট হয়েছে তিন বার। আরও একটি লোকসভা ভোটও শিয়রে। কিন্তু প্রতি ভোটেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সারানো হয়নি রাস্তা।
বহরমপুর লোকসভা আসনের নওদা বিধানসভা কেন্দ্রটির ছবি এমনই। এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, বেলডাঙা থেকে আমতলা রাজ্য সড়কের ডুবতলা থেকে সোনাটিকুরি হয়ে ১১ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে এই রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও আজও বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। গত লোকসভা ভোটে এই রাস্তাটি সারিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রার্থীরা। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, সেই লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যে বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। সে দু’বারও বিভিন্ন দল ও তাঁদের প্রার্থীরা এই রাস্তাটি সারিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। পাঁচ বছরে রাস্তার হাল আরও খারাপ হয়েছে। এই এলাকায় ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার।
একই অবস্থা আমতলা-বেলডাঙা রাজ্য সড়কের ত্রিমোহিনী থেকে দুধসর হয়ে সর্বাঙ্গপুর ৫ কিলোমিটার রাস্তারও। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন ভোটের মুখে কেবল প্রতিশ্রুতিই শোনা গিয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। এই এলাকায় এখন ভাল পিঁয়াজ চাষ হয়। চাষিদের বক্তব্য, এক দিকে যেমন হাসপাতাল থেকে স্কুল সব জায়গাতেই যাতায়াতের সমস্যা তেমন অন্য দিকে পেঁয়াজের গাড়িও নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই ব্যবসা মার খাচ্ছে। সিপিএমের নওদা জোনাল কমিটির সদস্য শমিক মণ্ডল বলেন, “আগে পাট ছিল বর্তমানে নওদার প্রধান অর্থকরী ফসল পেঁয়াজ। এই ফসল অসম, কলকাতা, শিলিগুড়ি বাজার যায়। কিন্তু বড় গাড়ি মাঠ পর্যন্ত না গেলে বস্তা ভর্তি পেঁয়াজ বাইরে পাঠানো যায় না।” তিনি জানান, রাস্তার দু’দিকে দশ হাজার মানুষ বাস করেন।
বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের বেলডাঙা বিধানসভার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ভাবতা থেকে রতনপুর ঘাট ১০ কিমি রাস্তাও বেহাল। এই রাস্তার পাশেই ভাদুর গ্রাম থেকে মানিকনগর স্কুল চার কিলোমিটার রাস্তায় চলা দায়। ভাবতা থেকে আধ কিলোমিটার রাস্তা সাংসদ কোটার টাকায় হলেও তা-ও বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভাবতার একটি বড় ক্লাবের কর্তা মহম্মদ কাউসার আলি বলেন, “মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ার ভয়ে প্রার্থীরা কেউ এলাকায় ঢুকছে না। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে।” এই রাস্তায় দু’টি হাইস্কুল, অনেকগুলি প্রাথমিক স্কুল, ভাবতা রেল স্টেশন, পঞ্চায়েত ভবন থাকা সত্ত্বেও রাস্তাটি উপেক্ষিত।
ওই লোকসভা কেন্দ্রেরই রেজিনগর বিধানসভার মানিক্যহার মোড় থেকে বাবলা নদী পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। আবার বাছরা মণ্ডপ তলা থেকে কদমতলা ঘাট ২ কিলোমিটার রাস্তাও বেহাল। ভাগীরথীর তীরে নারকেল বাড়ি ঘাট থেকে মহম্মদপুর ঘাট ১ কিলোমিটার বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে।
তৃণমূলের প্রার্থী ইন্দ্রনীল সেন এ বারই প্রথম লড়ছেন এই আসনে। তাঁর বক্তব্য, “ভোটে জিতে যাওয়ার পরে পাঁচ বছরে এক বারও যে সাংসদ এলাকায় আসেননি তা আমি বুঝতে পেরেছি। তবে আমরা জিতলে উন্নয়ন কাকে বলে তা মানুষ বুঝতে পারবেন।” সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় সোমপাড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক তাজারুল হক বলেন, “এই রাস্তাগুলির এলাকায় গুরুত্ব প্রচুর। দু’দিকে স্কুল, শ্মশান ও গোরস্থান থাকা সত্ত্বেও রাস্তাগুলি বেহাল।” রেজিনগরের ঝিঁকরা মোড়ে দাঁড়িয়ে বিজেপি প্রার্থী দেবেশ অধিকারীও বলেন, “গ্রামে ঢোকার দেড় কিলোমিটার রাস্তা সত্যিই বেহাল। জিততে পারলে গ্রামের উন্নয়ন আমরাই করে দেখাবো।”
গোকর্ণ থেকে বহরমপুর ফেরার পথে বামফ্রন্টের আরএসপি প্রার্থী প্রমথেশ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, রাস্তা তৈরির উপকরণে ফাঁক থাকছে। তাঁর কথায়, “ঠিকাদার ও বাস্তুকারদের নির্মাণকার্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ভারী লরি রাস্তাতে দাপাদাপি করছে। ফলে রাস্তা টেকসই হচ্ছে না।”
তিন বারের সাংসদ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, “আমার কেন্দ্রে আমি পাঁচ বছরে একবার যাই, সেটা আমার বিরোধীরাও বলবে না। তবে সব রাস্তা তো করতে পারিনি। বাড়িয়ে বলা আমার অভ্যাস নয়। মিথ্যে কথা আমি বলতে পারব না। আমি কী করেছি মুর্শিদাবাদের মানুষ জানে। ভোটের আগে তা মুখে বলার প্রয়োজন হবে না। এলাকার মানুষই আমার হয়ে কথা বলবে।”
বৈশাখের দাবদাহে যখন পাশের পুকুর ও গভীর নলকুপ শুকিয়ে কাঠ তখন বেলডাঙার রাজ্য সড়কের উপর হরেক নগর মোড় থেকে বেলডাঙা পুরসভা এলাকায় প্রবেশের একমাত্র পথ ড্রেনের জলে সারা বছর ডুবে আছে। কবে ওই রাস্তায় শেষ পিচ পড়েছে কারও মনে নেই। রাস্তার দাবিতে পথ অবরোধ সহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি চাপাটি সবই করেও কোনও ফল পায়নি মানুষ। তাই যুব সমাজের অনেকেই নোটা-র বোতাম টেপার দিকেই পা বাড়িয়ে আছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy