Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

পাট্টা মেলেনি, বস্তি সেই তিমিরে

পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভা মিলে দেড়-দু’ বছর অন্তর ভোট আসে। যুগলবন্দির মতো প্রতিটি ভোটের সঙ্গে আসে পাট্টার প্রতিশ্রুতিও। ভোট ফুরলে প্রতিশ্রুতিও উধাও। পাট্টা মেলে না। এই আক্ষেপ বৃদ্ধা পুষ্পরানি দাসের একা নয়। ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া বহরমপুর শহরের উত্তরপ্রান্তের সৈয়দাবাদ এলাকার এন এন কে রোড় কলোনি থেকে দক্ষিণ প্রান্তের গাঁধী কলোনি পর্যন্ত সমস্ত বস্তিবাসীর।

ঘিঞ্জি অম্বেডকর কলোনিতে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ঘিঞ্জি অম্বেডকর কলোনিতে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫০
Share: Save:

পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভা মিলে দেড়-দু’ বছর অন্তর ভোট আসে। যুগলবন্দির মতো প্রতিটি ভোটের সঙ্গে আসে পাট্টার প্রতিশ্রুতিও। ভোট ফুরলে প্রতিশ্রুতিও উধাও। পাট্টা মেলে না। এই আক্ষেপ বৃদ্ধা পুষ্পরানি দাসের একা নয়। ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া বহরমপুর শহরের উত্তরপ্রান্তের সৈয়দাবাদ এলাকার এন এন কে রোড় কলোনি থেকে দক্ষিণ প্রান্তের গাঁধী কলোনি পর্যন্ত সমস্ত বস্তিবাসীর।

৩৪ বছরের ‘অপরিবর্তন’-এর বাম সরকার, সাড়ে ৩ বছরের ‘পরিবর্তন’-এর তৃণমূল সরকার বা বরাবর দখলে থাকা কংগ্রেস পরিচালিত বহরমপুর পুরসভা— কারও হাত ধরেই বহরমপুরের বস্তি জীবনের কোনও পরিবর্তন হল না পাঁচ দশকেও। অনুন্নয়নের সেই কালাপাহাড় কেন সরানো যায়নি সে সর্ম্পকে যুযুধান সব রাজনৈতিক দলগুলির পরস্পরের ঘাড়ে দায় চাপানোর কিস্যা শোনার আগে বহরমপুর শহরের পশ্চিমপ্রান্তের ভাগীরথীর পাড় থেকে পূর্ব প্রান্তের ৩৪ নন্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এলাকা মিলে মোট ৫০টি (পরিসংখা পুরসভার) বস্তির বাসিন্দাদের বসতি গড়ে তোলার কাহিনি শোনা যাক।

পেশায় মণ্ডপ তৈরির শিল্পী দুলাল হালদার সপরিবারের ৪৫ বছর ধরে থাকেন শহরের দক্ষিণ প্রান্তে মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার ভবনের পিছনে ভাগীরথী পাড়ের গাঁধী কলোনিতে। শ্রীদাম বলেন, “আমাদের আদি বাড়ি পাবনায়। ৫০ বছর আগে বাবা বহরমপুর শহর লাগোয়া কৃষ্ণমাটি গ্রামে ওঠেন। সেখানে কয়েক বছর রাস্তার ধারে পড়ে থাকার পর বাবার সঙ্গে আমরা উঠে আসি গাঁধী কলোনিতে।” শহরের উত্তরপ্রান্তের সৈয়দাবাদ এলাকায় কপিলের মাঠ লাগোয়া বস্তির নাম নাম বি এন সেন কলোনি। সেখানে রয়েছেন ৭৫ বছরের বৃদ্ধা পুষ্পরানি দাস। তিনি জানান, দৌলতাবাদের শ্বশুরের ভিটে ছেড়ে ৪২ বছর আগে এই কলোনিতে তাঁকে সপরিবার আশ্রয় নিতে হয়। পেশায় পুরোহিত দিলখুশ ঝায়ের দাদু ছিলেন বহরমপুরের মুক ও বধির স্কুলের কর্মী। দিলখুশ বলেন, “দাদু চাকরি থেকে অবসর নেওয়ায় বছর দশেক আগে সরকারি আবাসন থেকে আমাদের সবাইকে সুভাষ কলোনিতে মাথা গুঁজতে হয়েছে।” বস্তিবাসীর আক্ষেপ, পুরসভা থেকে কংক্রিয়ের ঢালাই রাস্তা করে দিয়েছে, বিদ্যুতের আলো ও পানীয় জলের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। কিন্তু জায়গার অভাবে শৌচালয় নেই। খুব কষ্ট। নিজেদের নামে জমির পাট্টা না থাকায় পরিবারের লোক সংখ্যা বাড়লেও দোতলা করা যায় না। বাধ্য হয়ে ঘিঞ্জি ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস। প্রতিটি ভোটের সময় পাট্টা দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তরজার লড়াই চলে। ভোট মিটে গেলে কেউই আর পাট্টা নিয়ে টু শব্দটি করে না।

বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “বস্তির জমির মালিক রাজ্য সরকারের বন, মৎস্য, ভূমি ও পূর্ত দফতর। সরকারের কাছে ওই জমি পুরসভা চেয়েছিল। জমি পেলে সেখানে বস্তির মানুষদের জন্য ‘রাজীব গাঁধী আবাসন প্রকল্প’ থেকে প্রায় বিনা খরচে বহুতল আবাসন, খেলার মাঠ, স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টার গড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই মতো রাজ্যে প্রকল্পও জমা দেওয়া হয়। বছর দু’য়েক কেটে গেলেও সরকারের কোনও হেলদোল নেই।’’ নীলরতনের অভিযোগ, “এমনকী বস্তির বাসিন্দাদের নামে রাজ্য সরকার জমির পাট্টা দিলে পুরসভা থেকে আমার বাড়ি প্রকল্পে ঘর করে দেওয়া হবে বলেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও কী বাম, কী তৃণমূল— উভয় সরকার নীরব নিষ্ক্রিয়।”

সিপিএমের বহরমপুর (শহর) জেনালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তরুণ মুখোপাধ্যায় আবার বলেন, “আগে শহরের খাস জমি দীর্ঘ মেয়াদি লিজ দেওয়ার আইনি সুযোগ ছিল না। বামফ্রন্ট আমলের শেষ পর্যায়ে আইন করে শহরের খাস জমি দীর্ঘ মেয়াদি লিজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তারপর বস্তির বাসিন্দাদের নামে তাঁদের দখলে থাকা বাস্তুজমি বছরে এক টাকা খাজনায় ২ কাঠা করে ৯৯ বছরের লিজ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথি-সহ আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে ভূমি দফতরে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সেই সব ফাইল হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।”

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের টাউন সভাপতি, তথা স্থানীয় পুরসভার কাউন্সিলর কানাই রায়। তিনি বলেন, “কে কোন জমিতে কত দিন ধরে বসবাস করছে— এই জাতীয় খুঁটিনাটি বিষয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই প্রক্রিয়া শেষ হলেই পাট্টা দেওয়া হবে।”

প্রতিশ্রুতি পেতে অভ্যস্থ বস্তিবাসীর জিজ্ঞাসা, “ভোটের আগে তো?”

অন্য বিষয়গুলি:

amar shohor baharampur anal abedin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy